হারুনূর রশীদ।।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিতে গিয়ে জামায়াত বিষয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছিলেন ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন। ড. কামালের ঐক্যফ্রন্টের অঘোষিত শরিক জামায়াতকে নিয়ে তার অবস্থান জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকরা। আর তাতেই তিনি এমন মাত্রায় ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলেন যে প্রয়াত মৌলানা ভাসানীর আদলে তার মুখ দিয়ে ধমকের সুরে বেরিয়ে আসে উর্দু জবানে ‘খামোশ’।
ড. কামাল হোসেনের এ ধমককে কেন্দ্র করে সাংবাদিক হারুন উর রশীদ “বাংলা ট্রিবিউন”এ খুব মজা করে লিখেছেন- ‘খামোশ’ শব্দটি মূল ফার্সি হলেও বহুল ব্যবহৃত হয় উর্দুতে। তবে তার এই উর্দু ভাষায় হুমকি কিন্তু আমার তেমন খারাপ লাগেনি। আমরা সাধারণ গড়পড়তা বাঙালি যেমন রেগে গেলে ইংরেজি বলি, তেমনি আইনজ্ঞ এবং সুশীল রাজনীতিক ড. কামাল রেগে গিয়ে উর্দু বলেছেন। জামায়াত আর পাকিস্তানকে আলাদা করে যেমন ভাবা যায় না। ড. কামালকে এখন জামায়াতের বাইরে ভাবা যায় না। তাই জামায়াত থেকে পাকিস্তান প্রেমে রাগের মাথায় উর্দুতে মুখ ফসকে বের হয়ে আসতেই পারে— ‘খামোশ’।
প্রকাশ্য মুক্তিযুদ্ধ বিরুধী ধর্মীয় ও মৌলবাদী রাজনৈতিক শক্তি জামাত ই ইসলাম ও তাদের রাজনৈতিক চরিত্র ভালকরে জেনেও সরকার আজ অবদি এ দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেনি। অথচ আমাদের আইনের কোথায়ও এমন কোন বিধান নেই যে এমন চেতনার কোন রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা যায় না। বরং নিষিদ্ধ করা যায় এটিই দুনিয়াব্যাপী চলে আসা প্রথা ও বিধি। স্বাধীন বাঙলাদেশে বিগত ৪৭ বছরের রাজনীতির পালাবদলের বিভিন্ন মোড়ে বহু মানুষ ও দল থেকে জামাতের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবী উঠেছে যেমন সত্য তেমনি রহস্যেঘেরা সত্য যে কোন সরকারই জামাতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেনি। এমনকি বর্তমান সরকারও করেনি। উত্তরে হয়তো কেউ কেউ বলতে পারেন জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করে পরবর্তীতে যারাই ক্ষমতায় এসেছেন তারা কেউই নিজেদের গদি রক্ষার স্বার্থে এমন কাজে হাত দিতে সাহসী হননি। আর উত্তর যদি তাই হয় তা’হলে ড. কামাল হোসেনের উপর দোষ দেয়ার কোন সুযোগ আছে কি? ড. কামাল আমাদের সেই পারম্পরাই রক্ষা করার চেষ্টা করেছেন মাত্র।
বাংলা ট্রিবিউন-এ সাংবাদিক জনাব হারুন উর রশীদের লিখা থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে আজ ১৪ই ডিসেম্বর, সকালের দিকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস-২০১৮, উদযাপনে ড. কামাল ফুল দিতে গেলে যমুনা টিভি’র একজন সাংবাদিক তার কাছে জানতে চান জামাত বিষয়ে তাদের অবস্থান। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি সম্মান দেখাতে গিয়ে ড. কামাল বলেছিলেন- এখন না, এখন না। শহীদ মিনারে কোনও কথা না…। এর পর সাংবাদিক আবার জানতে চান- জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে…, তাদের সাথে নির্বাচন…?
এ পর্যায়ে ড. কামাল বলেছিলেন- প্রশ্নই ওঠে না, প্রশ্নই ওঠে না। বেহুদা কথা। তার পরও সাংবাদিক তার দায়ীত্ব বিবেচনায় পুনঃ জানতে চাইলে ড. কামাল কি এক অজানা কারণে উত্তেজিত হয়ে বলেন- কত পয়সা পেয়েছো এই প্রশ্নগুলো করতে? কার কাছ থেকে পয়সা পেয়েছো? তোমার নাম কী? জেনে রাখবো তোমাকে, চিনে রাখবো। পয়সা পেয়ে শহীদ মিনারকে অশ্রদ্ধা করো তোমরা। শহীদদের কথা চিন্তা করো। হে হে হে করছে। চুপ করো।
নাছোড়বান্দা সাংবাদিক পিছু হটতে রাজী না। সাংবাদিক এবার প্রশ্ন করেন- শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যদের কথা যে, আপনারা জামায়াতের সাথে …। সাংবাদিক প্রশ্নটি শেষ করতে পারেননি। অকল্পনীয়ভাবে হঠাৎ করেই কামাল হোসেন, আমাদের গড়পড়তা বাঙ্গালী ভাষায় বলতে গেলে- তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠেন! কঠোর মেজাজে কঠিণ ধমকের সুরে বলে উঠেন- চুপ করো! চুপ করো!! খামোশ! তোমার নাম কী? — চিনে রাখলাম।
একটি বিষয় আমরা আদৌ বুঝে উঠতে পারছিনা। জামাত প্রসঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের সম্পর্ক জানতে চাওয়ায় সাংবাদিক কি মহা ভুল করে বসলেন যে ড. কামাল হোসেনের মত এমন একজন চৌকুশ প্রতিথযশাঃ মানুষ একেবারে উন্মাদের মত হুঙ্কার দিয়ে উঠবেন? শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শহীদদের স্মৃতিসৌধে দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনার প্রকাশ্য বিরুধী জামাতকে নিয়ে একজন সাংবাদিকতো কামাল হোসেনের মত মানুষকে এমন প্রশ্ন করতেই পারে। এমন প্রশ্নে, তার ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙ্গে যাবার কোন উপযুক্ত কারণ আমরা দেখতে পাইনা। এতে করে খুবই স্বাভাবিকভাবে এ চিন্তা আসা কি অযৌক্তিক যে ড. কামালের মনোজগৎ জামাত রাজনীতির বিষয়ে খুবই দূর্বলতায় ভোগে। এবং ভেতরে ভেতরে তিনি জামাতকে এখনও বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করতে চান?
ড. কামাল কি বুঝতে পারেন না যে ওই সাংবাদিকের কথা আমরা সাধারণ মানুষের কথা। আমরা দেশের আপামর সাধারণ মানুষ জানতে চাই ড. কামাল গংরা আসলেই কি নির্বাচনের এ সুযোগে নির্বাসিত জামাতের বস্তাপঁচা গান্ধা মৌলবাদী ধর্মীয় রাজনীতিকে নতুন করে মুক্তিযুদ্ধের মাটিতে উজ্জ্বিবিত করতে চান? তা’হলে তো উল্টো প্রশ্ন করতে হয়- একাজ করতে গিয়ে আপনারা বিশ্বমৌলবাদের তরপ থেকে কতটাকা পকেটস্ত করেছেন, বলার সাহস আছে কি?
ড. কামাল, এ দেশের মানুষ একাত্তুরের মত বোকা নয়। অনেক দূর এগিয়েছে মানুষ। আপনারা যারাই যেখানে থেকে ব্যবসা রাজনীতি করছেন, আমরা সাধারণ মানুষকে ওতো বোকা ভাববেন না। আখেরে আপনাদেরকেই কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।