1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
প্রচণ্ড তাপ দাহে চা উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত ? - মুক্তকথা
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৯ অপরাহ্ন

প্রচণ্ড তাপ দাহে চা উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত ?

শ্রীমঙ্গল শিল্পাঞ্চলীয় প্রতিনিধি॥
  • প্রকাশকাল : শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪
  • ২৬৪ পড়া হয়েছে


চা’য়ে কীটপতঙ্গের আক্রমণ


প্রচন্ড দাবদাহে উৎপাদন ব্যাহত


 

 

চলমান প্রচন্ড দাবদাহ ও অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগ ও কীটপতঙ্গ ছড়িয়েছে চা বাগানে। এ অবস্থায় চলতি মৌসুমে উৎপাদন কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন দেশের চা শিল্প সংশ্লিষ্টরা। যদিও বাংলাদেশ চা বোর্ডের আওতাধীন চা গবেষণা কাজের সাথে নিয়োজিত বিশেষজ্ঞরা তা মানতে নারাজ। তারা বলছেন চা মৌসুমের খরা’র দ্বিতীয় ধাপ(Second drought) অতিক্রম করছে। দীর্ঘ তিন যুগ ধরে ঠিক এই সময়ে চা শিল্পের উপর খরার একটা ঝাপটা আসে। প্রতি বছর একই নিয়মের ভিতর দিয়েই চা-শিল্প এগিয়ে যাচ্ছে।

গত কয়েকদিন ধরে টানা তাপদাহে বিপন্ন হয়ে পড়ছে জনজীবন। এর প্রচণ্ড প্রভাব পড়েছে জেলার চা বাগানগুলোতেও। বৃষ্টিকে চা উৎপাদনের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই টানা তাপদাহে মৌলভীবাজারের চা বাগানগুলোতে বৃষ্টির জন্য হাহাকার চলছে। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলস্থ আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে তাপমাত্রা গড়ে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠানামা করেছে।

চা-বাগানের প্লান্টেশন এলাকায় চা-গাছে লাল মাকড়শা(রেড স্পাইডার) ও মশার(হেলোপেনটিস) আক্রমণ দেখা দিয়েছে। চা উৎপাদনের এই অনুকূল মৌসুমে চা গাছসমূহে কীটপতঙ্গের আক্রমণের ফলে চা গাছগুলো বিবর্ণ হয়ে পাতা কুঁকড়ে(বাঞ্জি) যাচ্ছে। বাগানগুলোর সেকশনের পর সেকশনে দেখা দিয়েছে এই রোগ।

 

বাগানে ছায়াতরুর ঘাটতি সুস্পষ্ট।

 

 

২৪কেজি পাতা তোলার নিয়ম রক্ষা হচ্ছে না ফলে বাড়তি রোজগার ব্যাহত

এদিকে চা শ্রমিক মহিলারাও পড়েছেন বিপাকে। প্রচণ্ড তাপদাহে তাদের চা চয়নের কাজটি দুরূহ হয়ে পড়েছে। যে সময় নতুন পাতায় তাদের হাত ভরে যাওয়ার কথা এই সময়ে নতুন কু্ঁড়ি ও পাতা বাঞ্জিদশায় আক্রান্ত হওয়ায় তুলে ফেলে দিতে হচ্ছে। অন্যদিকে পাতা কম থাকায় প্রতিদিনের ২৪ কেজি পাতাও তারা উঠাতে পারছে না। ২৪ কেজিতে তাদের প্রতিদিনের বেতন নির্ধারিত থাকলেও ২০ কেজির বেশি কেউ পাতা উঠাতে পারছেন না। যদিও স্বাভাবিক অবস্থায় তাদের অনেকেই ২৪ কেজির উপরে পাতা তুলে অতিরিক্ত টাকা পান। মুল হাজিরার সাথে এটা সংযুক্ত করে তারা সংসার চালান।

 

প্রয়োজনীয় ছায়াতরুর ঘাটতি ফলে ফলন কম

তাছাড়া চা-বাগানসমূহে শেড ট্রি না থাকা বা ব্যাপক হারে কমে যাওয়ায় প্রতিকূল অবস্থার সৃষ্টি হয়। প্রতিটি চা বাগানে একর প্রতি মোট ৬ হাজার ৭শত টি চা গাছ লাগানো হয়ে থাকে। আর এসব সৃজনকৃত জায়গায় গড়ে ৩শত থেকে সাড়ে ৩শত ছায়াবৃক্ষ(শেড ট্রি) থাকার কথা। কিন্তু মৌলভীবাজারে অর্ধেকের কাছাকাছি বাগান এলাকায় ছায়াবৃক্ষের ঘাটতি রয়েছে। ফলে এসব বাগানে সঙ্গত কারণেই ফলন কম হচ্ছে এবং চায়ের মানও ভাল হচ্ছেনা। যেসব বাগানে পর্যাপ্ত ছায়াবৃক্ষ রয়েছে সেসব বাগানে ভাল মানের চা উৎপাদিত হচ্ছে।

 

দেশে মোট ১৬৭টি চা-বাগান রয়েছে

উল্লেখ্য, দেশে মোট ১৬৭টি চা বাগান রয়েছে। এর মধ্যে মৌলভীবাজারে ৯২টি, হবিগঞ্জে ২৫টি, সিলেটে ১৯টি, চট্টগ্রামে ২২টি, পঞ্চগড়ে ৮টি বাগান, রাঙামাটিতে ২টি, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁওয়ে ১টি করে বাগান আছে। চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে দেশে ১৬৭টি বাগানে ৯ দশমিক ৩৮ কোটি কিলোগ্রাম চা উৎপাদিত হয়েছে, যা আগের বছরের ৯ দশমিক ৬৫ কোটি থেকে ৩ শতাংশ কম। গত মৌসুমে ২ লাখ ৮৫ হাজার একরের বেশি জমি থেকে রেকর্ড উৎপাদন হয়েছে ১০ কোটি ২০ হাজার কিলোগ্রাম চা পাতা।

