লন্ডন: রোববার, ৭ই ফাল্গুন ১৪২৩।। “মন্ত সেইন্তে-ওদাইল” ফ্রান্সের আলসেইচ অঞ্চলের প্রাচীণতম একটি সুবিখ্যাত মঠ। জন্ম থেকে শুরু করে আজ অবদি রহস্যে রহস্যে ডুবিয়াই আছে। একটি গোপন সুরঙ্গ পথ আর হাজার খানেক অতি প্রাচীণ মহামূল্যবান পুস্তক লাপাত্তা হওয়ার ঘটনা পর্যন্ত বিগত ১৩০০ বছেরর আয়ূতে কত রং বেরংএর ঘটনা আর কিচ্ছা কাহিনী এ ভরা তা গুনে শেষ করার মত নয়।
“ওদাইল” বলে যে নামে মঠটি পরিচিত তার একটি মুখরোচক কাহিনী রয়েছে। “ওদাইল” উপরে উল্লেখিত, ফ্রন্সের ‘আলসেইচ’ অঞ্চলের ‘ডিউক’এর অন্ধ কন্যার নাম ছিল। জন্মান্ধ এই কন্যা সন্তানের জন্য ‘ডিউক’ এর অন্তর্জালার সীমা ছিল না। কিন্তু মা তার নাড়ি কাটা সন্তানকে কি করে ফেলে দেবেন। জননী তাই অন্ধ মেয়েকে খুবই কাছে ‘পালমা’ শহরের এক কৃষক পরিবারে বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। ‘ওদাইল’ সেখানেই বড় হতে থাকেন। কাহিনী আছে, একদা এক রাতে, এক ফেরেস্তা এসে রিজেন্সবার্গ এলাকার সন্ন্যাসী ‘এরহার্দ’কে পথ দেখিয়ে পালমায় নিয়ে এলো। সন্ন্যাসী ‘এরহার্দ’ ‘ওদাইল’কে গোসল করিয়ে খৃষ্টান ধর্মের সবক দিলেন। খুবই রহস্যজনকভাবে ‘ওদাইল’ তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেল।
সাথে সাথে এ চাঞ্চল্যকর খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো। ‘ওদাইল’ এর ছোট ভাই ‘হুগেস’ এসে দেখে গেলো ঠিকই তার বোনের দৃষ্টি শক্তি ফিরে এসেছে। ‘ওদাইল’ ভাইয়ের সাথে মা-বাবার কাছে ফিরে গিয়ে আনন্দে দিন কাটাতে লাগলো।
এদিকে, ‘ওদাইল’কে বাড়িতে দেখে বাবা ‘ডিউক’ রাগে অগ্নিশর্ম্মা হয়ে ভুল বসতঃ ‘হুগেস’কে খুন করে বসলেন। ‘সন্ন্যাসী ওদাইল’ তার ভাইকে পুনর্জীবন দিলেন এবং পালিয়ে রাইন নদীর ওপারে চলে গেলেন। ক্রোধান্বিত বাবা ছেড়ে দেবার পাত্র নন্। কন্যা ‘সন্ন্যাসী ওদাইল’ এর পিছু ধাওয়া করলেন। ‘ওদাইল’ পালিয়ে নিকটস্থ খাড়া পাথরের পাহাড়ে উঠে গেলেন দৈবভাবে। কিন্তু তার ‘ডিউক’ বাবা উঠার চেষ্টা করতে গিয়ে পড়ে গেলেন নিচে। পতিত পাথরের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হল শরীর মারা না গেলেও যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছিলেন।
মেয়ের জাত হল মায়ের জাত। মমতাময়ী কন্যা ‘সন্ন্যাসী ওদাইল’ বাবার অবস্থায় মনে মনে কেঁদে উঠলেন। তারাতারি নিচে নেমে এসে বাবাকে বাড়িতে পাঠাবার ব্যবস্থা করে দিলেন। নিজে গিয়ে সেবা শুশ্রুষা দিয়ে বাবাকে সুস্থ করে তুললেন। সুস্থ হয়ে বাবার মন ফিরে এলো। তিনি কন্যাকে আবার মনের দিক থেকে গ্রহন করে নিলেন। সন্ন্যাসী কন্যার সন্মানে তার নামে বাবাই ‘ভজেস’ পাহাড়ের চূড়ায় নির্মাণ করে দিলেন “মন্ত সেইন্তে ওদাইল এবে”। সে অনুমান ৬৯০ সালের কথা। সেই থেকে ‘সন্ন্যাসী ওদেইল’ ওই মঠের মোহান্ত বা অধ্যক্ষ হিসেবে তার মৃত্যু অবদি মঠ পরিচালনা করে গেছেন। ‘সন্ন্যাসী ওদেইল’ ৭২০ খৃষ্টাব্দে মারা যান। তিনি ও তার বাবা উভয়কে মঠের ভেতরেই সমাধিস্ত করা হয়।
এই মঠের ইতিহাস খুবই চমৎকার চমৎকার সব ঘটনায় সমৃদ্ধ। মঠটি বহুবার ধ্বংস হয়েছে। একবার সেই ১৫৭২ সালে বাজ পড়ে(বজ্রাহত) ধ্বংস হয়। প্রতি দফায়ই এটি পুনঃনির্মাণ করা হয় এবং এভাবেই আজ অবদি সেবা পরিসেবা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
২০০০ সাল থেকে শুরু হল মঠের পাঠাগার থেকে প্রাচীন প্রাচীন দামী পুস্তক খোয়া যাওয়া। কে নেয়, কোথায় যায়, কিভাবে খোয়া যায় কোন হদিস করতে পারে না মঠ কর্তৃপক্ষ। সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করে মঠের কিছু সন্ন্যাসী-সন্ন্যাসিনীর উপর। অনেকেই মঠের পাঠাধিকারীক ফাদার এলেইন দোনিয়াসকে সন্দেহের চোখে দেখেন। পাঠাগারের তালা বদল করা হলো, জানলা বন্ধ করে দেয়া হলো, চৌকিদার রাখা হলো কিন্তু কোন কিছুই কাজে আসলো না। বইচুরি ঠিকই হতে থাকলো।
কত ধরনের ওদল বদল করা হলো কিন্তু বই চুরি থামানো গেলো না। কোন সময় একটি বই আবার কখন কখনও ডজনখানেক বই একই সাথে চুরি যায়। চুরি যায় দামী দামী সব বই। রহস্যে রহস্যে সকলের মনে ভয়ভীতির সঞ্চার হতে থাকলো। এটি দস্তুর মত এক মহা রহস্যে রূপ নিলো। পাঠাগারের চাবি যার কাছে থাকে সেই ‘কন্ভেন্ট’ এর কাছ থেকে চাবি অন্যের হাতে তুলে দেয়া হলো। এরপর আরো দুবার বদলানো হল। কিছু কালের জন্য চুরি বন্ধ রইলো কিন্তু আবার গত শরৎ থেকে শুরু হলো চুরি। এ অবস্থার ফলে অনেকেই এখন ভাবছেন যে খুব সম্ভবতঃ মঠের ভেতরে প্রবেশের কোন গোপন সুরঙ্গ পথ রয়েছে হয়তো?