মুক্তকথা সংবাদ কক্ষ।। নির্বাচনের আগেভাগে মাঠ গরম করা দুনিয়ার প্রতিটি দেশের রাজনীতিতে প্রায় একই রকম। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। অতীতেও হয়েছে এখনও হয়ে যাচ্ছে। স্পষ্টতঃই লক্ষিত হচ্ছে একটি গণআন্দোলনের সূচনা ঘটানোর অবিরাম চেষ্টা। সাধারণ মানুষের আন্দোলন গড়ে তোলা একটি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। এ কাজে দু’টি পক্ষতো থাকবেই। এক পক্ষ যারা আন্দোলন সংগঠনে কাজ করবে আর অপর পক্ষ যারা এ আন্দোলনকে দমাতে কিংবা গণতান্ত্রিকভাবে সুশীল মাত্রায় রাখার প্রচেষ্টা চালাবে। দ্বিতীয় পক্ষটি বিরাজমান সরকারই হয়ে থাকে।
এ নমুনার আন্দোলন যখন গড়ে উঠায় প্রয়াসী হয় তখন আন্দোলন নিয়ে গুজব ছড়ানো সমান তালে না হলেও পিছু পিছু লেগেই থাকে। কোন কোন ব্যাখ্যায় সেটি অপরাজনীতি। গত এক সপ্তাহের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে “নিরাপদ সড়ক চাই” নিয়ে চলমান আন্দোলনকে সামনে রেখে তেমনি গুজব প্রচারণা শুরু হয়েছে। কিন্তু ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনকে সামনে রেখে যেসব প্রচারণা গণমাধ্যমে আসছে তা সকল মূল্যবোধকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এসব ছবি ও তথ্য দেখে ও পড়ে স্পষ্টতঃই বুঝা যায় এগুলো একেবারেই মিথ্যা বা ভূঁয়া। ভূঁয়া এসব প্রচারণা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে একটি সুনির্দিষ্ট গোষ্ঠী। তাদের এই গুজব ছড়ানো অতীত রাজনীতির সকল মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। সম্প্রতি ব্যক্তিগত মেসেঞ্জার ও গ্রুপ মেসেঞ্জারে একটি গুজব ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে যা খুব বাজার পেয়েছে বলেই মনে হয়। এ প্রচারে জানানো হচ্ছে, ‘রবিবার স্কুল শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং যৌন নির্যাতন চালানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’
এ প্রসঙ্গে ফেসবুকে কোনো পোস্ট প্রদান করা না হলেও ‘একজন সাংবাদিক এবং এক মন্ত্রীর খুব কাছের একজন’-এর বরাত দিয়ে মেসেঞ্জারে জানানো হচ্ছে, ‘আগামী রবিবার মন্ত্রী এমপিরা ১০০০-১৫০০ বস্তির ছেলেকে রাস্তায় নামাবে। যাদের কাজ হবে মেয়েদের যৌন নির্যাতন করা, গাড়ি ভাঙা, গাড়িতে আগুন দেওয়া। আর এই ঘটনার প্রতিবাদে পুলিশ সাধারণ ছাত্রদের ওপর আক্রমণ চালাবে। ফলাফল ছাত্রদের ওপর সাধারণ মানুষ ক্ষেপবে।’ ওই প্রচারে অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়, ‘অনুগ্রহপূর্বক নিউজটি ম্যাসেজের মাধ্যমে শেয়ার করবেন। কোনো প্রকার পোস্ট দিবেন না।’
সংবাদ মাধ্যমকে পুলিশ জানিয়েছে এ রকম কোনো হামলার পরিকল্পনা সরকারি সংগঠনগুলোর নেই বলেই তারা জানেন। কোন ধরনের হামলা ও ভাঙচুর বিষয়ে পুলিশ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আজ সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন, আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে আজ ৪জন ছাত্রীকে আটকে রাখা এবং একজন ছাত্রের চোখ উঠানো হয়েছে বলে ফেসবুকে যে প্রচারণা চালানো হয়েছে তা ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’ একটি স্বার্থান্বেষী মহল এই গুজব ছড়িয়েছে। এই প্রচারণা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
তিনি বলেন, এই গুজব ছড়ানোর ফলে একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী পুলিশ বাহিনী আন্দোলনরত শিক্ষার্থী এবং সাংবাদিকদের নিয়ে ঘটনাস্থলে যায় এবং ওই কার্যালয়ের প্রতিটি কক্ষ তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখা হয় ‘কিন্তু কিছুই খুঁজে পাওয়া যায়নি।’
এই সকল গুজব প্রসঙ্গে আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়া একজন ছাত্র আমাদের জানান যে এগুলো যে হচ্ছে তা তো ঠিকই। কিন্তু ভূঁয়াগুলো পড়লেই বুঝা যায় যে এগুলো ভূঁয়া, অসত্য। মিথ্যা গুজব! তবে এসব গুজব রটাচ্ছে কারা(?) এবং তাদের মূল উদ্দেশ্য কি? সেটিই একটি বিরাট প্রশ্ন। এসব ভূঁয়া রটনা দিয়ে কোন কালেই সাধারণ মানুষের কোন আন্দোলনকে দাবিয়ে রাখা যায়নি। যারা এসব রটিয়ে বেড়াচ্ছে তারাই হয়তো একসময় তাদের মিথ্যা রটনার জালে ধরা পড়ে ধরাশায়ী হবে।