1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
সাহিত্য অনুশীলন - মুক্তকথা
বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪৮ পূর্বাহ্ন

সাহিত্য অনুশীলন

রুমা বেগম॥
  • প্রকাশকাল : সোমবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২২
  • ৯৮০ পড়া হয়েছে

বাবাকে নিয়ে কিছু কথা

রুমা বেগম

বাবাকে নিয়ে কখনোই কিছু লেখা হয়নি। মাঝে মধ্যে শখের কবিতা লেখি কিন্তু কেনো জানি বাবাকে নিয়ে একটি কবিতাও লেখা হয়নি। আজো বলা হয়নি বাবাকে নিয়ে ভালোবাসার স্মৃতিময় কথা। বাবা আমাকে আদর করে মা বলে ডাকতেন। অফিস থেকে ফিরেই আমাদের ভাইবোনদেরকে নিজ হাতে গোসল করিয়ে খাইয়ে দিতেন। অবসর সময়ে আমাদের নিয়ে বেড়াতে যেতেন।

বাবা আমাদের সাথে কখনো রাগ করে কথা বলেননি। মনে পড়ে একদিনের কথা। তখন আমি ষষ্ঠ শ্রেণীর বর্ষ শেষের ছাত্রী। স্কুলে পরীক্ষা চলছিল। সে সময় আমি কিছুটা ভারী শরীরের ছিলাম। পরীক্ষা শেষে শ্রেণী কক্ষ থেকে বের হয়ে আসার সময় আমার এক সহপাঠি আমাকে- ” ‘ভটলি'(মোটা) পরীক্ষা কেমন দিলি” বলে ব্যঙ্গ করায় তাকে ধাক্কা দেই। ধাক্কা খুব জোরে হওয়ায় সে ব্রেঞ্চের উপর পড়ে গিয়ে দুঃখ পায়। বাবা তখন আমাদের স্কুল পরিচালনা পর্ষদের সদস্য। স্কুল থেকে বাবাকে নালিশ দেয়া হয়। বাবা ঘরে ফিরে প্রথমে কিছুটা মনোক্ষুন্ন হয়ে একটু ধমকের সুরে আমাকে কাছে ডেকে নেন। বাবাকে এতো মনোক্ষুন্ন অবস্থায় কোনদিনই দেখিনি। দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম যে ওই মেয়েটি বাবাকে নালিশ দিয়ে কিছু বলেছে। প্রথমে কিছুটা ভয় পেয়েছিলাম কিন্তু পরক্ষনেই বাবার কথা শুনে সাহস ফিরে পাই। বাবা কাছে ডেকে নিয়ে বললেন-“আমাকে স্কুল থেকে তোমার বিরুদ্ধে নালিশ দিয়েছে। তুমি না-কি একটি মেয়েকে ধাক্কাদিয়ে ব্রেঞ্চের উপর ফেলে দিয়েছো। মেয়েটি মাথায় খুব ব্যথা পেয়েছে।” সহপাঠির সাথে এমন কাজ করা কি তোমার ঠিক হয়েছে? আমাকে লজ্জ্বা পেতে হলো না? বাবার এমন আদুরে কথায় সেদিন মনে মনে লজ্জ্বাই পেয়েছিলাম। কোন কথা বলতে পারছিলাম না। বাবা আদর দিয়ে বললেন-“মা রে এমন কাজ আর করোনা। সহপাঠীতো বন্ধু। নয় কি?” আর ওমন করিসনে মা। সেদিন মনে মনে আমি খুব আশ্চর্যবোধ করেছিলাম। আমি ধরেই নিয়েছিলাম বাবা অন্ততঃ মন্দকাজ করেছি বলে কিছুটা হলেও গালাগাল দিবেই। কিন্তু বাবা কিছুই বললো না বরং মায়ার সুরে শুধু বুঝিয়ে দিলো এমন কাজ ঠিক না। আর যেনো না করি। বাবার সেদিনের সেই আদুরে শাসন আমার জীবনবোধকে ভিন্ন এক মাত্রা দিয়েছিল। যা আজও আমাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যায়। পথ হারাতে দেয় না।

