1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
বীর সাঁওতাল জাতির ইতিহাস - মুক্তকথা
শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:১০ পূর্বাহ্ন

বীর সাঁওতাল জাতির ইতিহাস

সংবাদদাতা
  • প্রকাশকাল : বুধবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৬
  • ৮৫৫ পড়া হয়েছে

বীর সাঁওতাল জাতির ইতিহাস :
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ১৮৫৫ থেকে ২০১৬ বাংলাদেশ

উপরের এই শিরোনামে বীর সাওতালদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস লিখেছেন আদিবাসী কল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থার(Adivasi Kolyan O Unnayan Sangstha – AKUS) সভাপতি– মং এ খেন মংমং। “বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক বৈচিত্র পর্ষদ(Bangladesh Cultural Diversity Council – BCDC”) এর প্রতিষ্ঠাতা এই ‘মং এ খেন মংমং’ “আদিবাসী কল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থা’রও তিনি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তিনি বাংলাদেশে “প্রথম আদিবাসী জাতীয় কবিতা উৎসব”এর প্রধান সৃজনকর্তা। তিনি “বৈচিত্র্য কথা”র সম্পাদক এবং “Mass-line Media Center (MMC)” এর একজন তৃণমূল সাংবাদিক বলে তার পরিচিতিতে তিনি লিখেছেন। নিজে একজন আদিবাসী তাই আদিবাসীদের নিয়েই তার পথচলা, সংগ্রাম ও রাজনীতি। তিনি আদিবাসী বহু সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পড়ুয়া বিশেষজ্ঞ। থাকেন ঢাকায়ই। তিনি বাংলাদেশ রাখাইন ছাত্র ইউনিয়নেরও প্রাক্তন সভাপতি।

-মং এ খেন মংমং

[প্রথম পর্ব]

আওয়ামীলীগ সরকারের বাংলাদেশে গত ৬ নভেম্বর ২০১৬ তে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে রংপুর সুগার মিলের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের লোকজন ও মিলের কর্তৃপক্ষ, বিজিবি ও পুলিশের সমন্বয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ৬০০ সদস্যের অভিযানে গুলিবিদ্ধ হয়ে স্থানীয় তিনজন ভূমির স্বত্বাধিকারী প্রান্তিক বীর সাঁওতাল শহীদ হন।

এখানকার সাঁওতালরা বাপ-দাদার ভিটা থেকে প্রথমবার উচ্ছেদ হয়েছিলেন ১৯৬২ সালে। পাকিস্তান সরকার রংপুর সুগার মিলের নামে ১৮৪২.৩০ একর জমি অধিগ্রহণ করে। এই জমিতে এখন আর আখ চাষ হয় না। ওই জমি দালালদের নামে ইজারা দিয়ে এখন আখ চাষের পরিবর্তে অন্যান্য ফসল ফলানো হচ্ছে। ওই সময় রংপুর চিনিকলের জন্য আখ চাষের কথা বলে তাদের জমি কেড়ে নেয়া হয়। যদিও জমি হস্তান্তর চুক্তিপত্রে আখ চাষ না হলে জমি ফেরত দেয়ার শর্ত ছিল। ২০০৪ সালে চিনিকলটি বন্ধ হয়ে গেলে সেখানে আখের পরিবর্তে অন্যান্য ফসলের চাষ শুরু হয়। এ সুযোগে এলাকার প্রভাবশালীদের কাছে জমি লিজ দেয় চিনিকল কর্তৃপক্ষ। তাই, শর্তভঙ্গের কারণে গত বছরের জুন থেকে সেখানে বসতি স্থাপন শুরু করে ১৯৬২ সালে উচ্ছেদ হওয়া সাঁওতাল ও বাঙালিদের উত্তরসূরি প্রায় আড়াই হাজার পরিবার। ৬ নভেম্বর রোববার সেখান থেকে দ্বিতীয়বারের মতো উচ্ছেদ হল তারা। এদিন তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া ছাড়াও চাল-ডাল থেকে শুরু করে কাঁথা-বালিশ পর্যন্ত যা ছিল সবই লুটে নেয়া হয়। এ ঘটনার পর বাঙালি পরিবারগুলো নিজ গ্রাম থেকে বের হতে পারলেও অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন সাঁওতালরা। দ্বিতীয়বার উচ্ছেদ হওয়ার পর জীবন বাঁচাতে এখন তারা দেশ ছেড়েই চলে যেতে চাচ্ছেন।

১৬০ বছর আগে ৩০ জুন আদবাসী বীর – সিধু, কানু, চাঁদ ও ভৈরব এই চার ভাইয়ের নেতৃত্বে সাঁওতালসহ অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।

ভারত উপমহাদেশ তথা বাংলাদেশের আদিবাসী হিসেবে যাদের আখ্যায়িত করা হয, তাদের মধ্যে সাঁওতাল জাতি হল সবচাইতে সরল জীবন-যাপনকারী, অল্পেই সন্তুষ্ট একটি জাতী গোষ্ঠী। অত্যন্ত নিরীহ, শান্তপ্রিয় আদিবাসী সাঁওতাল জাতির সাদামাটা স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীর যোগসাজশে স্থানীয় জমিদার, জোতদার এবং মহাজনরা প্রচণ্ডভাবে ব্যাহত করেছিল। সাঁওতাল জাতির ওপর ক্রমাগত শোষণ, বঞ্চনা, নির্যাতন, দাসত্ব আর নারীর অবমাননা যখন সহ্যের সীমাকে অতিক্রম করেছিল, তখনই শান্তিপ্রিয় সাঁওতালরা ঐক্যে পৌঁছেছিল। গড়ে তুলেছিল দুর্বার আন্দোলন। এই বিদ্রোহে প্রতিবাদী সিধু, কানু, চাঁদ ও ভৈরবসহ প্রায় ১০ হাজার সাঁওতাল প্রাণ দেয়।

