মুক্তকথা: লন্ডন।। ২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী চুরি গিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের রিজার্ভ থেকে ১০কোটি ১০লাখ ডলার যা টাকার হিসাবে প্রায় ৮০০কোটি টাকা। হেকিং এর মাধ্যমে এ চুরি সংগঠিত হয়েছিল । ১৪-১৫ মাস হতে চলেছে আজও তার কোন কুল-কিনারা হয়নি। গেলবারের ২৬শে জুলাই চাঞ্চল্যকর খবর দিয়েছিল দৈনিক যুগান্তর। খবর ছিল ফরাসউদ্দীন কমিটির রিজার্ভচুরির তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে। এর পর গত ফেব্রুয়ারীতেও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম এ নিয়ে সর্বশেষ খবর পুনঃপ্রকাশ করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন আশাব্যঞ্জক কিছু জানা যায়নি।
ওই সময় যুগান্তরের খবর ছিল- চাঞ্চল্যকর রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ৭ কর্মকর্তাসহ তিন প্রতিষ্ঠান জড়িত বলে সরকার গঠিত তদন্ত কমিটি ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে। ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির প্রতিবেদনে বলা ছিল, এ ঘটনায় ঊর্ধ্বতন ২ কর্মকর্তা সরাসরি জড়িত। তারা জেনেশুনেই সহায়তা করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ফৌজদারি দণ্ডবিধিতে পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশও করা হয়েছিল। তখনই লিখা হয়েছিল যে গত দেড় মাসে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তবে তদন্তের সাথে জড়িতরা এসব কর্মকর্তাদের পরিচয় প্রকাশ করতে অস্বীকার করেছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে যুগান্তর জেনেছে, লিখেছিল।
যুগান্তর নিজেদের সূত্রের কথা বলে আরো লিখেছিল যে, ভারতীয় একটি প্রতিষ্ঠান প্রথম থেকেই এ ঘটনায় জড়িত বলে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। ওয়ার্ল্ড ইনফরমেটিকস নামের একটি ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী ভারতীয় নাগরিক রাকেশ আস্তানার নামও দিয়েছিল। এ প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি বিভাগের উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে আসছে লিখেছিল যুগান্তর। রিজার্ভ চুরির ঘটনার পর রাকেশ আস্তানাকে প্রধান আইটি বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। অথচ তাকে ও তার প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে ঘনীভূত হচ্ছে রহস্য বলে পত্রকাটি মন্তব্য করেছিল।
কোন এক সোমবার যুগান্তর প্রতিনিধি কথা বলেছিলেন তদন্ত কমিটির প্রধান ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন এবং কমিটির অন্যতম সদস্য বুয়েটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদের সঙ্গে। ওই সময় তারা বিস্তারিত কিছু বলতে অস্বীকার করলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন, কেন এখনও রিপোর্ট জনসমক্ষে প্রকাশ করা হচ্ছে না?, এ জন্য। তারা ওই সময় যুগান্তর প্রতিনিধিকে বলেছিলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের উচিত দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা। একই সঙ্গে সুপারিশ বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেয়া।
সেদিন সিআইডির তদন্ত সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তা রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তা, আন্তর্জাতিক লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান সুইফট এবং ভারতীয় একটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান জড়িত বলে স্বীকারও করেছিলেন।
দায়িত্বশীল সূত্রের বরাতে যুগান্তর আরো লিখেছিল- পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ড. ফরাসউদ্দিন কমিটি এবং সিআইডির তদন্ত দল রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গাফিলতি ও তদারকির অভাব ছিল- এমন প্রমাণ পেয়েছে। এ ঘটনায় একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ রয়েছে। রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ৫ কর্মকর্তার গাফিলতি ও দায়িত্বহীনতা ছিল। তাদের অসতর্কতা এবং প্রযুক্তি জ্ঞানের অভাবেই হাতছাড়া হয় রিজার্ভের বিপুল অর্থ। এছাড়া আরও ২ জন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা সরাসরি জড়িত। তারা জেনেশুনেই রিজার্ভ চুরিতে সহায়তা করেছেন বলে তদন্তে প্রকাশ পেয়েছে। এছাড়া সুইফট ও ভারতীয় সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড ইনফরমেটিকস– বিপুল পরিমাণ অর্থ সরানোর ক্ষেত্রে কলকাটি নেড়েছে।
ড. ফরাসউদ্দিন যুগান্তরকে তখন বলেছিলেন- গুরুতর অপরাধে অপরাধি কর্মকর্তা দু’জনের বিষয়ে আরও গভীরভাবে তদন্ত করা দরকার। বিশেষ করে ‘ক্রিমিনাল ল’অনুযায়ী তদন্ত জোরদার করা প্রয়োজন। এছাড়া তদন্ত প্রতিবেদন দ্রুত প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছিলেন তিনি।
রিজার্ভের অর্থ চুরি যায় গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি। এ ঘটনার এক বছরেও পুরোপুরি চিহ্নিত হয়নি অপরাধীরা। অর্থ মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি প্রায় বছর আগে প্রতিবেদন জমা দিলেও এখন পর্যন্ত তা প্রকাশ করা হয়েছে বলে আমরা জানতে পারিনি। ১৪ মাসেও এ ঘটনার তদন্ত শেষ করতে পারেনি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ফেরত আসেনি চুরি যাওয়া অর্থের ৬৫ শতাংশ।
গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে চুরি যায় রিজার্ভের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার। ফিলিপাইনের আরসিবিসির পাঁচটি হিসাবের মাধ্যমে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার বেরিয়ে যায়। এর মধ্যে ফেরত পাওয়া গেছে প্রায় দেড় কোটি ডলার। এছাড়া শ্রীলংকায় প্রবেশ করে ২ কোটি ডলার, যা আগেই ফেরত পাওয়া গিয়েছিল।