বাংলাদেশে বিনিয়োগে উদ্বেগের আর কারণ নেই। যে কোনও দেশ একশো ভাগ নিশ্চিত হতে পারে। বিনিয়োগকারী প্রত্যেক দেশের আলাদা অর্থনৈতিক অঞ্চল বরাদ্দ হবে। সেখানে তাদের প্রকল্প নির্দিষ্ট থাকবে। যাতে বাধা না আসে। এক সংস্থা অন্য সংস্থার কাজে হস্তক্ষেপ না করে। বাংলাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে, সেখানে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে আমেরিকা, রাশিয়া, চিনের মতো বড় দেশ শুধু নয়, ইউরোপের ছোট দেশগুলোও। তারা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে বুঝেছে, বাংলাদেশে বিনিয়োগে লোকসানের আশঙ্কা নেই। বরং যে অর্থ ঢালবে তার অনেক বেশি ফেরতের গ্যারান্টি। ঝুঁকির প্রশ্ন অবান্তর। ভারতের বহু বেসরকারি সংস্থাও বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
বাংলাদেশের এমন শিল্পবান্ধব পরিস্থিতি সব দেশেরই পছন্দ। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় শান্তি প্রতিষ্ঠিত। বিদ্যুৎ সমস্যায় উৎপাদন আর ব্যাহত হয় না। আরও নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে উঠছে। যাতে নতুন শিল্পায়নে বিদ্যুতের অভাব আর না থাকে। পণ্য আমদানি-রফতানিতেও অসুবিধে নেই। যে সব রাস্তা সরু ছিল সেগুলো চার থেকে ছয় লেনের করা হয়েছে। ট্রাক দৌড়চ্ছে ঝড়ের বেগে। রেল যোগাযোগের দুর্বলতা কাটছে। বাংলাদেশ-ভারত রেল চলবে ছ’টি রুটে। লাইন আছে। দরকার একটু সংস্কারের। পণ্যের সঙ্গে যাত্রী যাতায়াতের অসুবিধে হবে না। পদ্মা সেতুটা শেষ হওয়ার অপেক্ষা। তার কাজ চলছে পুরোদমে। পদ্মা সেতু চালু হলে সংযোগের বড় সমস্যা কাটবে। রেল লাইন ছড়িয়ে পড়বে
সারা দেশে। বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে যাবে সারা দেশের শিরায় উপশিরায়। রেল পরিবহণে খরচ অনেক কম। বাণিজ্যে সেটা খুবই বড় কথা। পণ্য আনা নেওয়াতে ব্যয় ছাঁটাই হলে আর চিন্তা কী! লাভের গুড় পিঁপড়েয় খাওয়ার শঙ্কা থাকবে না।
বাংলাদেশ-ভারতের বাণিজ্য অনেকটাই বেড়েছে। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে অনেকটা। ৫৫০ কোটি ডলারের। শুল্ক বাদ দিয়ে বা কমিয়ে ভারতে বাংলাদেশের পণ্য আমদানি না বাড়ালে সেটা কাটবে না। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যে বাংলাদেশি পণ্যের যে বাজার আছে, অন্য কোথাও সেটা নেই। বিশেষ করে ত্রিপুরায় বাংলাদেশের পণ্যের অবাধ গতি। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস থেকে বাংলাদেশের সার, সিমেন্ট ত্রিপুরার চাহিদা মেটাচ্ছে। ভারতের অন্য অংশের থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে ত্রিপুরার সংযোগ রাখার সুবিধে বেশি। অসম-মিজোরামকে সরু সুতোয় ছুঁয়ে ত্রিপুরা। বাকি সব দিকটা বাংলাদেশে ঘেরা। শুধু পণ্য নয়, মানুষের নিত্য যাতায়াতে সম্পর্ক সাবলীল। কলকাতার রসগোল্লার চেয়ে কুমিল্লার রসমালাই বেশি সহজলভ্য।
ভারতের শাড়ির বাজারের ভাগ চাইছে বাংলাদেশ। ঢাকাই জামদানি থেকে মসলিনের কদর ভারতের সর্বত্র। বাংলাদেশের রফতানি তবুও সীমাবদ্ধ। চড়া শুল্কে আটকে যাচ্ছে। দক্ষিণ ভারতের শাড়ি শিল্পে ছেয়ে আছে বাজার। তার কিছুটা বাংলাদেশ পেলে অনেকটা সুরাহা হতে পারে। অটল বিহারী বাজপেয়ী যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী, তখন থেকেই বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত শাড়ি বাজারের দাবিদার। কথাবার্তা অনেক হয়েছে, কাজের কাজ হওয়াটা বাকি। এ বার বাণিজ্যিক যোগাযোগ বৃদ্ধিতে সেই সমস্যা সমাধানের সম্ভাবনা। (আনন্দবাজার পত্রিকা থেকে)