সাঁওতাল বিদ্রোহ ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রথম সংঘটিত প্রতিবাদ। ভারতের কৃষক বিদ্রোহের ইতিহাসের এ এক অতুলনীয় অধ্যায়। যে প্রকার শাসন, শোষণ ও উৎপীড়ন থেকে পরাধীন জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামের সৃষ্টি হয় ১৮৫৫ সালের সাঁওতাল বিদ্রোহ সে ধরনের শোষণ অত্যাচারেরই অবশ্যম্ভাবী পরিণতি।

সান্তাল হুলের ইতিহাস হতে জানা যায, দামিন-ই কোহ ছিল সাঁওতালদের নিজস্ব গ্রাম, নিজস্ব দেশ। ১৮৫২ সালে লর্ড কর্নওয়ালিশের প্রবর্তিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে তাদের উপর অত্যাচার বেড়ে গিয়েছিল। ইংরেজ আমলে স্থানীয় জমিদার, মহাজন ও ইংরেজ কর্মচারীদের অন্যায় অত্যাচারের শিকার হয়ে সাঁওতালরা ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে। এটি ছিল তাদের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র গণসংগ্রাম।

১৮৫৫-৫৭ সাল পর্যন্ত এ বিদ্রোহ ভারতীয় উপমহাদেশের বিহার, উড়িষ্যা এবং বাংলাদেশ পর্যন্ত প্রসার লাভ করেছিল। সাঁওতাল বিদ্রোহের তীব্রতা ও ভয়াবহতায় ইংরেজ শাসনের ভিত কেঁপে উঠেছিল। লর্ড ডালহৌসী কতৃক মার্শাল ল’ জারি করেও এ বিদ্রোহ দমানো সম্ভব হয় নি। তখন দুর্নীতিগ্রস্থ কোর্টের আমলা, মোক্তার, পিওন ও বরকন্দাজদের কাছ থেকে ন্যায় বিচার পাওয়ার কোন সম্ভাবনা ছিল না। যদিও মাঝে মাঝে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে ন্যায়বিচারের দেখা মিলত, কিন্তু ভয়ে সাঁওতালরা সেখান থেকে দূরেই থাকতো। বাড়ির কাছে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনস্ত দারোগা বা থানা পুলিশের ন্যায় বিচারের যে রূপ তারা দেখতে পেত তা মৃত্যুরই নামান্তর। কাজেই আদালতে সুবিচার লাভ সাঁওতালদের পক্ষে অসম্ভব ছিল। নিপীড়ন নিষ্পেষণের জালে আটকে যাওয়া এই সহজ সরল মানুষ গুলোর আদতে মুক্তির কোন পথ খোলা ছিল না। ফলে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রচেষ্টা স্বরূপ তারা বিদ্রোহে অংশ নেয়। ১৮৫৪ সালের শেষে আর ১৮৫৫ সালের শুরুতে সাঁওতালরা একটি সম্মিলিত সিদ্ধান্ত নিল যে তারা হিন্দু মহাজনদের আর লাভের বখরা নিতে দেবে না। গরীব দিনমজুর সাঁওতালরা ঠিক করেছিল তারা আর ক্রীতদাসত্ব করবে না।

১৮৫৫ সালের ৩০ জুন,ভাগনদিহি গ্রামে চারশত গ্রামের প্রতিনিধি হিসেবে বিপুল পরিমানে সাঁওতাল এক সমাবেশে উপস্থিত হয়। ইংরেজ ও জমিদার শ্রেণিকে উৎখাত করে স্বাধীন সাঁওতাল রাজ্য প্রতিষ্ঠার শপথ নেয় এ সমাবেশ। এই সমাবেশ থেকেই ইংরেজ সরকার,কমিশনার,দারোগা,ম্যাজিস্ট্রেট ও জমিদার নিকট চরমপত্র প্রেরণ করা হয়। দারোগা ও জমিদারদের নিকট ১৫ দিনের মধ্যে জবাব দাবি করা হয়।

একপর্যায়ে প্রায় ৫০ হাজার সাঁওতালের এক বিশাল মিছিল বড়লাটের কাছে অভাব অভিযোগ পেশ করার উদ্দেশ্যে কোলকাতা অভিমুখে যাত্রা করে। এ অভিযানে সাঁওতালদের সঙ্গে যোগ দেয় অন্যান্য ধর্মের শোষিত, নিপীড়িত ও মেহনতি মানুষ।

সাঁওতালদের এ সমবেত অভিযাত্রার কথা শুনে শোষক শ্রেণির মহাজন জমিদাররা ভীত সন্ত্রস্ত্র হয়ে পড়ে। বিক্ষুব্ধ সাঁওতালরা বহু থানা, ইংরেজ সৈন্যদের ঘাটি, নীলকরদের কুঠি আক্রমণ ও ভস্মীভূত করে। সমগ্র বিহার, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সাঁওতালদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ইংরেজ সরকার এ আকস্মিক বিদ্রোহের প্রচন্ডতায় স্তম্ভিত হয়ে পড়ে।

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT