The Friday Times.com।। একজন পাকিস্তানী যিনি স্বাধীনতা আর অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছিলেন এবং যাকে তার ওই রাজনৈতিক উদ্যোগ ও কাজের জন্য হয়রান করিয়া নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়।
“এমন এক সময় আসবে যখন এই রাষ্ট্রই নিজেকে ধ্বংস করবে… যদি পাকিস্তান তার রাষ্ট্র কাঠামো থেকে অমুসলিম জনসংখ্যাকে বাদ দিয়ে একটি মুসলিম রাষ্ট্র গঠন করে, ইসলাম পাকিস্তানেই ধ্বংস হবে।” ১৯৪৮ সালের ৬ই মার্চ শাসনতন্ত্র প্রনয়ন পরিষদে (কন্সটিটিউয়েন্ট এসেম্লি) প্রয়াত হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এ বাণী দিয়েছিলেন।
ভারত উপমহাদেশীয় রাজনীতিতে তথা আরো নিপুণ করে বলতে গেলে আমাদের বাঙ্গালী রাজনীতিতে খুবই নগন্য সংখ্যক, অত্যন্ত হাতে গোনা কিছু রাজনীতিক গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনের আন্দোলনে অতিশয় আকুলতা নিয়ে দীপ্তিমান হয়ে উঠেছিলেন। এমনকি, ওই সময় যারা সত্যিকারের জনপ্রিয় নেতা হিসেবে গড়ে উঠেছিলেন তাদের মধ্যেই একজন ছিলেন এই হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।
শহীদ সোহরাওয়ার্দীর জন্ম ১৮৯২ সালে পশ্চিমবঙ্গের এমন এক পরিবারে যারা উপমহাদেশ খ্যাত পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানীর খুবই ঘনিষ্ট এক অনুসারীর বংশধর ছিলেন। পাকিস্তানের স্বাধীনতা আন্দোলনে তিনি ছিলেন মধ্যমণি। তার আন্দোলন ছিল স্বাধীনতার পর নতুন দেশে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায় ও প্রতিষ্ঠা।
তার নানা উবায়েদুল্লাহ আল-ওবায়দি ছিলেন স্যার সৈয়দ আহমদ খানের খুবই কাছের মানুষ ও অনুগত সমর্থক এবং “মোহাম্মেদান এঙ্গলো-অরিয়েন্টাল কলেজ” এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। আরবীতে এম এ সনদ লাভের পর শহীদ সোহরাওয়ার্দী তার মায়ের আশা পূরণের উদ্দেশ্যে অক্সফোর্ড চলে আসেন এবং ১৯১৮সালে লন্ডনের “গ্রেইজ ইন” বারে যোগদান করেন। তার মা, ঘোমটা দেয়া মহিলা ছিলেন বটে, তা হলেও তিনি ছিলেন ওই অঞ্চলের প্রথম “সিনিয়র ক্যামব্রিজ” পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মহিলা।
বিলেত থেকে ভারতে প্রত্যাবর্তনের পর সোহরাওয়ার্দী রাজনীতিতে যোগ দেন এবং সক্রিয়ভাবে খেলাফৎ আন্দোলনে শরিক হন। ওই সময় ১৯২১ সালে তিনি “বাংলা আইন পরিষদ” (বেঙ্গল লেজিসলেটিভ এসেমব্লী)-এ সদস্য নির্বাচিত হন। এ সময়, আইন পরিষদে “হুইপিং বিল” এর প্রতি তার কঠিণ ও আবেগময় বিরোধিতা তাকে সে সময়ের কংগ্রেস নেতৃত্বের দৃষ্টিতে নিয়ে আসে। ওই সময়ই তিনি ও তার পরামর্শদাতা সি আর দাস “বেঙ্গল প্যাক্ট” লিখেন; যার লক্ষ্য ছিল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করা। ১৯২৬ সনের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও শ্রমিক ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা এবং ১৯৩৩ সালের গোল টেবিল বৈঠক, সাধারণ মানুষের কাছে তার মেধা ও মননকে সুউচ্চে তুলে ধরে। সোহরাওয়ার্দী এ সময় সাধারণ মানুষের কাছাকাছি পৌঁছার লক্ষ্যে বাংলা শিখেন। যা ছিল, বিলেতে শিক্ষিত অভিজাত সুশীল এক মুসলিমলীগারের এক ব্যতিক্রমি পদক্ষেপ।
বাংলা প্রাদেশিক মুসলীম লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর তিনি দলকে ১৯৩৬ সালের নির্বাচনে এক সন্মানীত স্থানে উন্নীত করেন। ওই সময়ই শের ই বাংলা এ কে ফজলুল হক-এর “কৃষক প্রজা পার্টি” (কেপিপি)র সাথে সন্ধিবদ্ধ হয়। ১৯৪৩ সালে বঙ্গের দূর্ভিক্ষের সময় তার নেতৃত্ব, বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে তাকে তুলে ধরে প্রবাদপ্রতিম পুরুষ হিসেবে। মানুষ তাকে নেতা হিসেবে গ্রহন করে নেয়। ফলে ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে তিনি বাংলার নির্বাচিত প্রধান মন্ত্রী হিসেবে আসীন হন। “যুক্তবাংলা” কর্মসূচী ব্যর্থ হলে সারা বঙ্গে সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতি অটুট রাখার জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মহাত্মা গান্ধীর সাথে হাত মেলান। গান্ধী একদা জিন্নাহ’কে বলেছিলেন- “তুমি রাষ্ট্র নায়ক, লিয়াকত তোমাদের রাজনীতিবিদ আর সোহরাওয়ার্দী তোমাদের “নেতা”।
আজকের এই দিনে আসন্ন ৬ই মার্চের আসার পথের দিকে তাকিয়ে মহান নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সেই অমোঘ বাণী শ্রদ্ধাবনত হয়ে স্মরণ করি যখন দেখি পাকিস্তান ঠিক নিজেই নিজেকে ধ্বংসের সকল পথে হাটছে। মাথা নতকরে স্মরণ করি মহাত্মা এই পুরুষকে যার নেতৃত্ব আজও উভয় বাংলার সৌভ্রাতৃত্বের অঙ্কুরোদ্গমের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় ছিল। (প্রথম সূত্র: শ্রদ্ধেয় জনাব মোয়াজ্জেম আলীর ফেইচবুক এবং The Friday Times.com থেকে অনুদিত ও সংক্ষেপিত)