লন্ডন: আগে আমাদের যেমন চৈত্রের মাঠফাটা চৌচির রৌদ্রের পর বৈশাখ পেরিয়ে জ্যৈষ্ঠ আসতো পক্ক আম কাঠাল নিয়ে। দামান্দ নিয়ে কন্যা আসতেন বাপের বাড়ী আম-কাঠালি স্বাদ নিতে। একটা উৎসবের আমেজ থাকতো সবকিছুতে। বাড়ীঘর আত্মীয়-স্বজনে ভরপুর হয়ে থাকতো। পাকা আম আর কাঠালের ঘ্রাণে বাড়ীর গরু-ছাগল পাগল হয়ে যেতো খাওয়ার জন্য। এমনি এক মোহময় আনন্দের আবেশ নিয়ে আসতো জ্যৈষ্ঠের তপ্ত রৌদ্র ঠিক তেমনি চারিদিক জলবেষ্ঠিত দ্বীপদেশ বৃটেনেও এখন বসন্তের প্রায় শেষ; এসেছে গ্রীষ্মের দগ্ধতাপে উদোম হওয়া আনন্দোল্লাসের ঋতুমাস জুন।
আমাদের ওখানে এখন আর আগের মতকরে মধুমাস আসে না। কিন্তু এখানে এখন গ্রীষ্ম লেগেছে ঘরে ঘরে। যেদিকে তাকানো যায় উদোম মানুষ রৌদ্রস্নানে ব্যস্ত। পার্কে পার্কে, নদীর তীরে, যেকোন খোলা যায়গায় মানুষ আর মানুষ। সকলেই শরীরে রৌদ্র মাখিয়ে নিতে দিগম্বরপ্রায় হয়ে চলেছেন। এখানেও পাড়ায় পাড়ায় হলে হলে এমনকি যেকোন খোলামুক্ত জায়গায় চলছে বিভিন্ন সুর ও স্বাদের বিচিত্রানুষ্ঠান।
কিন্তু ফারাক আছে। তাদের ও আমাদের আনন্দ উৎসবের চিন্তায় ও চেতনায়। এখানে আয়োজিত আনন্দোৎসব বাধাবন্ধনহীন মুক্ত। তবে রুচিসম্মত। যা আমাদের দেশের সর্বত্র সম্ভব হয় না। আর সম্ভব হবে কি করে! আমরাতো আজ অবদি ঠিকই করতে পারিনি কোন বিষয়ে কতটুকু স্বর উঁচু করে কথা বলতে পারবো। আমরাতো উৎসব করতে পারিনা। ধর্মের মুখোশধারীরা তাদের সুবিধায় ধর্মের ব্যাখ্যা দিয়ে মানুষের মনের উৎসব থেকে মানুষকে অনেক তফাৎ থাকতে বাধ্য করা হয়। আমরা এখনও ঠিক করতে পারিনি আমরা আরবীয়ানদের নমুনায় কথা বলবো না-কি আমাদের মত করে কথা বলবো। আমরা আগে খোদা বলতাম এখন আমরা খোদা বাদ দিয়ে আল্লাহ্ বলতে শুরু করেছি। কারণ খোদা ফার্সি শব্দ অতএব এটি বলা যাবে না কারণ এখানে স্রষ্টা নেই! এটাতে না-কি কোন ফল নেই। যা আছে ওই আল্লাহ শব্দে। ধর্মের নামে আমাদের ঘাড়ে সেই কোন দূরের অতীতে চেপে বসেছিল আরবিয়ান সিন্দাবাদের ভূত তা আজও আমাদের উপর আচর করে আছে। এ আচর ছুটতে অনেক সময় লাগবে। অবশেষে আচরমুক্ত হতে আমরা পারবো কি-না তা জানিনা। অতএব উৎসব হবে কোত্থেকে! আমাদের ধর্ম এমনি যে চুন থেকে পান খসলেই সব শেষ! সব নাপাক হয়ে যায়। আনন্দ আর উৎসব হবে কি করে!
আমাদের উচ্চ আদালতের সামনে ঈদগা থাকতে পারবে, শিল্পের কৃৎকৌশল কোন ভাস্কর্য থাকতে পারবে না। এ নমুনার স্বার্থবাদী বিধিনিষেধের বেড়াজাল আমরা আজও ছিন্ন করতে সক্ষম হইনি। এই সেদিনও আমরা ৩০ লাখ সাধারণ মানুষের আত্ম বলিদান দিয়ে যে স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে এনেছিলাম ধর্মের মুখোশধারী পাকস্তানের ভন্ড মুসলমান সামরিকদের কাছ থেকে, ক’টি বছরের ব্যবধানে এরা সব ভুলে গেছে। তথা কথিত কোন আলেম-ওলেমা আমাদের মুক্তি আর স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রান দেয়া তো দূরের কথা উপরন্তু নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য ধর্মের দোহাই দিয়ে আমাদের ২লাখ মা-বোনকে নিজেদের হাতে ধর্ষণের জন্য তাদের জানের দোস্ত হারামি পাকি জানোয়ারদের হাতে তুলে দিয়েছিলো, এটি তারা ভুলে যেতে চায়। আমাদের উৎসব হবে কি করে!
যেসব আলীম-ওলেমা নামের বদলোক নিজেদের স্বার্থে কাপুরুষের ন্যায় নিজের কন্যাকে জানোয়ারের হাতে তুলে দিতে পারে, তার কাছে হিন্দুর বাড়ী দখল সবার আগে জায়েজ। পাহাড়ী উপজাতিদের বাড়ী-ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়া অধর্মের কিছুই নয়। বরং উচিৎ হবে পাহাড়ীদের সুন্দরী নারীদের ধরে এনে নিকা পড়িয়ে নেয়া। জানের দোস্ত পাকি জানোয়ারেরাতো তাই শিখিয়ে গিয়েছে। অতএব উৎসবের মাস আর ভালবাসার মাস যা-ই আসে না কেনো আমাদের আনন্দ আর উৎসব হবে কি করে?