হারুনূর রশীদ।।
গেল ১লা ফেব্রুয়ারীর খবর। প্রকাশ করেছে ‘অনলাইন ইন্ডিপেন্ডেন্ট’। বিষয়বস্তু খুবই মানবিক আর সমর্থনযোগ্য। একজন বৃটিশ প্রতিবাদকারী নাম ‘সাম ওয়ালটন’। তিনি চান- যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব ও ব্যক্তিমালিকানাধীন অস্ত্র প্রস্তুতকারক “BAE” (British Airospace Engineering) System কে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচারের সন্মুখীন করতে। আর এ লক্ষ্যে একটি বিরাট হাতুরি নিয়ে ব্যানারসহ বি.এ.ই. সিস্টেমের লঙ্কাশায়ার অস্ত্রগোদামের দিকে তিনি রওয়ানা হন। উদ্দেশ্য, ওখানে সৌদি আরবে পাঠানোর জন্য গোপনে রক্ষিত যুদ্ধ বিমান বিকল করে দেয়া। কারণ, তার মতে এ ছাড়া যুদ্ধবিমানের যাত্রা আটকানোর আর কোন পথ নেই। আর এ কাজে সহায়তার জন্য সংগ্রহ করেছেন বন্ধু রেভারেন্ড ডানিয়েলকে। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছার কয়েক মিনিটের পথ দূরে থাকতেই সাম ওয়ালটন ও রেভারেন্ড ডানিয়েল উডহাউস(Sam Walton and Methodist reverend Daniel Woodhouse) দু’জন প্রতিবাদীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
সাম ওয়াল্টন বলেছেন, আমরা জানি আমাদের পুলিশ ধরবে এবং বিচারে আমাদের ১০ বছরের সাজা হবে। কিন্তু এ ছাড়াতো গণহারে হত্যাচালানোর এ বিমান কয়টির যাত্রা আটকানোর আর কোন বিকল্প নেই আমাদের হাতে। আমি আমার এমপি’র কাছে লিখেছি, কোন কাজ হয়নি। সেই ১৫ বছর বয়স থেকে আমি মিছিলে গিয়েছি দেখেছি কোন কাজ হয় না। ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধের সুযোগে সৌদি আরব সেখানে এসব অস্ত্র দিয়ে গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর ধরে। অথচ এসব অবস্থায় অস্ত্র বিক্রি গুরুতর অন্যায় ও বেআইনী। কিন্তু কেউ কিছু বলেনা।
এ ঘটনায় আগামী সপ্তাহে একটি বিচার বিভাগীয় পুনর্বিবেচনায় বিচারকগন ঠিক করবেন বৃটেনের অস্ত্র রপ্তানী লাইসেন্সের অধীনে সৌদি আরবে অস্ত্র রপ্তানী বন্ধ করবেন কি-না।
ওয়াল্টন ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট’কে বলেন, আমরা কোন সময়ই চাই না গ্রেপ্তার হতে কিন্তু এটা কি প্রত্যাশিত? কখনই নয়। আমরা যেতে যেতে চিন্তুা করেছি আইন যদি আমাদের দোষী সাব্যস্ত করে তা’হলে কম করে হলেও আমাদের ৬মাস থেকে ১০ বছরের সাজা হতে পারে। আমরা প্রতিবাদের অনেক পথ খুঁজেছি যাতে কোন ক্ষয়-ক্ষতি না হয় এবং হাল্লা-চিৎকার না হয়। আমরা কখনও চাইনা জেলে যেতে কিন্তু এবার অন্তত আমি প্রস্তুত জেলে যেতে। কারণ এ ছাড়া নিরীহ মানুষের জীবন রক্ষার আর কোন বিকল্প নেই।
অপরাধমূলক ক্ষয়-ক্ষতির সন্দেহে ৩০ বছর বয়সী মিঃ উডহাউজকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং আগামী ২৭শে এপ্রিল পর্যন্ত জামিন দেয়া হয়েছে। এরা দু’জন ওয়ারটনের ওই অস্ত্র বিমান রাখার জায়গার খুবই কাছে যাবার ব্যবস্থা করে নিয়েছিলেন। তাদের ভাষায় ওখানে ৪টি ‘টাইফুন জেট’ ও ৮টি ‘হক’ রাখা আছে।
প্রাক্তন উইম্বিলডন স্কুলের ছাত্র ও নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই স্নাতক সাম ওয়াল্টন আরও বলেন, আমরা মোটামুটি যুদ্ধ বিমানের কাছেই পৌঁছে গিয়েছিলাম কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারলাম না গণহত্যাকারী ওই বিমানের যাত্রা আটকাতে, এজন্য আমি খুবই ব্যথিত।
প্রতীকীস্বরূপ জানান দেয়া ভাল যে আজ থেকে ২১ বছর আগে এই একই স্থানে ৪জন মহিলা প্রতিবাদী ঢুকে পড়ে এবং একটি ‘হক’ যুদ্ধবিমানের অন্যুন ১.৫মিলিয়ন পাউন্ডের ক্ষতি করেছিল। ওই ‘হক’ যুদ্ধবিমান ইন্দোনেশিয়ায় পাঠানোর জন্য প্রস্তুত ছিল। ওই মহিলাদের বক্তব্য ছিল যে এই বিমান পূর্ব তিমুরে গণহত্যা চালাবে। তখন লিভারপুলের ক্রাউনকোর্টে তাদের বিচার হয়েছিল এবং জুড়িগন গণহত্যা আইনে তাদের নির্দোষ বলে খালাস করে দিয়েছিল।
ওয়াল্টন আরও বলেন, আমার জীবনে কোন অপরাধমূলক ফিরিস্তি নেই। আমি দেখেছি যখনই এসব নিয়ে কথা উঠে সৌদি আরব, বৃটেন আর বি.এ.ই. সিস্টেম এসব পছন্দ করেনা। এ ধরনের গণহত্যার বিষয়ে আমরা কাঠগড়ায় দাড়াবো কেনো? কাঠগড়ায় দাড়াবে তারা আর ইয়েমেনে গণহত্যার জন্য সৌদি আরব।
Someone from #Bahrain Embassy in London thrown hot water on protestors from the balcony of the embassy pic.twitter.com/Al9FWJaI5F
— Sayed Ahmed AlWadaei (@SAlwadaei) January 20, 2017
গত মাসের প্রথম দিকে ৩জন শিয়া মুসলমানকে মৃত্যুদন্ডদানের বিরুদ্ধে ওয়াল্টন একটি প্রতিবাদী মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন। বাহরাইন দূতাবাসের সামনে একজন আমিরাতী পুলিশ কর্মীকে হত্যার অপরাধে তাদের এ মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছিল। (ইন্ডিপেন্ডেন্ট অনুসরণে)
লন্ডন: শুক্রবার, ২০শে মাঘ ১৪২৩