1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
ভ্রমন- ক্ষনিকের বন্ধুত্ব - মুক্তকথা
বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:২৯ অপরাহ্ন

ভ্রমন- ক্ষনিকের বন্ধুত্ব

সংবাদদাতা
  • প্রকাশকাল : সোমবার, ৯ জানুয়ারী, ২০১৭
  • ১০৩৯ পড়া হয়েছে

হারুনূর রশীদ।।

আমার ঘড়িতে এখন ১-৩৫মি:। ডেনমার্কের পথে প্লেনে উঠে বসেছি। আমার কর্মক্ষেত্র থেকে ৫জনের একটি পর্যবেক্ষক দলের আমিও একজন। আশ্রয়প্রার্থী ভিন্নদেশী ভাষা-ভাষীদের কি কিভাবে আশ্রয় দেয়া হচ্ছে, কি ধরনের সুযোগ-সুবিধা তারা পাচ্ছে এবং অনুরূপধর্মী প্রকল্প বৃটেনে এককভাবে কিংবা যৌথভাবে দু’দেশ মিলে করা যায় কি-না তারই বাস্তবতা স্বচক্ষে অবলোকন করাই ছিল আমাদের সফরের মূল লক্ষ্য। আমাদের দেখার সুবিধার জন্য রাজধানী থেকে বহুদূরে দু’টি ভিন্ন ভিন্ন গ্রামে গিয়ে ডেনিশদের তাদের নিজেদের মত করে সাজানো দু’টি প্রকল্প দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ৩দিনের সফর; তাই প্রয়োজনীয় কাপড়-চোপড় পয়সা-কড়ি নিয়ে দলের সাথে বের হয়ে বাস স্টপের দিকে রওয়ান হলাম। আমাদের ভ্রমন হবে প্রথমে বিমানবন্দর পর্যন্ত বাসে। এর পর বিমানে পাড়ি দিতে হবে সাগরের অপারে। সাগরের অপার থেকে আবার গাড়ীতেই পৌছাতে হবে হোটেলে।

বহু আগে, আমার এক ব্রাহ্মণ বাল্যবন্ধু আমার হাত দেখে বলেছিল, “তুই প্রচুর দেশ ঘুরাঘুরি করবি।” সেদিন ওর কথা কেমন একটা বিশ্বেস হয়নি। আজ ঠিকই বুঝতে পারছি ঘুরাঘুরির মধ্য দিয়েই মনে হয় আমার জীবনায়ুর সমাপ্তি ঘটবে। কাজের কাজ তেমন কিছুই হবে না।

ডেনমার্কে যাচ্ছি একটি সন্মেলনে প্রতিনিধি হয়ে। আমি একটি সংস্থার দু’টি কাউন্সিলের বাঙ্গালী প্রতিনিধি। আমার ঘড়িতে ২ বাজতে পনেরো মিনিট বাকী, এ রকম সময়ে আমাদের প্লেন ছাড়লো। আমার পাশে বসা দুই সাদা মহিলা। একজন যুবতী আর তার পাশে বসা কোন বয়স্ক আত্মীয় ধরনের কেউ। একখানা বই হাতে যুবতী গরমে বেশ একটু উঠবস করছেন। শরীরে কাপড় বলতে একটি বুক বন্ধনী আর নিচের দিকে খুবই ছোট্ট জাতের হাফপ্যান্ট। তাদের সাথে কোন আলাপ তো দূরের কথা, একটু সৌজন্য রক্ষার নিয়মমানা ‘হ্যালো’ বা ‘হাই’ বলাও হয়নি। দু’জনই খুব মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছেন। তাই ইচ্ছে থাকলেও আলাপের সুযোগ পাচ্ছি না। কি আর করা যায়। সিটে বসে সামনের ট্রে নামিয়ে ওদের দেখা-দেখি আমার সাথের বইখানা খুলে বসলাম। কিছুক্ষন পর পাশের যুবতি উঠে বের হতে চাইলেন। তাকে বের হয়ে যাবার সুযোগ দিতে গিয়ে বই পড়ার ট্রেখানা আবার তুলে নিতে হল। তিনি বের হয়ে ‘হোস্টেজ’ কক্ষের দিকে গেলেন। দেখলাম স্টুয়ার্ড একজনের সাথে খুব ভাব জমিয়ে কথা বলছেন। সম্ভবতঃ তারা দু’জন একই কাজের সাথী। কথা বলছেন আর লুকিয়ে লুকিয়ে উভয়ে চুমু খাচ্ছেন। ভাবলাম তিনি তো আবার ফিরে আসবেনই। তা’হলে থাক, আর ট্রে না নামিয়ে হাতে রেখেই বই পড়ি। বেশ দীর্ঘসময় কাটিয়ে তিনি ফিরে আসলেন। তাকে সিটে বসার সুযোগ দিয়ে বইখানা পিঠবেগে ঢুকিয়ে নিলাম। এবার সিটে বসে মাথা এলান দিয়ে দূরদর্শনের বোতামে টিপ দিয়ে পর্দার দিকে চেয়ে একটি হিন্দি ছবি দেখায় প্রয়াসি হলাম। ছবি খুব একটা অপছন্দের ছিলনা, তবে আমাদের ভাষায় একটু বেশী মাত্রায় নগ্ন বা অশ্লীল। প্রায় নগ্ন নায়ক-নায়িকার শরীর দর্শন আর কোলাকুলি, এসব জীবনে তো বহু দেখেছি আর কত দেখবো? তাই চলতি ছবির মাঝেই কখন যে ঘুম এসে অজানা জগতে নিয়ে গিয়েছে বলতেই পারি না।

