সিনাই উপত্যকার মসজিদে “আইএসআইএস” জঙ্গিবিদ্রুহীরা হামলা করে ৩০৫জন নিরীহ মানুষ হত্যার পর মিশরের সামরিক বাহিনী পাল্টা এক আক্রমন চালিয়ে ৩০জন “আইএসআইএস” জঙ্গিবিদ্রুহীকে হত্যা করেছে। এছাড়াও ৭জন ইসলামী জঙ্গিকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে। আজ শনিবার ২৫শে নভেম্বর মধ্যপ্রাচ্যের ‘হারেজ.কম’ এ খবর দিয়েছে।
‘হারেজ.কম’ এর সাংবাদিক জেক কৌরি লিখেছেন, গত শুক্রবার সিনাই এলাকার কেন্দ্রে আক্রমন চালিয়ে মিশরীয় সৈন্যরা ৩০জন জঙ্গিকে হত্যা করেছে। মিশরের নিরাপত্তা দপ্তর ও প্রত্যক্ষকারী একজন জানিয়েছেন যে মিশরের বিমান বাহিনী পশ্চিম আল এরিশে ‘আইএসআইএস’এর হামলার স্থল উত্তর সিনাইয়ের ‘বির আল আবেদ’-এ আক্রমন চালায়। ওখানে জঙ্গিরা লুকিয়ে ছিল বলে এক অনুমানের উপর মিশরীয় বিমান বাহিনী এ হামলা চালায়।
এ বিষয়ে নিশ্চিত আরো জানতে চাইলে পড়ুন বা দেখুন- https://www.haaretz.com/middle-east-news/egypt/1.824859
ছবি: ইন্ডিপেন্ডেন্ট
সন্দেহ যে, ২৫ থেকে ৩০জনের একটি আইএসআইএস জঙ্গিদল বির আল আবেদ-এর “আল রদাহ” মসজিদে বোমা ফাটিয়ে এবং গুলি করে প্রার্থনারত মানুষদের হত্যা করেছিল। যা আধুনিক মিশরীয় ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্যতম ঘটনা বলে মিশরীয় গণমাধ্যম ও প্রত্যক্ষকারীগন বলেছেন। নিহত ৩০৫জনের মধ্যে ২৭টি শিশুও ছিল। এছাড়াও আরো ১২৮জন মারাত্মকভাবে জখন হয়েছিলেন।
নৃসংশ বর্বর এ হত্যাকান্ডের পর মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাতাহ আল সিসি দেশের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের এক জরুরী সভায় বলেন-“আমাদের সশস্ত্রবাহিনী ও পুলিশ এ বর্বরতার প্রতিশোধ নেবে এবং ওই এলাকায় নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সর্বাত্মক শক্তি নিয়োগ করবে।” সিসি পরে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক বক্তব্যে বলেন এসব বর্বর অপকর্ম করা হচ্ছে জঙ্গি ও সন্ত্রাস বিরুধী আমাদের অভিযান থেকে বিরত রাখার জন্য এবং এখন পর্যন্ত ওই এলাকায় আমাদের কৃষ্টি যা এখনও সংরক্ষিত আছে সেসব বিনষ্ট করার জন্য।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নামাজীরা শুক্রবারের নামাজ শেষ করার আগেই একটি বোমা ফেটে উঠে। প্রায় ৪০ জনের মত বন্দুকধারী মসজিদের বাইরে জীপগাড়ীর পাশে দাড়িয়ে মসজিদের ভেতরে গুলি করতে শুরু করে। সশস্ত্র ৪টি দল মসজিদের ভেতরে নামাজীদের উপর আক্রমণ চালায়। সরকারী প্রসিকিউশন বলেছে এ আক্রমনে ২৩৫জন নিহত ও ১০৯জন জখমপ্রাপ্ত হয়।
সুফি মুসলমান
আরবীয়া নিউজ চ্যানেল বলেছে, যাদের হত্যা করা হয়েছে তাদের একটি অংশ সুফি মতবাদের মানুষ ছিল। আইএস ধর্মীয় জঙ্গিরা এদের হত্যা করেছে কারণ এরা সুফি সাধক ও মাজারকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে। যা ‘আইএস’দের ভাষায় মূর্তিপূঁজা ও মাজারপূঁজা। ‘আইএস’ জঙ্গিরা এসময় স্থানীয় উপজাতি মিলিশিয়াদের উপরও আক্রমণ চালায়। জঙ্গিদের ভাষায়, এরা মিশর সরকারের বাহিনী ও পুলিশের সাথে মিশে কাজ করে সুতরাং এরা বিশ্বাসঘাতক।
মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে জানা যায়, মার্কিনীদের সহায়তায় পরিচালিত সামরিক অভিযানে ‘আইএসআইএস’ এর ইরাক-সিরিয়া ভিত্তিক স্বঘোষিত খেলাফৎ-এর পরাজয়ের পর এই সিনাই উপত্যকাই হল তাদের শেষ ভরসাস্থল।
আগামী বছরের প্রথম দিকে মিশরে নির্বাচন হবে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাতাহ আল সিসি যিনি একজন প্রাক্তন জেনারেল ছিলেন। তিনি আগামী নির্বাচনে দাড়াবেন। তার ভোটের জন্য এ এলাকার নিরাপত্তা খুবই জরুরী। এ অবস্থায় গত কাল শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় বলেছেন, “এ আক্রমণ একটি ভয়ঙ্কর কাপুরুষী সন্ত্রাসী আক্রমণ। দুনিয়া কোনভাবেই এ নমুনার সন্ত্রাসকে সহ্য করবে না। এদের সামরিকভাবে পরাজিত করতেই হবে। এই সন্ত্রাসী আদর্শ যা তাদের টিকে থাকার মূলমন্ত্র একে নিশ্চিন্ন করতেই হবে।” ট্রাম্প পরে বলেছেন যে তিনি জেনারেল প্রেসিডেন্ট সিসি’কে এ আক্রমনের বিষয়ে আলাপের জন্য আহ্বান জানাবেন।
গাজা উপত্যকার উত্তর সিনাইয়ের এ উদোম এলাকা যুগ যুগ ধরে মিশরীয় নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য একটি বিশাল নিরাপত্তা হুমকি। এ অঞ্চল দিয়ে জঙ্গি সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের চোরাকারবার করে থাকে।
“আনসার বাইয়েত আল মাকদিস” নামের স্থানীয় একটি দল যা একসময় “আল কায়দা”র সাথে যুক্ত ছিল। গত ২০১৪ সালে এরা “আলকায়দা” থেকে সরে এসে “আইএস”এর সাথে সংযুক্তির কথা ঘোষণা দেয়। সিনাই উপত্যকার এই রক্তারক্তি চরমভাবে বেড়ে যায় যখন ২০১৩ সালে “মুসলিম ব্রাদারহুড”এর প্রেসিডেন্ট মুরশিকে সরিয়ে জেনারেল সিসি ক্ষমতায় আসেন।
ইতিপূর্বে “আইএস” জঙ্গিরা উত্তর সিনাইয়ের দু’জন সুফি মুসলমানকে শিরোচ্ছেদ করে হত্যা করে এবং এ ঘটনার ভিডিও প্রচার করে। তাদের কথায় এ দু’জন সুফি মুসলমান তন্ত্র-মন্ত্রের কাজ করতো। চলতি বছরের জুলাই মাসে তাদের আক্রমণে সিনাই উপত্যকার দু’টি সামরিক চেকপোষ্ট-এ আত্মঘাতী গাড়ীবোমা বিষ্ফোরণে প্রায় ২৩জন সৈনিক নিহত হন।
এভাবে সন্ত্রাসীরা মিশরের মূল ভূখন্ডে অবস্থিত ‘কপটিক খৃষ্টান’দের গীর্জায় ও তীর্থযাত্রীদের উপর আক্রমণ চালিয়েছিল তাদের অবস্থানকে মিশরের দিকে সম্প্রসারিত করার জন্য।
গত মে মাসে কিছু বন্দুকধারী, দক্ষিন মিশরের একটি ধর্মশালায় ভ্রমণের পথে চলার সময় একদল ‘কপটিক’ ভ্রমনকারীদের উপর আক্রমণ চালায় এবং ২৯জনকে হত্যা করেছিল।
গত শনিবারে মিশরের একটি আদালত জঙ্গিসন্ত্রাসী দলের ৭জনকে ফাঁসী দেয়। এরা একটি বর্বর আক্রমনের চেষ্টা চালাচ্ছিল। একই সময় আরো ১৩জনকে ১৫ থেকে ২৫ বছর মেয়াদে জেলদন্ড প্রদান করে মিশরীয় আদালত। এদের মধ্যে কয়েকজনকে জেলদন্ড দেয়া হয় ২০১৫ সালে লিবিয়ায় ২১জন মিশরীয় খৃষ্টান কর্মচারীকে হত্যার জন্য।