লন্ডন: প্রবীণ কূটনীতিক, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ফারুক আহমদ চৌধুরীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় বর্তমানে তিনি রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর সুস্থতার জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। বায়েজীদ মাহমুদ ফয়ছল-এর বরাতে ‘আমাদের প্রতিদিন’ এ খবর দিয়েছে।
প্রতিদিনে ব ম ফয়সল লিখেছেন, স্বাধীনতাপূর্ব সময়ে সিলেট থেকে উদ্ভাসিত যে ক’জন মানুষ স্বদেশ ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজ কর্মদক্ষতায় পরিচিতি অর্জন করেছিলেন তাদের অন্যত ফারুক আহমদ চৌধুরী। গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকাদক্ষিণের প্রসিদ্ধ রত্নপ্রসবিনী গ্রাম বারকোটের ফারুক চৌধুরীর শৈশব কেটেছে পিতা গিয়াসুদ্দিন আহমদের সাথে বৃহত্তর সিলেটে আর ভারতের বর্তমান মেঘালয় ও আসামরাজ্যে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হলে আসাম থেকে তারা সপরিবারে পূর্বপাকিস্তানে চলে আসেন। নেত্রকোনার আঞ্জুমান হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক আর ঢাকা কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে ইন্টারমেডিয়েট উত্তীর্ণ হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৫ সালে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে তিনি ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসে যোগদান করেন।
চাকুরি জীবনের প্রথম দুইবছর কাটে বিদেশে প্রশিক্ষণে। বোস্টনের ফ্লেচার স্কুল অভ্ ল অ্যান্ড ডিপ্লোমেসি, ওয়াশিংটনের জর্জ টাউন বিশ্ববিদ্যাল আর ফরেন সার্ভিস ইন্সটিটিউট এবং লন্ডনের ফরেন অফিসে। প্যারিসে অঁলিয়াস ফ্রান্সেতে ফরাসি ভাষা অধ্যয়ন করেন। তারপর পাকিস্তানি আমলের চাকুরি জীবন কাটান রোম, বেজিং, দি হ্যাগ আর আলজিয়ার্সে। এভাবে কূটনীতিবিদ ফারুক চৌধুরী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাকিস্তানের দূতাবাসসমূহে কাজ করেন। ১৯৬৯ সাল থেকে বাংলদেশের জন্ম অবধি তিনি যথাক্রমে ইসলামাবাদের পররাষ্ট্র দপ্তরে এবং ঢাকার পররাষ্ট্র দপ্তরের শাখা অফিসে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত লন্ডনে বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার ছিলেন। ১৯৭৬ সালে আবুধাবিতে রাষ্ট্রদূত এবং ১৯৭৮ সালে বেলজিয়ামে এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮২ সালে তাকে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ইসলামিক পররাষ্ট্র সম্মেলনের প্রধান সমন্বয়কারির দায়িত্ব প্রদান করা হয়। ১৯৮৪ সালে তিনি পররাষ্ট্র সচিব নিযুক্ত হন। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ সালপর্যন্ত ভারতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরামে তিনি বহুবার বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ফারুক চৌধুরী মননশীল লেখক হিসেবেও খ্যাতিমান। ‘দেশ দেশান্তর’সহ তার একাধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।