হারুনূর রশিদ।।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নিয়ে বিশ্বব্যাপী সংবাদ মাধ্যমে লেখালেখির এক হুলুস্থুল পড়ে গেছে। অনেক সময় মনে হবে এ যেনো সংবাদ মাধ্যমের উৎসবের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে, যা ভাষা জানা আছে তা দিয়েই ট্রাম্পকে নিয়ে লিখে চলেছেন। তারা একবারও কি ভেবেছেন যে যদি তাদের মনের মত করে সাজানো ওই কথাগুলি সত্যি সত্যি বাস্তব হয়ে উঠে তখন দুনিয়ার অবস্থাটা কি দাঁড়াবে? যদি সত্য সত্যই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবৈধ বিদেশীদের আমেরিকা থেকে বের করে দিতে হুকুম জারী করে দেন তখন কি হবে? যে ভাবে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলো সাজিয়ে গোছিয়ে আকথা কুকথা লিখে যাচ্ছেন তাদের কথায় যদি উস্কে উঠে ঠিকই এধরনের কাজ করে বসেন তখন কি সংবাদ মাধ্যম পারবেন প্রেসিডেন্টের হুকুম ফেরাতে। পারবেন না। আমাদের মনে হয় পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যম(অবশ্যই সকলে নয়) ও তাদের কিছু কিছু অপশ্চিমা দোসর তাদের নিজেদেরই মনের গভীরে লালিত স্বপ্নের কথাই বলছেন যাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবশেষে সে পথেই হাটেন। অনেক কথা আছে বেফাঁশ। যুক্তির উপর ভর করে কিংবা অনুমানের উপর সোয়ার হয়ে আগাম বলা সঠিক নয়। বরং বেফাঁশ কেউ বলে ফেললে তাকে আড়ালে বুঝানো যে এটা সঠিক নয়। আর এ কাজে সংবাদ মাধ্যমের দায়ীত্ব অপরিসীম। এখানেই সংবাদমাধ্যমের তথা সাংবাদিকের মেধা আর শিক্ষার কৃতিত্বের পরিচয়। সংবাদ মাধ্যম বা সংবাদ পত্রের বিষয় শুধু সমস্যার ভাগাড় ছবিসহ তোলে ধরা নয় তার সঠিক কার্য্যকর সমাধানও বাতলে দেয়া। এখানেই সংবাদ মাধ্যম বা সংবাদপত্র সমাজের আয়না।
ট্রাম্পও কম যান না। তিনিও যখন যা খুশী বলে চলেছেন। প্রেসিডেন্ট বলে কোন রাখ-ঢাকেরও দরকার মনে করেন না। তার মনে রাখা উচিৎ তিনি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত দুনিয়ার সেরা গণতান্ত্রিক দেশের প্রেসিডেন্ট। এখনও যে দেশ বিশ্বের প্রথম কাতারের দেশগুলির অন্যতম আর দুনিয়ার নেতৃত্বে আছে সেই দেশের তিনি কর্ণধার। তার দেশে হাজারো সমস্যা থাকতেই পারে। তাই বলে যা’খুশি তাই বলে দেয়া সমস্যাকে সারায় না বরং আরো প্রকট করে তুলে। তার মনে রাখা উচিৎ তার কথা শুধুই আদেশ নয় বহু ক্ষেত্রে আইন হয়ে যায়। এই বিষয়গুলো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে মনে করিয়ে দেয়াই এখন সংবাদ মাধ্যমের কাজ। শুধু সমালোচনা নয় সমাধানের পথ দেখিয়ে দেয়া। ওই যে কথায় আছে না, বৃহৎ স্মরণীয় কিছু করতে হলে কোন না কোন স্থান থেকে কেউ না কেউকে তো শুরু করতেই হবে। প্রয়োজনে বেড়ালের গলায় ঘন্টা তো বাঁধতেই হবে।
সুদীর্ঘকালের অভ্যাস, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হয়তো এখনও বদলায়নি। এভাবে হঠাৎ করে অনেককিছুই বদলায় না। সে আচার-ব্যবহার হোকা কিংবা ভেশ-ভোষা হোক। হতেই পারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পুরানো কূটনৈতিক পথে হাটতে চান না। তিনি যা সঠিক বুঝেন সেই কথাটি কূটনীতির মারপ্যেচ দিয়ে বলার চেয়ে ধরাম করে বলে দেয়াকে পছন্দ করেন। এওতো হতে পারে যে এটিই তার নব্য কূটনীতির কোন অনুশীলন। এক্ষেত্রে রাগের যেমন কোন স্থান নেই আকথা কুকথা বলে একজনকে হেনস্তা করারও প্রয়োজনীয়তা অবান্তর। এ অনেকটা পিঁপড়ের ঢোলের নিচে দাঁড়িয়ে কাঠি দিয়ে ঢোল ফুটো করে দেয়ার আহাম্মকি ছাড়া আর কিছু নয়।
নামকরা একটি বাংলা সংবাদপত্র লিখেছেন যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক রাষ্ট্র প্রধানকে বলেছেন- “আপনার শরণার্থীদের বোঝা আর টানতে পারব না।’’ এ কথায় না-কি সেই প্রধানমন্ত্রী অপমানিত হয়েছেন। এখানে অপমানের কিছু দেখি না। যাহা বাস্তব তাহাই ট্রাম্প বলেছেন। আমেরিকার অর্থনীতি তথা বিশ্ব পুঁজিবাদী অর্থনীতির এখন মরণদশা। সরকাত চলছে! এ অবস্থায় ট্রাম্প সাহেবের উদ্দেশ্য দুনিয়াকে একটু কাগুজে বাঘের ধমকি-ধামকি দিয়ে নিরুপদ্রবে ঘরে উঠার প্রয়াস মাত্র।
লন্ডন: শনিবার ২১শে মাঘ ১৪২৩