মৌলভীবাজারে ছাত্র ফ্রন্টের প্রতিবাদ সমাবেশ
কিশোরীকে ধর্ষণ ও পাচারের প্রতিবাদে
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরীকে অপহরণ করে সিলেট আটকে রেখে টানা তিন দিন সংঘবদ্ধ ধর্ষণ এবং পরবর্তীতে একটি চক্রের কাছে বিক্রির প্রতিবাদে এবং ধর্ষনকারীদের বিচারের দাবিতে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট মৌলভীবাজার জেলা শাখার প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৮ জানুয়ারি’২৫ বুধবার বেলা ৩টার সময় মৌলভীবাজার চৌমুহনায় সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ নন্দী সভাপতিত্বে এবং রাজিব সূত্রধরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ মৌলভীবাজার জেলা সদস্য অ্যাড. আবুল হাসান, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট মৌলভীবাজার শহর শাখার সংগঠক বিজয় দাস, সুমনা রহমান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, গত ৩১ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার একজন কিশোরী(১৭) কে অপহরণ করে সিলেটে নিয়ে আটকে রেখে টানা তিন দিন সংঘবদ্ধ গণধর্ষণ-নির্যাতন করে। পরবর্তীতে একটি চক্রের কাছে ধর্ষণকারীরা বিক্রি করে দেয় এবং মেয়েটি কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে পরিবারে খবর দিলে পরিবার তাকে উদ্ধার করে। মেয়ের অপহরণের সংবাদ শুনে কিশোরী মেয়ের পিতা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। থানায় মামলা হলে সিলেট থেকে দুই জন আসামিকে পুলিশ ধরতে সক্ষম হয়েছে। যেই সংবাদটা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এবং সচেতনতা জনগণ সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাচ্ছে। আজকের এই সমাবেশ থেকে কমলগঞ্জের কিশোরীকে অপহরণ ও ধর্ষনকারীদের বিচার নিশ্চিতের জোর দাবি জানানো হচ্ছে। একইসাথে সারাদেশে সংগঠিত সকল নারী ধর্ষণ-হত্যা-নির্যাতনের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে কিশোরীকে(১৭) অপহরণের পর সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গত সোমবার(৬ জানুয়ারি) থানায় মামলা হয়েছে। এ মামলায় পুলিশ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার মুস্তফা মিয়া(৫৭) ও কুমিল্লার জয়নাল মিয়া(৫৮)।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ওই কিশোরীর মায়ের মোবাইলে অভিযুক্তরা ফোন দেন। মা নামাজে থাকায় কিশোরী ফোন ধরে। ওই সময় তারা জানায় তার মায়ের জন্য উপহার নিয়ে আসছে, সেটি যেন নিয়ে যায়। পরে ওই কিশোরী উপহার আনতে গেলে অপহরণকারীরা কিশোরীকে একটি প্রাইভেট গাড়ীতে তুলে সিলেটে নিয়ে যায়। সেখানে মুস্তফা, জয়নালসহ চার-পাঁচজন তাকে তিন দিন ধরে মারধর ও ধর্ষণ করে এবং পরে একটি চক্রের কাছে ৩ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেয়া হয়। চক্রটি নিয়ে যাওয়ার সময় ওই কিশোরী গাড়ি থেকে কৌশলে পালিয়ে একটি স্থানে আশ্রয় নেয়। খবর দিলে সেখান থেকে পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
ওই কিশোরীর মামা বলেন, মেয়েকে অপহরণের কথা শুনে ঘটনার একদিন পর ১ জানুয়ারি রাত ৯টার দিকে তার বাবা(৬২) হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে মারা যান বলে জানা গেছে। অপহরণকারীরা পূর্বপরিচিত হওয়ায় মোবাইল ফোন উপহার দেওয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে ওই কিশোরীকে প্রাইভেট কারে তুলে নিয়ে যায়। পরে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।
থানায় মামলা করায় ওই কিশোরীর ভাইকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিশোরীর ভাই বলেন, ‘আমার বোনকে বাড়ি থেকে তুলে কয়েকজন মিলে ধর্ষণ করে বিক্রি করতে চেয়েছিল। বোনের অপহরণের কথা শুনে বাবা হার্ট অ্যাটাকে মারা যান।’
স্থানীয় পতনউষার ইউনিয়নের ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম বলেন, শুনেছি মেয়েটিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না- এই খবর শুনে তার বাবা স্ট্রক করে মারা গেছেন। পরে মেয়েটি নিজেকে মুক্ত করে পরিবারকে জানালে তারা সিলেট থেকে উদ্ধার করে আনে। মেয়েটিকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে পরিবারের পক্ষ থেকে। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগের পর দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বর্তমানে মেয়েটি মৌলভীবাজার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।
কমলগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) সৈয়দ ইফতেখার হোসেন জানান, এ ঘটনায় জড়িত দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল তিনজন, যা আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। তদন্তের স্বার্থে আমরা বিস্তারিত জানাচ্ছি না। ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।