একটি কঠিণ সময় পাড় করছে বৃটেন" />
হারুনূর রশীদ: ২৫শে জুন ২০১৬ ১১.১৪::
ScotlandStargeon-did-not-let-Britain-leaveEUবৃটেনের কারীশিল্পের একচ্ছত্র অধিপতি বাঙ্গালী রেস্তোঁরা ব্যবসার কর্ণধারেরা বুঝেছিলেন, ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসলে ইউরোপীয় দেশসমূহের অজ্ঞ কর্মিদের কাজ দিতে হবে না; বাংলাদেশ থেকে নিজেদের পছন্দসই মানুষ আনা যাবে। সত্য হোক আর মিথ্যা হোক এই একটি বুজের উপর তারা ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসার প্রচারে উঠেপড়ে লেগেছিলেন এবং শেষাবদি তাদের বিজয় সূচিত হয়েছে। কিন্তু এখনই কথা শুরু হয়ে গেছে যে আসলে কি তা সত্য ছিল না-কি একটি দুষ্ট কৌশল মাত্র ?
বৃটেনের গণভোট ফলাফলের ভালমন্দ উভয় দিকই আছে। প্রথমতঃ একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে জনমত যাচাই হয়ে গেল যে বিষয়টি নিয়ে বৃটেনের রাজনৈতিক মহল কোন জোরালো সিদ্ধান্ত নিতে কিংবা দিতে পারছিলেন না। এ বিবেচনায় এই ফলাফল একটি বিশাল প্রাপ্তি। এখন ইউনিয়নের বাকী সকলেই বুঝতে শুরু করেছেন যে ইউনিয়নে না থাকলে তাতক্ষণিক ক্ষতি কি কি হতে পারে। যদিও বৃটেনকে একাই খাই-খেসারত দিয়ে সারা ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের বাকীদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের কিছু কিছু অঙ্গিকার ছিল যা ইউনিয়নভুক্ত সকল দেশের অবশ্য পালনীয় ছিল। বৃটেন বেরিয়ে আসার কারণে সেসব নীতিমালা বা অঙ্গিকার না মানলে কিছু করার নেই। এটি একটি নেতিবাচক দিক।
এরই মধ্যে বৃটেনের সরকারী ওয়েবসাইটে ২.১ মিলিয়ন বৃটিশকে আরেকটি গণভোটের দাবী জানিয়ে স্বাক্ষর করতে দেখা গেছে। ঘটনাটি ঠিকই হয়েছে। গণভোটের পর থেকেই রাস্তাঘাটে মানুষকে বলাবলি করতে শুনা যাচ্ছে যে আবার একটি গণভোটের প্রয়োজন। এ ফলাফল বৃটেনের ক্ষতি করবে লাভ তো দুরাশা। নিরীহ সাধারণ মানুষ রাজনীতির এতো গভীরের বিষয়ে কোন জ্ঞান রাখে না এবং রাখার কথাও নয়।
আমার ছেলে(একজন ভাল চাকুরে, প্রাথমিক স্তরের আমলা) আমাকে বলেছে- আব্বু এ ধরনের গভীর রাজনীতির বিষয়কে সাধারণ মানুষের উপর চাপিয়ে দেয়া আমাদের রাজনীতিবিদদের সঠিক কাজ হয়নি। এসব বিষয় একটি দেশের ‘চিন্তাবিদগন’ খেয়াল করেন। সাধারণ মানুষ নয়। এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে একমাত্র বিদগ্ধ মানুষ যারা এসব বিষয়ে বা ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা রাখে। যারা এসব নিয়ে অনুশীলনে আছে একমাত্র তারাই বলতে পারে কি হলে-কি হবে এবং কি করা উচিত। একটি দেশের সাধারণ মানুষ যদি এতোসব বিষয় সঠিকভাবে বুঝে নিতে পারতো তা’হলে তো আর রাজনীতিবিদ বা বিশেষজ্ঞদের কোন প্রয়োজনই থাকে না। হয় ইচ্ছে করে অথবা ভুল সিদ্ধান্তের ফলে আমাদের এই গণভোটে যেতে হয়েছে। তার মতে প্রধানমন্ত্রী কেমেরুণের একটি ভুল সিদ্ধান্তের ফসল এই গণভোট। ইউরোপীয়ান ইউনিয়নে থাকবেন কি থাকবেন না রক্ষণশীল দলের ভেতরে এমন বিভাজন দেখা দিলে জোড়া লাগানোর মলম হিসেবে তিনি এই গণভোটের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। তিনি হয়তো মনে করেছিলেন ইউনিয়নে থাকার প্রশ্নটি বিজয়ী হবে। কিন্তু তা হয়নি।