আমাদের ভাইবোনদেরকে রাতে পড়াতে বসানো ছিল বাবার দৈনন্দিন কাজের একটি। এখনো মনে পড়ে একদিন স্কুল শেষে বাড়ীতে না গিয়ে বাবাকেও কিছু না বলে আমার এক অসুস্থ বান্ধবীকে দেখতে গিয়েছিলাম। একা যাইনি সাথে ছিল আরো তিনজন বান্ধবী। যখন আমরা বাসে করে রওয়ানা দিলাম তখন আমাদের গাড়ির পেছনের গাড়িটা রাস্তায় এক্সিডেন্ট করেছিলো। তখনো বাবা জানতেননা যে আমি কোথায় আছি। স্কুল ছুটির পর বাবা যখন আমাকে নিতে আসলেন তখন স্কুলে না পেয়ে বাড়িতে গিয়ে মায়ের সাথে রাগারাগি করলেন। দুপুরে বাবা খবর পেলেন রাস্তায় একটা বাস দূর্ঘটনা ঘটিয়েছে এবং তার মধ্যে নাকি আমিও ছিলাম। খবর পেয়ে বাবা যখন বাড়ি থেকে বের হবেন ঠিক তখনই আমি বাড়িতে হাজির হলাম। বাবা আমাকে দেখে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন। পরক্ষনেই হাসি মুখে বললেন কোথায় ছিলিরে মা? আমার মাথায় হাত রেখে আদর করে বললেন, আমাকে না বলে আর কখনো কোথাও যাসনে মা। দুশ্চিন্তায় মাথা ধরে যায় যে।

আরো দশজন বাবার মত আমাদের বাবার কাছেও আমরা ভাই-বোন ছিলাম চোখের মনি। সবসময় হাসি মুখে আমাদের ভাইবোনদের যত্ন করেছেন। আজ বাবা নেই কিন্তু বাবার সেই আদর-ভালোবাসা কখনো ভুলতে পারিনা। বাবা হারানোর এই যে কষ্ট তারাই বুঝবে যারা বাবাকে হারিয়েছে। বাবা হারানোর কষ্ট আর বেদনা নিয়ে বাবার স্মৃতিগুলোকে আঁকড়ে ধরেই সারাটা জীবন কাটাতে হবে। ভালবেসে অনেক পুরুষের সঙ্গী হতে পারবো কিন্তু বাবা পাওয়া যাবে না। সন্তানের কাছে বাবা শুধুই মায়া নয়, বাবা হলেন এক দূর্জয়ী সাহস, মহা আশ্রয় ও ভরসা। বাবা আছেন এ কথাটি সন্তানকে যে সাহস যোগায় তা আর অন্য কিছুতেই হয় না। বাবা নেই মানেই কেউ আর বটবৃক্ষের ছায়া নিয়ে আমার পাশে দাঁড়াবেনা, মাথায় হাত রেখে কেউ বলবেনা “আমি আছি তো” চিন্তা করিসনা। বাবারা সবসময়ই শুধু দিয়েই যায়। বাবাদের জন্মই যেনো শুধু দেয়ার জন্য।

যেদিন আমার বাবা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন সেদিন থেকেই জীবনের শূন্য খাতায় লেখা শুরু হয়ে গেছে কষ্টের ইতিহাস। বাবা ফিরে গেলেন আকাশের নক্ষত্র হয়ে। বাবা শব্দের ভেতরে কতো ত্যাগ, কতো ভালোবাসা লুকানো তা প্রতিটি সন্তান ভালো করে জানে। একজন সন্তানের পথ প্রদর্শক তার বাবা। প্রত্যেক বাবারা হাজারটা শারীরিক মানসিক সমস্যায় ভুক্তভোগী হয়েও সংসারে পরিবারের সাথে ভালো থাকার অভিনয় করতে পারে। সন্তানের জন্য বাবার চোখে যে স্বপ্ন থাকে, যে মায়া থাকে, সন্তানের খুশিতে যে তৃপ্তি থাকে তা প্রকাশের উপযুক্ত শব্দমালা অভিধানে নেই।

আমার বাবা ছিলেন আমার অনুভূতি। সবার বাবাই তার সন্তানকে ভালোবাসেন আবার সব সন্তানও নিজেদের বাবাকে ভালোবাসেন অফুরান। আমাদের বাবা খুবই বিনয়ী ও সামাজিক রীতিনীতির প্রতি খুবই শ্রদ্ধাশীল একজন মানুষ ছিলেন। বাবাকে তাই সকল স্তরের মানুষই যেমন শ্রদ্ধা করতেন তেমনি ভালোবাসতেন। বাবা কখনো কারো সাথে রাগ করে কথা বলতেন না, বরং বিপদে আপদে হাসিমুখে মানুষের পাশে দাঁড়াতেন।

প্রায় বাইশ বছর বাবাকে হারিয়েছি। মনে হয় এইতো সেদিনও বাবার সাথে বসে খেয়েছি, কথা বলেছি। কোথায় হারিয়ে গেল সেই স্মৃতিময় দিনগুলো? এই কষ্টটা শুধু তারাই বুঝবে যারা বাবাকে হারিয়েছে। বাবার অভাব কোনোদিনই পূরণ হবার নয়। বাবার স্মৃতিগুলোকে আঁকড়ে ধরেই সারাটাজীবন কাটাতে হবে।

বাবারা সন্তানের হৃদপিন্ডে জমে থাকা সম্মান, শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা। ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল বাবা, হাসি ফুটুক প্রত্যেক সন্তানের মুখে।
ভালোবাসা রইলো সকল বাবাদের প্রতি।

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT