কৃষিঋণ মওকুফ ও বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দাবিতে
কৃষক-মৎসজীবী সমাবেশ ও
জেলা প্রশাসক মাধ্যমে স্মারকলিপি পেশ
২০(বিশ) হাজার টাকার কৃষিঋণ মওকুফ, এর অধিক টাকার কৃষিঋণের সুদ মওকুফ, বিনামূল্যে সার, বীজ, কীটনাশক প্রদান এবং বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধান সহ কাউয়াদিঘী হাওর রক্ষা আন্দোলনের ৯ দফা বাস্তবায়নের দাবীতে মৌলভীবাজারে কৃষক সমাবেশ ও অর্থ উপদেষ্টা, কৃষি উপদেষ্টা এবং পরিবেশ উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হয়েছে।
কাউয়াদিঘী হাওর রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক আ স ম ছালেহ সোহেল এর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব খছরু চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত কৃষক-মৎসজীবী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, জেলা কর আইনজীবী সমিতির সভাপতি বদরুল হোসেন, প্রবীণ সাংবাদিক সরওয়ার আহমদ, সিলেট জেলা বারের বিশিষ্ট আইনজীবী এডভোকেট হুমায়ুন রশিদ সুয়েব, বাপা নেতা শিব প্রসন্ন ভট্টাচার্য্য, কৃষক নেতা সামছুদ্দিন মাস্টার, নিরঞ্জণ কপালী, আলমগীর হোসেন, শিক্ষক মৌলানা মকবুল হোসেন, গোলাম হোসেন, সজিদ মিয়া, নুরুল ইসলাম, মাও লোকমান খান নবীন, ছাত্রনেতা বিশ্বজিৎ নন্দী, আবু তালেব চৌধুরী প্রমুখ।
এ সময়ে মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সমাবেশে সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা বলেন, সাম্প্রতিককালের ভয়াবহ বন্যায় মৌলভীবাজার জেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সীমাহীন। আমন ফসল হারিয়ে সর্বশ্রান্ত কৃষক। কারো কারো ঘরবাড়িও ধবংস হয়েছে। মৌলভীবাজার জেলায় ফি-বছর বন্যার কারণ শুধু প্রাকৃতিক নয় এর প্রধান কারণ হলো মানবসৃষ্ট। অপরিনামদর্শী লুটেরা উন্নয়ন, অংশীজনের মতামত না নিয়ে, ক্ষেত্রবিশেষে প্রচলিত বিধিবিধানের তোয়াক্কা না করে হাওর-বিল-নদী ইজারা ও ভরাট -দখল, দূষণে আমাদের প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস এবং মনু নদ শাসন ও খননের বরাদ্দ লাগাতার লুটপাট, এসবই দায়ী।
তারা আরও বলেন, ইতিপূর্বে ভূমি খেকো শিল্পপতিগণ হাওরের কয়েক হাজার একর কৃষিজ জমি কিনে নিয়েছেন। শুনা যাচ্ছে হাওর ভরাট করে, প্রাণ-প্রকৃতি বিনষ্ঠ করে নানাধরণের শিল্পকারখানা হবে। কৃষক-মৎসজীবীদের মধ্যে এসব বিষয়েও আতংক রয়েছে। যে কারণে আমরা কাউয়াদিঘী হাওর রক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে দীর্ঘদিন থেকে জনগণের অধিকার রক্ষার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রান্তিক, বর্গাচাষী ও মৎসজীবী সম্প্রদায়ের কৃষকের অবদান শুধুই উল্যেখযোগ্য নয় মূল শক্তির একটি। যে কারণে সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসনের দাবিগুলো সরকারের মেনে নেওয়া উচিত।
সমাবেশে হাওর রক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে যে দাবিগুলো তোলা হয় তা নিম্নরূপ –
১. (ক) আশু জরুরি দাবি – চলতি অর্থ-বছরেই ২০(বিশ) হাজার টাকার কৃষিঋণ মওকুফ করে দিতে হবে এবং ২০(বিশ) হাজারের অধিক পরিমাণ কৃষিঋণের সুদ সম্পূর্ণ মাফ করে দিতে হবে।
