আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের মধ্য থেকে প্রথম দফায় প্রত্যাবাসনের জন্য এক হাজার ৬৭৩ পরিবারের ৮ হাজার ৩২ জন রোহিঙ্গার একটি তালিকা মিয়ানমারকে হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ। পরিচয় যাচাই-বাছাই শেষে এ সব রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে মিয়ানমার সরকার। এ ছাড়া দুই দেশের সীমান্তের মাঝামাঝি নো-ম্যানস ল্যান্ডে আশ্রয় নেয়া ছয় হাজার রোহিঙ্গাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য মিয়ানমারে আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি দুই দেশের মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট জেনারেল কিউ সোয়ের সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এ সব জানান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে জাতিসঙ্ঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের ওপর বাংলাদেশ গুরুত্বারোপ করেছে। এ ছাড়া মিয়ানমার সীমান্তের অভ্যন্তরে অবস্থিত ইয়াবা তৈরির ৪৯টি কারখানা বন্ধের জন্য সহায়তা চাওয়া হয়েছে। মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এতে ইতিবাচাক সাড়া দেন।
আসাদুজ্জামান খান কামালের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীসহ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও সংশ্লিষ্ট দফতরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পনেরো সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ ও আন্তরিক পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। তারাও ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এসেছিল। আমরা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার তালিকা করেছি। মিয়ানমার পরিবার অনুযায়ী তালিকা চেয়েছিল। আমরা আজকে এক হাজার ৬৭৩টি পরিবারের আট হাজার ৩২ জনের তালিকা করে তাদের দিয়েছি। তারা এটি গ্রহণ করেছেন। পরিচয় যাচাই-বাছাইয়ের পর তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে।
মিয়ানমারের রাজধানী নেইপিডোতে অনুষ্ঠিত প্রত্যাবাসন বিষয়ক সর্বশেষ যৌথ কারিগরি কমিটির (জেডাব্লিউজি) বৈঠকে রোহিঙ্গাদের পরিচয় যাচাই-বাছাই ও প্রত্যাবাসনের জন্য দুটি পৃথক করিগরী কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। এ বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতি সপ্তাহে ১৫ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু মিয়ানমার তাদের সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবার ও রোববার ছাড়া প্রতিদিন ৩০০ করে সপ্তাহে সর্বোচ্চ দেড় হাজার রোহিঙ্গা ফেরত নিতে সম্মত হয়েছে।
‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ অনুযায়ী, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ পাঁচটি ট্রানজিট ক্যাম্প স্থাপন করবে। রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করার জন্য মিয়ানমার প্রাথমিকভাবে দুটি অভ্যর্থনা কেন্দ্র নির্মাণ করবে। উত্তর রাখাইনে হ্লা পো খাউং এলাকায় রোহিঙ্গাদের জন্য অস্থায়ী শিবির গড়ে তোলা হবে। প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে সীমান্তের জিরো লাইনে অবস্থিত রোহিঙ্গাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
গত ২৩ নভেম্বর মিয়ানমারের রাজধানী নেইপিডোতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সমঝোতা স্মারক(এমওইউ) সইয়ের মাধ্যমে রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়। এই রূপরেখা বাস্তবায়নের জন্য ১৯ ডিসেম্বর ঢাকায় দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিবদের নেতৃত্বে জেডাব্লিউজি গঠন করা হয়। আর মাঠ পর্যায়ে সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে ১৬ জানুয়ারি নেইপিডোতে জেডাব্লিউজি’র প্রথম বৈঠকে ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট সই হয়। এমওইউ অনুযায়ী দুই মাসের মধ্যে, অর্থাৎ গত ২৩ জানুয়ারি থেকেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু উভয় পক্ষের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির অভাবে তা শুরু করা যায়নি।