যারা জাল সনদ নিয়ে শিক্ষকতা পেশায় রয়েছেন, তাদের তালিকা সংগ্রহ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন। ইতোমধ্যে এসব শিক্ষক বেতন ভাতা হিসাবে যে অর্থ নিয়েছেন তাও আদায়ের উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষাবিভাগ। প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি, শিক্ষামন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিনিধিকে মিথ্যা তথ্য নিয়ে, কোথাও কৌশলে নিয়োগ বোর্ডকে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে চাকরি বাগিয়ে নিয়েছেন এসব শিক্ষক। শিক্ষকতা পেশায় অযোগ্য হলেও টাকার বিনিময়ে সনদ নিয়ে নিজেকে যোগ্য করেছেন! এসব অযোগ্য শিক্ষকের তালিকাই যাচ্ছে এখন দুর্নীতি দমন কমিশনে।
তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন স্তরে যাচাই বাছাই শেষে শিক্ষকদের জাল সনদের প্রমাণ মিলেছে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের অনুসন্ধানে। জাল সনদ দিয়ে চাকরি করছেন এমন প্রায় ৭’শ শিক্ষকের তালিকা তৈরি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক আহমেদ সাজ্জাদ শরীফ বলেন, আমাদের কাছে জাল সনদধারী শিক্ষকদের তালিকা রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনে চাহিদা অনুযায়ী এসব তালিকা পাঠানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক কার্যালয়ে তথ্য পাঠানো হয়েছে। আরো তথ্য পাঠানো হবে।
পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালকের কাছে দুদক থেকে পাঠানো চিঠিতে জাল সনদে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের তালিকা এবং তাদের চাকরির বর্তমান অবস্থা জানতে চাওয়া হয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও বিভিন্ন অনিয়মের তদন্তের দায়িত্বে থাকা পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর ২০১৪ সাল থেকে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের সনদের যাচাই শুরু করে। শিক্ষকদের কাছ থেকে সনদ সংগ্রহ করে তা সনদ প্রদানকারী সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও বোর্ডে যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হয়। সনদ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের যাচাই শেষে জাল সনদ চিহ্নিত করা হয়।
শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার সনদ নিয়ে আলমাস উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি একটি সিনিয়র আলিম মাদ্রাসায় সহকারী শিক্ষক (বিজ্ঞান) হিসাবে নিয়োগ পান। এমপিওভুক্ত হয়ে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা বেতনও নিয়েছেন। ডিআইএ তার সনদের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সেটি রাজধানীর নায়েম ভবনের এনটিআরসিএ কার্যালয়ে পাঠায়। কিন্তু পরীক্ষা করে দেখা গেল, যে সনদের প্রাধান্য দিয়ে তাকে নিয়োগ দেয়া হলো সেটিই জাল। ডিআইএ এই শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করে তার কাছ থেকে বেতন হিসেবে তুলে নেওয়া টাকা আদায়ের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশও করে। এখন মামলার জালে জড়াতে হবে এসব শিক্ষককে।
তথ্য অনুযায়ী, জাল সনদে নিয়োগ পাওয়া ৬৯৬ শিক্ষকের তালিকা তৈরি করেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর। অধিদপ্তর জানিয়েছে, যে সনদের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পেয়েছেন তা যদি জাল হয় তাহলে বেতন ভাতা হিসাবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক যা নিয়েছেন তাও ফেরত দিতে হবে। তথ্য অনুযায়ী ৫৩১ জন শিক্ষক বেতন ভাতা হিসাবে নিয়েছেন ১৮ কোটি ৬৮ লাখ ৩৩ হাজার টাকা।
জাল সনদে নিয়োগ পাওয়া ৫৩১ জনের মধ্যে শিক্ষক নিবন্ধনের জাল সনদ দিয়ে নিয়োগ পেয়েছেন ৩৪০ জন, সাচিবিক বিদ্যা/কম্পিউটারের জাল সনদ দিয়ে নিয়োগ পেয়েছেন ১৫১ জন। অন্যান্য জাল সনদ জমা দিয়ে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পেয়েছেন ৪০ জন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, জাল সনদে নিয়োগ পাওয়া আরো ১৬৫ শিক্ষকের ফেরতযোগ্য টাকার পরিমাণ অনুসন্ধানের কাজ চলছে। ইত্তেফাকের খবর লিখেছেন নিজামুল হক।