শ্রীমঙ্গল জেরিন চা বাগানের ব্যবস্থাপক সেলিম রেজা জানান, অতি খরায় চায়ের স্বাভাবিক উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। দিন দিন তাপদাহ বাড়তে থাকায় চা শ্রমিকদের মধ্যেও বাড়ছে বিভিন্ন রোগবালাই। বর্তমানে মৌলভীবাজারের তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে ৩৭ ডিগ্রীর উপরে। এতে কিছুটা ক্ষতির মূখে পড়েছে চায়ের উৎপাদন। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত অত্যন্ত জরুরি। বিকল্প হিসেবে আমরা ইরিগেশনের মাধ্যমে পানির যোগান দিয়ে যাচ্ছি।

শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউড়া টি ডিভিশনের জেনারেল ম্যানেজার ও বাংলাদেশীয় চা সংসদের সিলেট ব্রাঞ্চের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ শিবলী জানান, চায়ের জন্য ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রী সেলসিয়ার্স তাপমাত্রা উত্তম। তবে সর্বোচ্চ ২৯ ডিগ্রী পর্যন্ত চা গাছ তাপ সহ্য করতে পারে। এর উপরে গেলেই খরার কবলে পড়বে। তবে চা বাগানে সেড টির কারনে ৩৫ থেকে ৩৭ ডিগ্রী পর্যন্ত সহনীয়।

 

 

খড়ায় বুড়িয়ে যাওয়া অনুপযোগী পাতা।

 

 

এ খরা নতুন কিছু নয়

বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ইসমাইল হোসেন জানান, চা মৌসুমে এটি খরা’র দ্বিতীয় ধাপ(Second drought) অতিক্রম করছে। দীর্ঘ তিন যুগ ধরে চা শিল্পের উপর খরার এই ঝাপটি আসে। প্রতি বছর আমরা এই নিয়মের ভিতর দিয়েই অতিবাহিত হচ্ছি। এর ফলে আমাদের উৎপাদনে যেমন প্রভাব ফেলে নাই, ঠিক তেমনি এবারও সেই ধরনের কোন আশংকা দেখছি না। তবে এবারের তাপমাত্রা কিছুটা বেশি। তাই আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়ে প্রতিদিন কাজ করে যাচ্ছি। আক্রান্ত বাগানগুলো পরিদর্শন করে যথাযথ পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। এ অবস্থায় চায়ের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ফিরিয়ে আনতে ইরিগেশনের পাশাপাশি প্রতি চারটি গাছের মধ্যে গর্ত করে মাটিতে পঁচা গোবর এর সাথে কিছু টিএসপি মিশিয়ে গর্ত ভরে দেয়ার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। এছাড়াও মশা, লাল মাকড়সাসহ কীটপতঙ্গে উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে যথাযথ পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, চায়ের জন্য ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উত্তম। তবে চা গাছ সর্বোচ্চ ২৯ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপ সহ্য করতে পারে। এর ওপরে গেলেই খরায় পুড়বে যদি ছায়া তরুর ঘাটতি থাকে। তবে চা বাগানে পর্যাপ্ত শেড ট্রি বা ছায়া তরুর কারণে এই তাপমাত্রা ৩৫ থেজে ৩৯ ডিগ্রি পর্যন্ত সহনীয়। বর্তমানে মৌলভীবাজারের তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে ৩৭ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সূর্যালোকের উপস্থিতিতে গাছের পাতায় অবস্থিত ক্লোরোফিলের মাধ্যমে গাছ যেভাবে খাদ্য আহরণ করে, তাপমাত্রা ২৯ ডিগ্রি পার হলেই চা গাছ এই সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এজন্য ছায়া তরু অবশ্যম্ভাবী।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোঃ আশরাফুল ইসলাম এনডিসি পিএসসি একটি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, চা উৎপাদনের সাথে আবহাওয়ার সরাসরি প্রভাব রয়েছে। বিরূপ আবহাওয়ায় যেমন জনজীবন বিপর্যস্থ হয়, তেমনি চা শিল্পের উৎপাদনও ব্যহত হয়।

 

বহু বাগানে জলসেচ ব্যবস্থা নেই

তিনি বলেন, তাপদাহ বা খরার কবলে পড়লে ইরিগেশনের মাধ্যমে এই ক্ষতিটা পুষিয়ে নেয়া সম্ভব। যাদের এই ব্যবস্থা আছে তারা চালিয়ে যাবেন, আর যাদের নেই তারা পাম্পের মাধ্যমে বা সেচ ব্যাবস্থা করতে হবে। আর যদি পোকামাকড়ের উপদ্রব বেড়ে যায় তাহলে পাশাপাশি এলাকায় আমাদের অফিসগুলো রয়েছে বাগান কর্তৃপক্ষ তাদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের পরামর্শ নিয়ে ব্যবস্থা নিতে আমি বলবো। কি ধরনের পোকামাকড় বা কিটপতঙ্গের আক্রমণ রয়েছে সেই অনুযায়ী আমাদের অফিসগুলোতে যারা দ্বায়িত্বে রয়েছেন তাদের পরামর্শ নিয়ে কীটনাশক ব্যবহারসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, চা শিল্পের উন্নয়নের পাশাপাশি যেন বাগান মালিক এবং সংশ্লিষ্ট কেহই কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্থ না হন আমাদের সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT