যার শতকামনার, জনমসাধনার ধন অবশেষে সেই জন্মদাতা বাবাই হত্যা করলেন যুবতী কন্যাকে! অবশ্য কন্যাকে জীবন্ত কবর দেয়ার রাজকীয় কাহিনী আছে আমাদের। সে না হয় পরেই বলি। তার আগে দেখে নেই কি ঘটেছিল সেদিন সেখানে, বাবা নিজ হাতে মেরে ফেললেন কন্যাকে! খবরের কিছুটা গভীরে গিয়ে জেনে নেয়া যাক ভেতরের খবরখানা কি।
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার করগাঁও ইউনিয়নের কুড়িশাইল(বেগমপুর) গ্রাম। বাবা মতিলাল দাস, গ্রামের একজন নিরীহ ধর্মপরায়ন মানুষ। তারই কন্যা পূর্ণিমা রাণী দাস(২৫)। বাবার হাতে খুন হয়েছেন মেয়ে পূর্ণিমা রাণী দাস। এই সোমবার, ২৭ অক্টোবর, দুপুর ১২টার দিকে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। নিহত পূর্ণিমা দুই সন্তানের জননীও ছিলেন।
পিতার হাতে কন্যা হত্যা অবশ্য খুব একটা নতুন কিছু নয়। আমাদের ইতিহাসের দিকে চোখ ফেরালে পাওয়া যাবে, বাংলার প্রথম নবাব মুর্শিদ কুলিখানের কন্যা আজিমুন্নেসা বেগম। জনশ্রুতি আছে কুলিখানের এই মেয়ে আজিমুন্নেসা কঠিন রোগে আক্রান্ত হলে নবাবী হেকিম প্রতিদিন একটি মানবশিশুর কলিজা দিয়ে ঔষধ তৈরী করে তাকে খাওয়াতেন। ফলে এক পর্যায়ে তিনি সুস্থ হয়ে উঠেন কিন্তু মানবশিশুর কলিজা খাওয়া তার নেশায় পরিণত হয়। সুস্থ হওয়ার পরও প্রতিদিন তিনি মানবশিশুর কলিজা খেতেন। এ ঘটনা জানতে পেরে মুর্শিদ কুলিখান কন্যাকে জীবন্ত কবর দেয়ার আদেশ দেন এবং তাকে তারই(আজিমুন্নেসা) নির্মিত মসজিদের সিড়ির নিচে জীবন্ত কবর দেয়া হয়েছিল। নবাব এতো কঠোর না হলেও পারতেন।
![]() হাতকড়া পরিহিত পিতা মতিলাল দাস। ছবি সংগৃহীত। |
সে যাই হোক, আজকের নবীগঞ্জের ঘটনায় ফিরে আসি। নবীগঞ্জ পুলিশ জানায়, নিহত পূর্ণিমা রাণী ওই গ্রামের মতিলাল দাসের মেয়ে। পারিবারিক কলহের জেরে এই হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ।
নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মো. কামরুজ্জামান এ সংবাদ প্রতিনিধিকে বলেন, প্রায় ছয় মাস আগে স্বামীর সঙ্গে কলহের জেরে পূর্ণিমা বাবার বাড়িতে চলে আসেন। সম্প্রতি এক যুবকের সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে কয়েক দিন পর বাড়িতে ফিরে আসে সে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় সমালোচনা ছড়িয়ে পড়ে। তিনি আরও জানান, পূর্ণিমার বাবা মতিলাল দাস ধর্মপরায়ণ ব্যক্তি। মেয়ে সম্পর্কে এলাকায় কটু কথা শুনে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। সোমবার দুপুরে পূর্ণিমা ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় তার গলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেন মতিলাল। এরপর নিজেই চিৎকার করে প্রতিবেশীদের ডাকতে থাকেন এবং বলেন, ‘আমি আমার মেয়েকে খুন করেছি, পুলিশে খবর দিন।’ স্থানীয়রা খবর দিলে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বাবাকে আটক করে। আহত অবস্থায় পূর্ণিমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
ওসি কামরুজ্জামান বলেন, মতিলাল দাসকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। এখনো মামলা হয়নি। নিহতের মা থানায় এসে লিখিত অভিযোগ দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।