মৌলভীবাজারের অতীত খুঁজে বেরিয়েছি জীবনের বেশীরভাগ সময়। নতুন করে বলার মতো তেমন কিছু আজও পাইনি। এই খুঁজাখুঁজি করতে গিয়ে অতীত কাহিনী লিখার আঁকর হিসেবে যা পেয়েছি তাই এখানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বা পরিসরে তুলে ধরার ইচ্ছা আছে। তারই সূচনায় গত পর্বে যা লিখেছিলাম তারপর-
হারুনূর রশীদ।।
‘করবন্ধ আন্দোলন’ ও ভানুবিলের যুদ্ধ
কে ছিলেন আলী আমজাদ খাঁ :
সেও অনেক অনেক পুরোনো কাহিনী। আজ থেকে প্রায় ৪০০ বছর আগের কথা। সে সময় একদিকে হাওর আর অন্যদিকে পাহাড়, মাঝে মাঝে কলকল ধ্বনিতে প্রবাহিত কতিপয় নদী-নালা ছাড়া মানব বসতি ছিল খুবই অল্প এই অঞ্চলে। তখন মৌলভীবাজার বলে কোন নামও হয়নি, কোন জেলা, মহকুমা কিংবা থানা এসব কিছুই হয়নি। তখনও এ দেশ ইংরেজদের দখলে যায়নি। দিল্লীর মোগল সম্রাটগন তখনও সারা ভারত শাসন করছেন। মাঝে মাঝে ছোট ছোট আফগান রাজ্যের অবস্থান ছিল। তেমনি বাংলা ছিল ইতিহাস খ্যাত সুলেমান খাঁ ও তৎপুত্র দাউদ খাঁ কররানীর শাসনে। সে ১৫৭৬ খৃষ্টাব্দের কথা।
এরা ছিলেন মূলতঃ আফগান বংশোদ্ভুত। তাদেরই এক ওমরাহ্ যাকে নবাব ‘খান জাহান খাঁ’ উপাধি দিয়েছিলেন। তাঁকে আমাদের অঞ্চলে সে সময় ‘কাঞ্জা খাঁ’ বলে সাধারণ মানুষ ডাকতো।
সে সময় দিল্লীর সম্রাট, বিশেষ করে আকবর শাহের আমলে সভাসদের সবচেয়ে গুণী আমীর বা ওমরাহ’কে “খান জাহান খান” উপাধি দেয়া হতো এবং তা একজনকেই দেয়া হতো। মোগলদের সাথে শাসন প্রতিযোগীতায় বাংলার আফগান শাসকগনও তাদের আমীর বা কোন ওমরাহ্’কে একই উপাধি দিতেন। বাংলার রাজা বাদশাহদের রাজসভায় এ ছিল সবচেয়ে উপরের উপাধি। মোগল দরবারেও “খান ই খানান” উপাধি ছাড়া এই “খান জাহান খাঁ” উপাধিই ছিল সর্বোচ্চ।
বাংলায় তখন দু’জন “খান জাহান খাঁ” উপাধি পেয়েছিলেন। একজন ছিলেন সম্রাট আকবরের দেয়া “খান জাহান খাঁ” উপাধিপ্রাপ্ত কিজিলবাস বংশীয় হোসেন কুলি খাঁ। তিনি বাংলার শেষ স্বাধীন বাদশাহ্ দাউদ শাহ্ কররানীকে পরাজিত করেন ১৫৭৬খৃঃ। তিন বছর পর ১৫৭৯খৃঃ তিনি মারা যান। (বাংলার ইতিহাস- ডঃ ব্লকম্যান পৃষ্টা-২২৪/৩০৫)।( ‘মাসির উল ওমারা’ ও ‘রিয়াজ উল সালাতিন’ গ্রন্থেও এসবের বিবরণ আছে।)
“খান জাহান খাঁ” উপাধিপ্রাপ্ত আরো একজন ছিলেন বাংলার স্বাধীন সুলতান দাউদ শাহ কররানীর আমীরুল উমারা ইসমাইল খাঁ লোদী। তিনিই ছিলেন আলী আমজাদ খাঁ’য়ের পূর্বসূরী।(চলবে)