(খ) ব্যুরো মৌসুমের আগে বিনামূল্যে সার বীজ কীটনাশক প্রদান করতে হবে।
(গ) মৌলভীবাজার জেলার বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য সরকারের আšত-দাপ্তরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে বা¯তবায়নযোগ্য দাবি –
২. কাউয়াদিঘী হাওর সহ মৌলভীবাজার জেলার সকল হাওর, হাওরের প্রাকৃতিক খাল-ছড়া-নদী এবং মনু নদ, কুশিয়ারা ও ধলাই নদী খনন করতে হবে। বিগত অর্থ বছরে স্বৈরাচারী সরকারের আমলে মনু নদ খননসহ নদী শাসনের বরাদ্দকৃত টাকার হরিলুটকারীদের বিচার ও শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
৩. হাওরে মিঠাপানির মাছের অভয়াশ্রম তৈরি করতে হবে। কাউয়াদিঘী হাওরের শালকাটুয়া ও ফাটাসিংরা বিলের লীজ বাতিল করে মাছের অভয়াশ্রম ঘোষণা করতে হবে। মাছের প্রজাতি টিকিয়ে রাখার সার্থে সরকারি লীজকৃত বিল এবং ব্যক্তিমালিকানার বিলে শুকিয়ে মাছ-ধরার পদ্ধতি বাতিল করতে হবে। ইজারা প্রথা বাতিল করে মাছ আহরণের পদ্ধতি হিসেবে প্রকৃত মৎসজীবীদের মধ্যে লাইসেন্স প্রথা চালু করার বিষয় বিবেচনা করতে হবে।
৪. হাওরের জীববৈচিত্র্য ও প্রাণ-প্রকৃতির ক্ষতি হয় – এমন জায়গায় সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করা যাবে না। হাওরে শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা যাবে না। হাওরের বিল লীজ, কৃষির উন্নয়ন, মনুসেচ প্রকল্পের পানি বিতরণ তথা হাওর বিষয়ক যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের জেলা পর্যায়ের কমিটিতে অংশজনের প্রতিনিধি হিসেবে হাওর রক্ষা আন্দোলন কমিটির সদস্য রাখতে হবে।
৫. হাওরের বেদখল হওয়া সরকারি বিল-নদী-খাল-ছড়া ও জমি পুনরুদ্ধার করতে হবে। মনুসেচ প্রকল্পের পুনঃসংস্কার সহ পুরো প্রকল্পকে পরিবেশ বান্ধব করতে হবে।
৬. হাওরের লাস নদী, কাঙলা নদী, মাছুখালি নদী, বুড়িজুরী নদী ও ধলিধরা নদীর ইজারা দেওয়া বন্ধ ও ইজারা বাতিল করতে হবে। লাস নদীর গোয়ালী খাড়ায় এবং কালিবাড়ির খালে কুশিয়ারার দিকে সুইচগেইট নির্মান করতে হবে।
৭. হাওরের সাথে সংশিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠান সমূহের সমন্বয়ে ‘হাওর টাস্কফোর্স’ গঠন করে হাওর বাঁচানোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
৮. মনুসেচ প্রকল্পের কুশিয়ারা নদীর বেরি বাঁধের উপযুক্ত স্থান সমূহে (নদী থেকে হাওরে প্রবেশ করা প্রাকৃতিক নদী-খালের মুখে) কমপক্ষে ৭ টি ‘ফিসপাস’ গেইট নির্মাণ করে কাউয়াদিঘী হাওরে নদীর মাছ অবাধে প্রবেশ করার সুযোগ করে দিতে হবে।
৯. হাওরের মাঝদিয়ে বহে যাওয়া রাজনগর-বালাগঞ্জ সড়কের ভুরভুরি ছড়ায় নির্মিত কালভার্টে অপসারণ করে নতুন ব্রিজ নির্মাণ করতে হবে এবং উক্ত কালভার্ট নির্মাণে দুর্নীতির জন্য টিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট ইন্জিনিয়ারকে শা¯িত দিতে হবে।
১০. হাওরের পানি প্রবাহ, মাছের অবাধ বিচরণে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে এমন অপরিকল্পিত প্রকল্প অনুমোদন/ রা¯তা নির্মাণ করা যাবে না। উত্তরভাগ ইউনিয়নের কৃষিকাজের সুবিধার জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কালামুয়া, লঙ্গু, মারুয়া ও খালিবাড়ির খাল খননের ব্যবস্থা করতে হবে।