ছেলেকে আমি বললাম, তা’হলে এখন কি করতে চাও তোমরা? উত্তরে সে বলল আরেকবার গণভোটে যেতে হবে।
২১লাখ মানুষের সাক্ষর সম্বলিত ওই ওয়েবসাইটে আরেকটি গণভোটের কারণ বুঝাতে গিয়ে বলা হয়েছে যে গণভোটের একটি নিয়ম থাকা উচিত যে, অন্ততঃ ৬০শতাংশ ভোটারের ৭৫ভাগ ভোট না হলে জিতা বলা যাবেনা।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই স্বাক্ষরাভিযানে কোন কাজ হবে কি? বৃটেনকি আরেকটি গণভোটে যাবার ইচ্ছা রাখে? ২১লাখ মানুষের মতামতকে কি কোন গুরুত্ব দিতে প্রস্তুত বৃটেন? এটা ঠিক যে একটি গণভোটের খেসারত দেয়া শেষ হতে না হতেই আবার গণভোটে যাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়! কিন্তু অবস্থা তো ভাল নয়। এই গণভোট, দীর্ঘ দিনের অবহেলিত সমাজে গভীর ক্ষতের জানান দিচ্ছে। আর মলম ছাড়াতো এই ক্ষত সারানো যাবে না।
এই গণভোটের আইনী ভিত্তি থাকলেও বৃটেন সরকার এই ফলাফলকে পাত্তায় না নিলেও পারে বলে আজ ২৫শে জুন ওয়াশিংটন পোষ্টে এডাম টেলর লিখেছেন। তিনি আরো লিখেছেন, যদিও নতুন আর একটি গণভোট দেশের অধিকাংশ মানুষের অসন্তুষ্টির কারণ হবে তবুও একটি সিদ্ধান্তের বিষয়ে গণতান্ত্রিক যৌক্তিকতা এনে দেবে।
গণভোটের ফলাফলে ইউরোপীয় অন্যান্য দেশ অনেকেই বৃটেনকে একহাত বুঝিয়ে দেয়ার বিষয়ে মনে মনে ভাবছেন বলে জার্মান সংবাদ মাধ্যম ‘ডয়েসে ভেলে’র বাংলা বিভাগ লিখেছে। ওই সব দেশ ভাবছেন এমন কিছু করতে হবে যা’তে বাদবাকীদের একটি ভাল শিক্ষা হয়। বাকীরা যেন বুঝতে পারে, একবার বের হয়ে গেলে তার কোন ক্ষমা নেই। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের উপর একটা বৈরীভাব বহুদেশের মধ্যে ইতিমধ্যেই যে তৈরী হয়ে আছে তা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। এমনওতঃ হতে পারে যে স্পেন, পর্তূগাল, ইটালি, সুইডেনের মত দেশের মানুষও বৃটেনের পথে হাটার চিন্তা করতে পারে!
প্রধানমন্ত্রী কেমেরুণ চলে যাবেন বলে দিয়েছেন। আগামী তিন মাসের মধ্যে নতুন মুখ আসার সম্ভাবনা বেশী। করবিনকে সরে যাবার জন্য ইতিমধ্যেই দুই এমপি সুরগোল শুরু করেছেন। বৃটেন যখন ইউনিয়নে থাকলোই না তাইলে আমাদেরই বা যুক্তরাজ্যে থাকার প্রয়োজন কি? এ ধরনের কথা স্কটল্যান্ড নেতৃত্বের মুখ থেকে বেরিয়ে গেছে। এ সমূহ ই এই গণভোটের ফলাফল। ইউরোপীয় রাজনীতির ময়দানকে এই গণভোট গোধূলি লগ্নে নিয়ে গেছে। বৃটেন এক কঠিণ সময় পাড় করছে এখন।