প্রায় দেড় ঘন্টা ঘুম দিয়ে উঠলাম। পাইলটের ঘোষণা শুনতে পেলাম। আর মাত্র ২৫ মিনিটের মধ্যে আমরা কোপেন হেগেন পৌছাবো। আবার গোপাল হালদারের সেই বইখানা ‘বাংলার ইতিহাস’ যা আগে বের করে পড়েছি বেগ থেকে বের করে নিলাম। ঘুমের আগে একটি পরিচ্ছেদ পড়ে নিয়েছি। ওই পরিচ্ছদেই পড়লাম একসময় প্রাচীন বাংলায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা ছিল। ‘গোপাল দেব’ নামক একজন নির্বাচিত রাজার নাম পড়লাম।

গোপাল হালদারের ওই বইখানা কমপক্ষে ২৫-৩০ বছর আগে ভারতীয় দূতাবাস থেকে সৌজন্যরূপ দান করা হয় আমার পাঠাগারে। সে আরেক কাহিনী। তখন দেশে আমি দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিনিধি। আমার ছোট্ট শহরে একখানা সাপ্তাহিক “মুক্তকথা” প্রকাশ করি। এই বিলেতে সড়ক দূর্ঘটনায় প্রয়াত আমার প্রানাধিক ছোট ভাই কয়ছর রশীদ পিরুনের নামে আমার একটি পাঠাগার শুরু করেছিলাম- “কয়ছর স্মৃতি পাঠাগার” নামে যা আমি খুব আন্তরিকতার সাথে পরিচালনা করতাম। ওই সময়ই একদিন আমাদের সেই সময়কার নির্বাহী সম্পাদক আমার অত্যন্ত পরিচিত শ্রদ্ধেয় হাসান শাহরিয়ার ভাই ফোনে আমাকে জানালেন যে ভারতীয় হাইকমিশনার অফিসের একজন উর্দ্ধতন ব্যক্তিত্ব মৌলভীবাজার সফর করবেন। যতটুকু সম্ভব তার সফরসঙ্গী হতে আমাকে অনুরোধধর্মী নির্দেশ দিলেন। সেই সুবাদে ভারতীয় হাইকমিশনের ওই কর্তাব্যক্তির সাথে আমি সময় দেই। তিনি তার সফরের এক পর্যায়ে আমার “কয়ছর স্মৃতি পাঠাগারটি” স্বচক্ষে দেখে আর এটির ছোট্ট ইতিহাস শুনে আমার ওই পাঠাগারে বেশ কিছু বই উপহার পাঠান ঢাকায় ফেরৎ গিয়ে। উপহার হিসেবে পাওয়া ওই বইগুলির সাথে গোপাল হালদারের “বাংলার ইতিহাস” দুই খন্ড আমার সংগ্রহে আজও আছে।

