লন্ডন: এ মৌসুমের বন্যা শুধু বাংলাদেশেই নয় ভারত ও নেপালেও বন্যা ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করেছে। লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকার খবরে জানা যায় ভারত, বাংলাদেশ ও নেপালে এ মৌসুমের বন্যা এ পর্যন্ত ১২শ মানুষের প্রান কেড়ে নিয়েছে। ঘনঘন বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট পুনর্পুনঃ বন্যা দক্ষিনপূর্ব এশিয়ার এ তিনটি দেশে ভয়াবহ বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছে। গার্ডিয়ান লিখেছে এ তিনটি দেশে অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে যে লক্ষ লক্ষ লোক আশ্রয়ের জন্য বাড়ী-ঘর ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। গার্ডিয়ানের হিসেবে এ পর্যন্ত এ ৩টি দেশে কম হলেও ১২শত লোক প্রান হারিয়েছে এবং কমপক্ষে ৪ কোটী মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার ‘সেইভ দি চিল্ড্রেন’ নামের শিশু সেবা সংস্থা বলেছে, এই ভাসান পানি এ অঞ্চলের ১৮ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে ফলে অন্ততঃ ১৮ লাখ শিশু-কিশোর স্কুলে যেতে পারবে না। একই সংস্থার ভারতের বিহার রাজ্যের ব্যবস্থাপক বলেছেন যে, যদি এ সময়ের বন্যাত্রাণ কাজে শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেয়া না হয় তা’হলে শত শত হাজার হাজার শিশু-কিশোর চিরদিনের জন্য শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়বে। তাদের অতীত অভিজ্ঞতা থেকে তারা বলেন, এ ধরনের প্রাকৃতিক দূর্যোগে কোন সময়ই শিশু-কিশোরদের শিক্ষাকে কোনভাবেই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়না ফলে আমরা দেখেছি দীর্ঘসময় স্কুলে যাওয়া থেকে বিরত থাকলে পরে এসব ছেলে-মেয়েদের আর স্কুলে দেখা যায় না। চিরতরে এরা স্কুলশিক্ষা থেকে ঝরে পড়ে। এ অবস্থা আর চলতে দেয়া যায় না। এবারের বন্যা ব্যাপক আকারে ভয়াবহতা নিয়ে এসেছে। এমন উপুর্যপরি বন্যা আমরা আগে দেখিনি। এই বন্যায় যেসব বিদ্যালয় ভেঙ্গে পড়েছে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এগুলোকে মেরামত করে শিশু-কিশোরদের শিক্ষা কার্যক্রম পুনঃরায় শুরু করতে সময় নিলে অগুনতি শিশু-কিশোরের ভবিষ্যৎ সমূহ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে।
আমাদের অনুমান বাংলাদেশে সমপরিমানের শিশু-কিশোর অনুরূপ শিক্ষা সংকটের সন্মুখীন হবে।
আন্তর্জাতিক রেডক্রস ফেডারেশন এবং রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি বলেছে এবারের চতুর্থ দফার বন্যায় বাংলাদেশে ৭৪ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৬,৯৭,০০০ বাড়ী-ঘর বন্যায় বিনষ্ট হয়েছে। ভারতের বিহারে প্রান হারিয়েছে ৫১৪জন মানুষ এবং বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ কোটী ৭১ লাখ মানুষ। উত্তর প্রদেশে ২৫ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং মারা গিয়েছে ১০৯জন। বন্যার কারণে ভূমিধ্বসে নেপালে প্রান হারিয়েছেন ১০০জন।
বাংলাদেশ ও নেপালের সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করছে রেডক্রসের আন্তর্জাতিক ফেডারেশন। অন্ততঃ ২ লাখ চরম ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে খাবার পানি, ময়লা নিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং আশ্রয়ের জন্য দীর্ঘমেয়াদী সহায়তা অতীব প্রয়োজন বলে ওই সেবা ফেডারেশন সকল মহলের প্রতি সহায়তার আবেদন জানিয়েছে।
গত মঙ্গলবারের বন্যায় ভারতের মুম্বাইয়ের রাস্তা বন্যার পানিতে নদী হয়ে যায়। ওই দিন ১২.৭সিএম(৫ইঞ্চি) বৃষ্টি হয় ফলে মুম্বাই শহরের জনজীবন একেবারে স্থবির হয়ে পড়ে। দীর্ঘ সময় ধরে গভীর বৃষ্টিপাতের কারণে মুম্বাই বিমানবন্দর বহু বিমান উড়াল বাতিল করে দিতে বাধ্য হয়। সেখানকার ‘জাতীয় দূর্যোগ মোকাবেলা শক্তি’(The National Disaster Response Force) স্থানীয় পুলিশকে নিয়ে শহরের নিম্নাঞ্চল থেকে বন্যায় ডুবে যাওয়াদের উদ্ধারের জন্য একটি অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে মারাত্মকভাবে দূর্ভোগের সম্মুখীন হয়, গভীর ও ধারাবাহিক বৃষ্টিপাতের কারণে।
প্রবল বৃষ্টির ফলে পানি ঢুকে যায় মুম্বাইয়ের ঐতিহ্যবাহী ‘রাজা এডওয়ার্ড স্মৃতি হাসপাতাল’(King Edward Memorial hospital) এর একটি ওয়ার্ডে। ফলে ডাক্তারকে ওই কক্ষ ছেড়ে দিতে হয়। হাসপাতালের একজন ডাক্তার আশুতোষ দেশাই বলেন, জরুরী বিভাগে বানের দূষিত পানি ঢুকে পড়ায় আমরা দূষণ ও সংক্রমণের ভয়ে আছি। এটি মুম্বাইয়ের ১৮০০ শয্যার একটি হাসপাতাল।
‘মুম্বাই দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইউনিট’(Mumbai’s disaster management unit)র একজন উচ্চমানের কর্মকর্তা জানান ১৫০টি দল সহায়তার কাজ করছে শহরের নিম্নাঞ্চলের আবাসিক এলাকায়। ওই নিচু এলাকার প্রায় ২ কোটী মানুষ প্রতিবছরই বন্যার কোপের সম্মুখীন হয়। কিন্তু এবারের বন্যার ভয়াবহতা আগে কখনও দেখিনি। এই উদ্ধারকাজকে সহজতর করার জন্য আমরা পরিকল্পনা করছি জরুরী ভিত্তিক আশ্রয় নির্মাণের জন্য।