আব্দুল ওয়াদুদ।।
“হকলর মাতরা আছইন তারা পাইন, আমরার মাতরা নাই আমরা পাইনা” এমন আকুতি-মিনতি করে কথাগুলো বলেন, রাজনগর উপজেলার কুশিয়ারা নদী পাড়ের স্বামী হারানো পরী বিবি (৬৫), তুরি বিবি (৫৫), ও রুশনি বেগম (৪৫)। পরী বিবি ও তুরি বিবি তারা স্বামী হারা অসহায় দুই বোন। তারা তিন মেয়ে নিয়ে থাকেন উত্তরভাগ ইউনিয়নের কুশিয়ারা নদী পাড়ের সুনামপুর গ্রামে বাপের রেখে যাওয়া ভিটায়। বাকরুদ্ধ কন্ঠে তারা আরো বলেন, “তিন বারের বন্যায় আমরার ঘরের বেড়া ধ্বসিয়া পড়িযার। বয়স্কভাতা ও আমরারে দেয়না। অসহায় অবস্থায় বইয়া বরি (বর্শি) বাই। পাশের বাড়ির বিলাল মিয়া ও মিলনের ভাইয়ে দুইবার কিছু ডাইল চাইল দিছে কিন্তু সরকারি কিচছু পাইলামনা।”
তাদেরমত পাশের ঘরের বুলু বেগম বলেন, “বন্যায় কাঁচা ঘরর বেড়া ভাঙ্গিয়া যারগি। ভোট না দেয়ায় আমরা পাইনা।” ফতেপুর ইউনিয়নের শাহাপুর গ্রামের প্রবীন মুরব্বী সওদাগর মিয়া বলেন, “এমন কঠিন সময়ে ত্রান নাই।” কথা হয় কামালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা নদী পাড়ের সুরিখাল, কামালপুর ও টিল্লাগাঁও গ্রাম থেকে আসা অসহায় মানুষের সাথে। তারা বলেন, “তিন বারর বন্যায় ২০ দিন আগে আইয়া স্কুলো উঠছি।” আশ্রয় কেন্দ্রের শাকিরা বেগম, আরতি রানী বিশ্বাস ও আলী আকবর বলেন, “এখানে আমরা প্রায় ২৫ পরিবার আছি। ঈদের আগে ইউনিয়ন অফিস থাকি ৭/৮ কেজি চাইল পাইছি। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত সরকারি কিচ্ছু পাইছিনা।”
প্রবল বর্ষন ও উজান থেকে আসা ভারতের ঢলে কুশিয়ারা নদীতে তৃতীয় দফার লাগাতার দীর্ঘস্থায়ী ছয় মাসের এই বন্যায় নদী ও কাউয়াদিঘি হাওর পাড়ের আরো অনেক মানুষ তাদের মত একেবারে নাজেহাল হয়ে পড়েছেন। কুশিয়ারা ও কাউয়াদিঘী হাওরে বানের পানিতে মৌলভীবাজারের সাথে রাজনগর ও পার্শ্ববর্তী বালাগঞ্জ উপজেলার প্রায় দেড় লাখ মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। কাউয়াদিঘি হাওর ঘেষে যাওয়া মৌলভীবাজার-রাজনগর-বালাগঞ্জ সড়কের ৫টি পয়েন্টে এখনো কোমর পরিমান পানি রয়েছে। ওই রুটে বাস চলাচল বন্ধসহ শেষ ভরসা অটোরিক্সা চলাচলও বন্ধ হয়ে আছে পাঁচ মাস ধরে।
এছাড়াও মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মনুমূখ, নাজিরাবাদ ও আখাইলকুড়া ইউনিয়নের আরো অন্তত ২৫টি গ্রামের বন্যা কবলিত মানুষ নিজের খাদ্য সংঙ্কটসহ গৃহ
পালিত পশু নিয়ে পড়েছেন মহা বিপাকে। এসব গ্রামের গরীব-অসহায় মানুষ ত্রানের আসায় রাজনীতিবিধ ও প্রশাসনের হাতের দিকে তাকিয়ে আছেন। নদী পাড়ের মানুষ আগ্রহ নিয়ে বসে থাকেন কখন ত্রান নিয়ে আসবেন রাজনীতিবীদ, সমাজসেবী অথবা সরকারি কর্মকর্তারা।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিজয় ইন্দ্র শংকর চক্রবর্তী এর সাথে বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) আলাপচারিতা হয় বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে। তিনি জানান, আসাম থেকে নেমে আসা ঢল ও বৃষ্টির কারনেই মুলতঃ আমাদের পানি বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে কুশিয়ারা নদীর পানি শেরপুর সেকশনে বিপদসীমার ৩ সে:মি ও শেওলাতে ২২ সেঃমিঃ উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।