আমাদের বিমান নামতে শুরু করেছে। বিমান বন্দরের দোরগোড়ায় টিকলুকে পেলাম। টিকলু, পরেশের জামাতা। পরেশ, আমার ছোট ভাই হুমাইউনের সহপাঠী। সে আমারও খুবই পরিচিত ও আমার সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সাথী ছিল। প্রয়াত পরেশ, ছাত্রলীগের একজন নিষ্ঠাবান কর্মী ও নেতা ছিল। পরেশ একবার লন্ডন সফর করেছিল। তখন ওর সাথে আমার দেখা হয়। তখন আমরা ভাল একটা সময় কাটাই। পরেশ দেশ থেকে তার মেয়ের জামাইকে অনুরোধ করেছিল কোপেন হেগেন থেকে ও যেন আমাকে সংগ্রহ করে। তাই টিকলু এসেছে। সে সাড়ে ৩ বছর হয় ডেনিসদের দেশে আছে। চেহারা দেখেই অনুমান করে নিলাম বাঙ্গালী। জিজ্ঞাসা করলাম, তুমিই কি টিকলু? হেসে উত্তর দিল জী।

বিমান বন্দর থেকে বের হয়ে আসলাম। টিকলু আমাকে বারগার কিং এ নিয়ে গেল। রোজা রেখে ছিলাম। বারগার কিং খেয়ে রোজা ভাঙ্গলাম। হালাল জিজ্ঞাসা শুনে ওরা হাসলো। টিকলু বিমান বন্দরে অনেক সময় ছিল। আমাকে যেহেতু আমার দলের সাথে হোটেলে যেতে হবে তাই টিকলু’র সাথে আমি আর যেতে পারলাম না। সে আমাকে ‘ওডেসা’র ট্রেনে তুলে দিয়ে গেল।

রেলগাড়ী চলছে ওডেসার পথে। দূর পল্লার ট্রেন। আমার সোয়া ঘন্টার ভ্রমন। লন্ডনের রেলগাড়ীতে এতো সুযোগ সুবিধে নেই। রেলগাড়ীতেই প্লাগ ঢুকিয়ে মোবাইলে চার্জ দিয়ে দিয়ে কথা বলতে দেখলাম এক ছেলেকে। আমার কাছেই এসে বসলেন কালো এক ভদ্রলোক। একেবারে পাশে বসলেন তিউনিশিয়ান একজন। সম্ভবতঃ ভদ্রলোক রোজা রেখেছেন। তার সামনে বসা ছেলেটি বিয়ার খাচ্ছে দেখে উঠে অন্য আসনে চলে গেলেন। ছেলেটির সাথে আমার খুব জমে উঠলো। কথা প্রসঙ্গে জানতে পারলাম আমার দূরসম্পর্কীয় মামা ডাঃ জিল্লুর রব তার শহরেই থাকেন। সে ডাঃ রবকে চেনে না কিন্তু তিনি যেহেতু আমার আত্মীয় সম্ভবত তাই আমার সাথে আলাপ জমিয়ে তুললো। তার আলাপ শুনতে ভালই লাগছিল। সেই চিরাচরিত বৈষম্যের বিরুদ্ধে তার কন্ঠ। সে বলে যাচ্ছিল সরকার নিজেদের আখের গোছাতেই ব্যস্ত। গরীবের নামে বিদেশী ঋণ নিয়ে সেই টাকা আত্মসাতের পুরানো ব্যবসা। বিদেশীরা জেনে-শুনেই এসব ঋণ দেয়। ওর সাথে আলাপ করতে করতে আমার গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম। এবার আমার ট্রেন থেকে নামার পালা। খুব খারাপ লাগছিল এই ভেবে যে জীবন চলার পথে কত শত মানুষের সাথে দেখা হয়; ক্ষনিকের আলাপে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে উঠে অনেকের সাথে; আবার সব হারিয়ে যায়। ঠিক এমনি ভাবেই আর কোন দিন এই ছেলেটির সাথে দেখা হবে না।

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT