ঢাকা: রোববার, ২৯শে মাঘ ১৪২৩।। ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই সূচিত হয়েছে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। আমরা অর্জন করেছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা পৃথিবীতে অনন্য গৌরবের অধিকারী। ওপার বাংলা অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের মানুষের ভাষাও বাংলা আর এই ভাষার মাধ্যমেই দুই বাংলার বিনিময় বেড়েই চলছে, সুদৃঢ় হচ্ছে দুই বাংলার মেলবন্ধন। এ কারণে বাংলার ভাষার চর্চায় আরও বেশী মনযোগী হওয়া উচিৎ।
রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সেমিনার কক্ষে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলেক্ষে কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ অ্যালামনাই এসোসিয়েশন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত ‘মননচর্চার আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে বাংলা কি পিছিয়ে পড়ছে?’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে বক্তারা এ কথা বলেন। তারা বাংলা ভাষার ব্যবহার সর্বজনীন করারও দাবি জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মো. মফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অংশ নেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডা. কামরুল হাসান খান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস ও ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. ভীষ্মদেব চৌধুরী।
বক্তারা বলেন, মাতৃভাষা, আমাদের মায়ের ভাষা। মূলত বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনই বাঙালির স্বাধিকার অর্জনের প্রকৃত ভিত্তি। পৃথিবীর ইতিহাসে ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছে একমাত্র বাঙালিরাই। এখন প্রশ্ন হলো, মাতৃভাষার এত বড় গৌরব ও অর্জনকে আমরা কি সঠিক উপলব্ধি করতে পেরেছি? আমরা কি আমাদের ভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে পেরেছি? আমরা কি সর্বত্র বাংলা ভাষার প্রচলন করতে পেরেছি? এ ব্যর্থতার দায়ভার কার? এটা আমাদের সবার। সরকারের পাশাপাশি আমাদের নিজেদেরকেও এর জন্য ভুমিকা রাখতে হবে।
এর আগে সকালে দুই বাংলায় শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা পৌঁছে দিতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে মশাল প্রজ্বলনের মাধ্যমে শুরু হয়েছে ‘সংহতি ২০১৭’।
দুই বাংলার মেলবন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করার লক্ষ্য নিয়ে আজ সকালে ‘সংহতি ২০১৭’ এর শুভ উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। অন্যান্যর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ফ্রেন্ডস অফ বাংলাদেশের সমন্বয়ক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক এ এস এম সামসুল আরেফিন, বাংলাদেশ ভারত ও পাকিস্তান পিপলস ফোরাম বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সাধারণ সম্পাদক ভানু রঞ্জন চক্রবর্তী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের চেয়ারপারসন নজরুলসংগীত শিল্পী লীনা তাপসী খান, সংহতি-২০১৭ এর আহ্বায়ক দীপন দাস, কলকাতা থেকে আগত সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সদস্যরা, ঢাকায় বসবাসকারী কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের প্রাক্তনরা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় ও শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। পরিবেশিত হয় দুই দেশের জাতীয় সংগীত।
উদ্বোধনকালে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আরেফিন সিদ্দিক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মহান ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলা ভাষা সঠিকভাবে শিখতে হবে এবং শুদ্ধরূপে বাংলা বলতে ও লিখতে হবে। বিশ্বায়নের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে অন্য ভাষাও শেখা দরকার, তবে বাংলাকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। উপাচার্য বলেন, বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ভাষাগত সংহতি বিরাজ করছে। দু’দেশের মানুষের মধ্যে বিরাজমান সম্পর্ক আরও নিবিড় করতে এখন মনের সংহতি দরকার।
কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ অ্যালামনাই এসোসিয়েশন, বেঙ্গলি লিটারারি সোসাইটি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে এ নিয়ে তৃতীয় বারের মত মশাল মিছিলের আয়োজন করা হয়েছে। ১৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মশাল নিয়ে পদযাত্রা যাবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৫ ফেব্রুয়ারি মশাল পৌঁছবে যশোর বিশ্ববিদ্যালয়ে।
১৬ ফেব্রুয়ারি শান্তি ও সম্প্রীতির মশাল সীমান্ত পার হয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকে মশাল যাবে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৭ ফেব্রুয়ারি সেখান থেকে পদযাত্রা যাবে বর্ধমানে সেন্ট জেভিয়ার্সে। ১৮ ফেব্রুয়ারি মশাল নিয়ে পদযাত্রা আসবে বারাসতে রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে কলকাতার বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনের অফিসে। সেখানেই দু’দিন প্রজ্বলিত থাকবে মশাল। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সেন্ট জেভিয়ার্সের বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা মিছিল করে মশাল নিয়ে আসবেন তাদের কলেজ চত্বরে। শান্তি, সম্প্রতির এই মশাল ঘিরে ভাষা দিবসে সেন্ট জেভিয়ার্সে সারা দিন ধরে বাংলা ভাষা নিয়ে চলবে নানা অনুষ্ঠান। সূচনা হবে ‘জাবুল্লাস ২০১৭’ অনুষ্ঠানের। বিকেলে দশভুজা বাঙালি অনুষ্ঠানে সম্মানিত করা হবে দশ সেরা বাঙালিকে। (ভিনিউজ থেকে)