হারুনূর রশীদ।।
সিলেটের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের একজন ঘুষনেয়া কর্মচারীকে হাতে-নাতে ধরতে গিয়ে দস্তুরমত অপদস্ত হয়ে ফিরে আসেন দুর্ণীতি দমন কমিশন(দুদক)এর সিলেট অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীগন। সিলেট টুডে২৪.কম এ খবর দিয়েছে। অনলাইনটি লিখেছে যে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের আজিজুর রহমান নামের এক কর্মচারীকে ঘুষসহ হাতে-নাতে ধরে ফেললে এবং আটক করে নিয়ে আসার সময় অন্যান্য কর্মচারীদের বাধার মুখে তা আর হয়নি।
এ ঘটনায় জেলা প্রশাসক জয়নাল আবেদীন নিজ কক্ষে উভয় পক্ষের উর্ধতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকে বসে বিষয়টির সুরাহা করার চেষ্টা করেও বলা যায় ব্যর্থ হন।
দুদকের সিলেট অঞ্চলের উপ-সহকারী পরিচালক ওয়াহিদ মঞ্জুর সোহাগ বলেছেন জেলা প্রশাসকের সাথে বৈঠক চলাকালীন বাইরে দুদকের সদস্যের উপর হামলা হয়। তিনি সহ ৩জন জখম হয়েছেন।
দুদক পরিচালক শিরীন পারভিন অভিযোগ করে বলেছেন-“ঘুষের ১০হাজার টাকা ও জব্দকৃত কাগজ হামলা চালিয়ে আজিজের সহযোগীরা নিয়ে গেছে। আত্মরক্ষার্থে আমরা জেলা প্রশাসকের অফিস রুমে যাই।”
বাংলাদেশ কালেক্টরেট সমিতি, সিলেট জেলা শাখার সভাপতি জনৈক আফসর আহমদ বলেছেন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এসে তাঁর অনুমতি না নিয়ে কাউকে গ্রেপ্তার করা অন্যায়।
আমাদের সাধারণ জ্ঞান বলে আগে জানান দিয়ে কোনদিনই অন্তত আমাদের দেশে কোন চোর, ডাকাত বা দূর্ণীতিপরায়নকে ধরা কোনদিনই সম্ভব নয়। আর কোন ঘুষকোর সরকারী কর্মচারীকে হাতে-নাতে ধরতে হলেতো সবকিছু গোপন করেই অভিযান চালাতে হবে। তবে হ্যাঁ আমাদের আমলাকূল যদি কোন একটি হারে সৎ বা কোন বিশেষ আদর্শে আদর্শবান হতেন তা’হলে হয়তো সেই সৎ ব্যক্তিদের উপর ভরসা করে আগে জানান দিয়ে অভিযান চালানো যেতো।
এই ঘটনায় আর কিছু না হোক অন্তত এতোটুকু আন্দাজ করা যাচ্ছে যে আমাদের সর্বত্র আস্তার সংকট কাজ করছে। দুদকের আস্তা নেই জেলা প্রশাসন বা বলতে পারি জেলা প্রশাসকের উপর। তাই জেলা প্রশাসককে কোন খবর না দিয়েই একজন অভিযুক্তকে ধরতে গিয়েছিলেন দুদক।
দ্বিতীয় বিষয়, আইনের শাসন যারা প্রতিষ্ঠা করে আমাদের মত সাধারণ মানুষকে দেখাবেন তারা এক্ষেত্রে নিজে থেকে কোন ভূমিকা নিতে এগিয়ে আসলেন না। দূর্ণীতির অভিযোগ অথচ জেলাপ্রশাসক বৈঠক করতে বসেন। তিনি নিজে থেকে তার ওই কর্মচারীর বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেয়ার কোন লক্ষনই দেখালেন না। কারণ কি? দুদকের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা তার অফিসে আশ্রয় নিলেন যে অভিযোগের আসামী ধরতে গিয়ে তিনি সেখানে বৈঠক করবেন কেনো? আইন মোতাবেক তারইতো কথা ও উচিৎ ছিল ওই অভিযুক্ত কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। তাকে পুলিশে সোপর্দ করা। তিনি প্রশ্ন করতে পারেন এবং বলতে পারেন ওই কর্মচারী যে ঘুষ নিয়েছে তিনি কি করে বলতে পারেন! যদি তাই বলেন তা’হলে যা আগে বলেছি আস্তার সংকট, সেই আস্তার সংকট এখানেই।
এখন সরকারী দু’টি দফতরে এই আস্তার স্থান তৈরী করা যায় কিভাবে সেটি একটি প্রশ্ন? আবার যার যা দায়ীত্ব তা যদি তিনি সঠিকভাবে পালন করতে না পারেন তা’হলে সে ক্ষেত্রে দায়ী আইনের ব্যাখ্যা। উভয় ক্ষেত্রেই সংকট আমরা সাধারণ মানুষের। একদিকে জেলা প্রশাসক অভিযুক্ত কর্মচারীর ব্যবস্থা না নিয়ে তাকে বাঁচানোর জন্য বৈঠকে বসেন আর অন্যদিকে তার সহায়তায় এগিয়ে আসেন একজন কালেক্টর সমিতির সভাপতি আফসর আহমদ। কেমন একটা যোগসাজশের গন্ধ পাওয়া যায়।
এখন আইনে যদি থাকে যে একজন জেলা প্রশাসকের কর্মচারীকে যে কেউ কোন অভিযোগে ধরতে গেলে জেলা প্রশাসককে আগেভাগে জানাতে হবে তা’হলে সমান্তরাল প্রশ্ন আসে এ ধরনের অভিযানের গোপনীয়তা রক্ষা হবে কি দিয়ে? আর গোপনীয়তা যদি রক্ষিত না হয় তা’হলে দুদক কোন কাজইতো করতে পারবে না।
এখন দুদক যদি নিজে ঘুষের ভাগ বসাতে ওখানে গিয়েছিল বলে কেউ বলতে চায়, তা’হলে তো কোথায়ও আর বিশ্বাস আইন কিছুই থাকে না। সুশীল সমাজ, মানবাধিকার, গণতন্ত্র কোন কিছুই আমাদের কাজে আসবে না। অন্যকথায় আমরা এসবের অযোগ্য!
লন্ডন: শুক্রবার, ২৭শে মাঘ ১৪২৩।।