“বিচার কর্মের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয় ও
সহযোগিতা গতিশীল বিচার ব্যবস্থার পূর্ব শর্ত ”
– প্রধান বিধানতান্ত্রিক বিচারক
মৌলভীবাজার দফতর থেকে: সোমবার ২৯শে আগষ্ট ২০১৬।। গত জুলাই মাসের শুরুতে মৌলভীবাজারে সর্বমোট ৭০১৪টি মামলা বিচারাধীন ছিল আর ১লা আগষ্ট পর্যন্ত ৬৯৮৭টি গ্রেফতারী পরোয়ানা, ১৩০টি ক্রোকী পরোয়ানা, ৮১১টি সাক্ষী পরোয়ানা ও ৯৭৩টি সাজা পরোয়ানা মুলতবী হয়ে আছে। তথ্যগুলো পাওয়া গেছে গত ২০শে আগষ্ট শনিবার মৌলভীবাজার জেলার “প্রধান বিধানতান্ত্রিক বিচারক” (চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট) আদালতের উদ্যোগে সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত “পুলিশ ও বিচারতন্ত্র” (পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসী) সন্মিলনী অনুষ্ঠান থেকে। ওই সন্মেলনে “প্রধান বিধানতান্ত্রিক বিচারক” (চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট) এ কিউ এম নাছির উদ্দীন এ তথ্য উপস্থাপন করেন। অবশ্য কেনো এমন হয়েছে তার কোন ব্যাখ্যা ছিল না তার বক্তব্যে। তার প্রদত্ত তথ্যে আরো জানা যায় যে ওই সময় পর্যন্ত নতুন মামলা দায়ের হয়েছিল ৬৩১টি এবং জুলাই মাসের শুরু পর্যন্ত বিচার নিষ্পত্তি হয়েছে মোট ৫৪৬টি মামলার। এই নিষ্পন্ন মামলা গুলোর মাঝে পাঁচ বছরের পুরানো মামলার সংখ্যা ছিল ৬৪টি।
উক্ত কনফারেন্সে এসবের উল্লেখ করে জনাব এ কিউ এম নাছির উদ্দীন বলেন যে, সাজাপ্রাপ্ত বা বিচারাধীন মামলার আসামী আদালতের বাইরে থেকে একদিকে যেমন নতুন নতুন অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে অন্যদিকে বিচার ব্যবস্থা ও সরকারের অন্যান্য সংস্থা সম্পর্কে মানুষের আস্থার সংকট দেখা দিচ্ছে। তাই বিভিন্ন পরোয়ানা জারীর ক্ষেত্রে আরও তৎপর হওয়ার জন্য তিনি বিভিন্ন থানা থেকে আগত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করেন।
সন্মিলনীর শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে জনাব এ.কিউ.এম. নাছির উদ্দীন বিগত সভার সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নের অগ্রগতি তুলে ধরে মৌলভীবাজার প্রধান বিধানতান্ত্রিক বিচারক আদালতে বিচারাধীন মামলা সমূহের সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য বিচারক ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের কর্মকর্তাদের দিক নির্দেশনার বিষয়ে আলোকপাত ও নির্দেশনা দেন।
বিজ্ঞ প্রধান বিধানতান্ত্রিক বিচারক(চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট) দ্রুততা ও দক্ষতার সাথে আইনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত কাজ সম্পন্ন করত: প্রতিবেদন দাখিল, যথাসময়ে মামলার সাক্ষী উপস্থাপন নিশ্চিত করত: তাদের নিরাপত্তা বিধান, গ্রেফতারের পর আইনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আদালতে সোপর্দ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে কার্যকর ভূমিকা পালনের অনুরোধ করেন।
কনফারেন্সে উপস্থিত অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, সিভিল সার্জন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, পিবিআই, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেটগণ সহ বক্তাগণ যথাসময়ে সাক্ষী উপস্থাপনে পুলিশ বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগের ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে সাক্ষীর উপস্থিতি পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং মামলা নিষ্পত্তির হার বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশেষত: পুরাতন মামলা অধিক হারে নিষ্পত্তি হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।
এছাড়াও বক্তাগণ দ্রুত গ্রেফতারী পরোয়ানা তামিল ও সমন জারীর ব্যবস্থা গ্রহণ, তদন্ত কার্যে বিদ্যমান সমস্যা সমাধান, তদন্তে দীর্ঘসূত্রিতা পরিহার, হয়রানী বন্ধ, চগ রিপোর্ট ও গঈ প্রদানের ক্ষেত্রে সর্তকতা অবলম্বন, নকলখানা হতে স্বল্পতম সময়ে নকল সরবরাহের ব্যবস্থা, মামলার আলামত সংরক্ষণ ও সঠিক নিয়মে নিষ্পত্তি, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি ও নিষ্পত্তিকৃত নথি দ্রুত রেকর্ডরুমে প্রেরণ, আদালত ও বিচার সংশ্লিষ্ট সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ সহ নানাবিধ বিষয়ে তাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামতসমূহ কনফারেন্সে তুলে ধরেন।
বিভিন্ন থানা থেকে আগত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যান্য উপস্থিতি কর্তৃক উত্থাপিত বিভিন্ন সমস্যার আইনী সমাধান, প্রশ্নোত্তর প্রদান এবং পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণ করতঃ সমাপনী বক্তব্যে বিজ্ঞ প্রধান বিধানতান্ত্রিক বিচারক(চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট) বলেন যে, ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থায় বিচার প্রশাসন, নির্বাহী প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগ একে অপরের পরিপূরক। মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধি ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আন্তরিকতা ও সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগকে একযোগে ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে বিচার প্রার্থী মানুষের কল্যাণে নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হবে। এক্ষেত্রে কারও অবহেলা কাম্য নয়। নারীর অধিকার, কারাবন্দিদের অধিকার, সংখ্যালঘুদের অধিকার সর্বোপরি মানবাধিকার সমুন্নত রেখে বিচারপ্রার্থী জনগণের কাঙ্খিত ন্যায় বিচার দ্রুততম সময়ে নিশ্চিতকরণ ও আইনের শাসন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয় ও সহযোগিতা বৃদ্ধির উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
জেলার “প্রধান বিধানতান্ত্রিক বিচারক” (চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট) এ.কিউ.এম. নাছির উদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সন্মিলনীতে জেলার অতিরিক্ত জেলা “ফৌজদারি বিচারক” (ম্যাজিস্ট্রেট) মোঃ ফারুক আহমদ, সিভিল সার্জন সত্যকাম চক্রবর্তী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ খাইরুল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, পিবিআই, অতিরিক্ত প্রধান বিধানতান্ত্রিক বিচারক (এডিশনেল চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট), উচ্চ বিধানতান্ত্রিক বিচারক (সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট) ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটগণ, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, সহকারী বন সংরক্ষক, আবাসিক মেডিকেল অফিসার, প্রবেশন অফিসার, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী, গণপূর্ত বিভাগ, ডেপুটি জেলার, জেলা কারাগার, জেলা আইনজীবী সমিতি, স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর, এসিস্টেন্ট পাবলিক প্রসিকিউটরবৃন্দ, কোর্ট ইন্সপেক্টর, ইন্সপেক্টর, পিবিআই এবং জেলার বিভিন্ন থানা, জেলা গোয়েন্দা শাখা ও রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।