হারুনূর রশীদ।।
ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার পক্ষ সংসদে পাশ পেলেও বৃটেনের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ইউনিয়ন থেকে এই বের হয়ে আসার গুঞ্জনের সুচনাতেই দেশে দ্রব্যমূল্য একদফা সেই যে বেড়ে গিয়েছিল এখনও কমেনি। একই কারণে পাউন্ডের দাম মাত্রাতিরিক্ত কমে গিয়েছে। দেশে বাড়ী-ঘরের সমস্যাতো আছেই এর সাথে যোগ হয়েছে চাকুরীহীনতা। রাস্তায় ঘুমিয়ে থাকা গৃহহীন মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সরকার মানুষকে চাকুরী দিচ্ছে দেখাতে গিয়ে দিনের ৮ঘন্টাকে বলতে গেলে দুইভাগে ভাগ করে কাজ দিয়ে বেকার সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজছে। এতে করে একমাত্র উচ্চবিত্ত ছাড়া কেউই স্বচ্ছন্দ্যে দিনানিপাত করতে পারছেন না।
দেশের ঠিক এই অবস্থায় ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার পক্ষে বিপুল সমর্থন দিয়েছে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সে প্রস্তাব পাশ হয়েছে। শাসক দল কনজারভেটিভ (টোরি) পার্টি এবং প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির মোট ৪৯৮ জন এমপি ব্রেক্সিটকে সমর্থন করেছেন। প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট পড়েছে ১১৪টি। তবে রক্ষনশীল দল এবং শ্রমিকদল, দু’দলই বিদ্রোহের মোকাবেলায় পরেছেন। দুই দলেরই বেশ কিছু এমপি হুইপ অগ্রাহ্য করে ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন।
অবশ্য এই ভোটের ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে বেরিয়ে আসতে বৃটেনের আইনগত কোন বাধা রইলো না। এখন সহজেই লিসবন চুক্তির ৫০ নম্বর ধারা মোতাবেক প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে বৃটিশ সরকারের পক্ষে ব্রেক্সিটের বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু করতে পারবেন। আর চলতি বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে ৫০ নম্বর ধারা প্রয়োগ করা হবে বলে তিনি আগে বলেও ছিলেন।
যুক্তরাজ্য বৃটেনের বৃহৎ রাজ্য ইংল্যান্ডের বেশীর অংশ এমপিগন ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার পক্ষে ভোট দিলেও অন্য বৃহৎ রাজ্য স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলস রাজ্যের ‘পার্টি অব ওয়েলস’ আর লিবারেল ডেমোক্রেট দল বেরিয়ে আসার বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। রক্ষনশীল দলের প্রবীণ ও প্রাক্তন নেতা কেন ক্লার্ক দলের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন অন্যদিকে শ্রমিকদলেরও বহু গুরুত্বপূর্ণ সাংসদ দলের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন।
দেশের এই চিত্রের বিপরীতে ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন ব্রেক্সিটের প্রস্তাব পার্লামেন্টে পাশ হয়ে যাওয়ায় তাঁর মন্তব্যে বলেছেন, ‘‘হতে পারে আমরা ইউরোপীয় ইউনয়িন ছাড়ছি। কিন্তু আমরা ইউরোপ ছাড়ছি না।’’ ব্রেক্সিটের পর নতুন পরিচয় নিয়ে ব্রিটেন আত্মপ্রকাশ করবে এবং ইউরোপের জন্য আরও অনেক বেশি ইতিবাচক অবদান রাখবে বলে তিনি বলেছেন।
তার এই “ইউনয়িন ছাড়ছি-ইউরোপ ছাড়ছি না” মন্তব্যকে অনেকেই উপহাস ও মানুষকে ভেঙ্গচি কেটে কথা বলার সাথে মিলিয়ে দেখছেন।
লন্ডন: শুক্রবার, ১৯শে মাঘ ১৪২৩