আইনজীবীকে হত্যা
আইনজীবী সমিতির সংবাদ সম্মেলন,
গ্রেপ্তার ৫
মৌলভীবাজার জজ কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট সুজন মিয়া হত্যা মামলায় ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানিয়েছেন পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন।
গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে পুলিশ সুপার বলেন, অগ্রণী ব্যাংকের সিকিউরিটি গার্ড মিসবাহ রহমান ও হত্যার পরিকল্পণাকারী নজির মিয়া মুজিবের পূর্ব শত্রুতা ছিল। এরই জের ধরে নজির মিয়া মিসবাহকে হত্যার পরিকল্পণা করে। গ্রেপ্তারকৃত আসামী লক্ষনের মাধ্যমে মিসবাহকে মারার জন্য টাকার বিনিময়ে লোক ভাড়া করে নজির মিয়া মুজিব। নজির মিয়া ভাড়াটিয়া খুনীদের মধ্যে লক্ষনের নিকট মোবাইলের মাধ্যমে লক্ষ্যবস্তুর ছবি প্রেরণ করে। ঘটনার দিন বানিজ্য মেলায় ভাড়াটিয়া খুনীরা নিহত সুজনকে দেখে মিসবাহ ভেবে নজির মিয়া মুজিবকে কল দিয়ে বলে, যে লোকের ছবি পাঠিয়েছো সেই লোককে আমরা পেয়েছি। নজির মিয়া মুজিব ভাড়াটিয়া খুনীদের ভিডিও কলের মাধ্যমে লক্ষ্যবস্তু দেখিয়ে নিশ্চিত করে। এসময় দুষ্কৃতিকারী আব্দুর রহিম ইমুতে ভিডিও কল দিয়ে নজির মিয়া মুজিবকে লক্ষ্যবস্তু দেখায়। তখন ভাড়াটিয়া খুনীরা জানায়, তোমার পাঠানো ছবির সাথে ওর মিল আছে বলে, ফলে নজির মিয়া মুজিব, ভাড়াটে খুনীদেরকে মারার নির্দেশ দেয়। ঘটনার দিন ফুসকা চটপটির দোকানের পাশে ফুটপাতের উপর আইনজীবি সুজন মিয়াকে চেয়ারে বসা দেখে আসামীরাসহ আরো অন্যান্য ১০/১২ জন অতর্কিত আক্রমন করে ধারালো চাকু দিয়ে উপর্যুপরি আঘাতে মাটিতে ফেলে যায়।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, মামলার পর শহরের বিভিন্ন এলাকার সিসি ফুটেজ সংগ্রহ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অভিযান পরিচালনা করে বুধবার মামলার ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী সদর উপজেলার খালিশপুর গ্রামের সামছুল হকের ছেলে নজির মিয়া মুজিবকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এই ঘটনায় জড়িত আরও চার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো পৌর শহরের রঘুনন্দনপুর গ্রামের মৃত সিজিল মিয়ার ছেলে মোঃ আরিফ মিয়া, দিশালোক এলাকার আনসার মিয়ার ছেলে হোসাইন আহমদ সোহান, রাজনগরের মাথিউরা চা বাগানের মনা নাইডুর ছেলে লক্ষন নাইডু ও নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া থানার কাশিপুর পূর্বপাড়া গ্রামের মোঃ রফিকুল ইসলামের ছেলে আব্দুর রহিম ।
![]() |
এ ঘটনায় জড়িত অন্যান্য আসামীদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ কাজ করছে বলে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়। পুলিশ অন্যান্য পলাতক হত্যাকারীদের পরিচয় উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, মামলার তদন্তের স্বার্থে হত্যাকারীদের নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(ক্রাইম অ্যান্ড অপস) নোবেল চাকমা, সদর মডেল থানার ওসি গাজী মাহবুবুর রহমান, জেলা গোয়েন্দা শাখার ওসি জাফর হোসেনসহ জেলা পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা।
গেল ৬ এপ্রিল(রোববার) রাত ১১টার দিকে মৌলভীবাজার পৌরসভার সম্মুখস্থ ফুচকার দোকানের পাশে আইনজীবী সুজন মিয়াকে অজ্ঞাতনামা কয়েকজন মিলে ধারালো চাকু দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে হত্যা করে। এই ঘটনায় নিহতের ভাই এনামুল হক সুমন সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা(মামলা নং- ১৫) নথিভুক্ত করেন।
এদিকে, বৃহস্পতিবার দুপুরে তরুণ আইনজীবী সুজন মিয়া হতার সুষ্ঠু তদন্ত ও সকল হামলাকারীর গ্রেপ্তার ও ন্যায় বিচারের দাবী জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে জেলা আইনজীবী সমিতি। এসময় সমিতির আহবায়ক এডভোকেট মুজিবুর রহমান মুজিব বলেন, এই মামলায় পুলিশি তদন্ত চলছে। আমরা আশা করি যৌক্তিক সময়ে এই মামলায় চার্জশীট হবে। ন্যায় বিচারে আমরা আমাদের ভূমিকা রাখব।
তিনি বলেন, তরুণ এই আইনজীবী হত্যায় কিশোর গ্যাং ও ফুচকা বাজার ইত্যাদির সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। সত্যিকার অর্থেই আমাদের আগামী দিনের নাগরিক কিশোর সমাজ দিনদিন ভয়ংকর হয়ে উঠছে। ভ্রাম্যমান হকার, ফুচকা বাজারে উঠতি অপরাধী নেশাখোরদের উপদ্রব বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব ভ্যানগাড়ি যানজটের মূল কারণ। এসব বহিরাগত ভ্রাম্যমানদের কেন্দ্র করে অপরাধী চক্র দিনদিন শক্তি বৃদ্ধি করছে।
এসময় অনান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বয়োজেষ্ঠ্য আইনজীবী এডভোকেট শান্তিপদ ঘোষ, পাবলিক প্রসিকিউটর এড. আব্দুল মতিন, পিপি এড.বকশি জুবায়ের, এড আব্দুল ওয়াহিদ, ফারুক সালাম ও সুবিনা আক্তারসহ অনেকে।