হারুনূর রশীদ।। এ নিয়ে দ্বিতীয় দফায় ব্রেক্সিট নিয়ে সংসদ ভোটে হার মানতে হলো প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে’কে। বিগত দেড় মাসেরও অধিক সময়ে অনেকের সাথে আলাপ-আলোচনা, ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের সাথে অনেক বোঝা-পড়া শেষে ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার পক্ষে যে মোসাবিদা করেছিলেন, বৃটিশ সংসদ তা আবারো নাকোচ করে দিল। গণতন্ত্রের সূতিকাগার বৃটিশ সংসদ তাদের অতীত গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যকে ধারন করে ভোটের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে দিল ইউনিয়ন বড় নয়, দেশ বড় জাতি বড়।
অনেক অনেক কাট-খড় পুড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী তেরেশা মে এবারের চুক্তির খসড়া তৈরী করেছিলেন। তিনি মনে করেছিলেন এবার সাংসদগন খসড়ার পক্ষেই ভোট দেবে। কিন্তু তিনি একটি বিষয় ভুলে গিয়েছিলেন যে বৃটিশ জাতি জানে জোটের চেয়ে, যাদের নিয়ে জোট গঠিত হয় সেই সব জাতিগুষ্ঠীর স্বার্থ বড়। জাতিগুষ্ঠীর বৃহত্তর স্বার্থেই জোট গঠন করা হয়। জোট কোন হাওয়াই সম্পর্ক নয় যে জোটের স্বার্থকে বড় করে দেখতে হবে। আর তাই এবারও বৃটিশ সংসদ তার চুক্তি মোসাবিদার বিপক্ষে রায় দিল। গত কালের সংসদ ভোটে তিনি পেয়েছেন ২৪২টি ভোট আর তার বিপক্ষে ভোট হয়েছে ৩৯১টি।
প্রধানমন্ত্রী সংসদে তার চুক্তির খসড়া পেশ করার আগে বলেছিলেন যে, তাকে যে নামুনায় বলা হয়েছে তিনি সেভাবেই সংশোধন করে চুক্তির নতুন খসড়া তৈরী করেছেন। কিন্তু সংসদ তার কথার মিষ্টিতে ভুলে যায়নি তাদের দায়ীত্ব। সংসদ বৃটিশ জাতির প্রতি তাদের ঐতিহাসিক দায়ীত্ব পালন করেছে প্রধানমন্ত্রীর ব্রেক্সিট খসড়ার বিপক্ষে পুনঃ রায় দিয়ে।
প্রধানমন্ত্রীর সংশোধিত নতুন খসড়ায় ইইউ স্ট্রাসবুর্গ নেতৃত্বের সায় ছিল। অবশ্য একটি শর্ত সেখানে ছিল যে বৃটেনকে আগামী দু’বছরের মধ্যে আয়ারল্যান্ডের সাথে সুস্পষ্ট বাণিজ্য নীতি তৈরি করতে হবে।
বলতেই হয়, এতোকিছুর পরও গতকাল শেষমূহুর্ত পর্যন্ত তিনি হাল ছাড়েননি। এই ২৯শে মার্চ ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যাবার বৃটেনের শেষ সময়। এই তারিখটির উপর ভর করে রাজনীতির নতুন কৌশল অবলম্বন করলেন। দ্বিতীয় দফা খসড়ার ভোটে হেরে গিয়েই সংসদে জানালেন, আগামীকাল অর্থাৎ আজ ১৩ই মার্চ সংসদে চুক্তিহীনভাবে বৃটেন ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসতে চায় কি-না কিংবা বেরিয়ে আসার বিষয়ে আরো সময় নেয়া ঠিক কি-না এর উপর ভোট হবে। অথচ প্রচলিত প্রথানুসারে তার উচিৎ ছিল ভোটে হেরে যাবার পরই পদত্যাগ করা। এটি না করে তিনি নতুন কৌশলে এগিয়ে যাবার পথ খুঁজছেন।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী তেরেশা মে গত ১৬ই জানুয়ারী সর্বপ্রথম সংসদে ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসার খসড়া চুক্তি ভোটাভুটির জন্য দিয়েছিলেন এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন।