বাংলাদেশে তালিকাভুক্ত পতিতার সংখ্যার কোন জরিপ আমাদের হাতে নেই। তবে কয়েকবছর আগে রয়টারের দেয়া টাঙ্গাইলের কান্দাপাড়া পতিতালয়ের হিসেব থেকে বুঝা যায় যে বাংলাদেশের মোট ১৪টি তালিকাভুক্ত পতিতালয়ে বাসকরে অন্ততঃ ৬ থেকে ৭হাজার পতিতা। রয়টার লিখেছিল সেখানে প্রায় ৮শতটি খুপড়িকক্ষে ৯০০জন পতিতা বাস করেন।
এই কান্দাপাড়া পতিতালয়ের বয়স প্রায় ২০০শত বছর। ২০১৩ সালের আগষ্ট মাসে সংবাদ সংস্থা ‘রয়টার’ বাংলাদেশের পতিতাবৃত্তির উপর জরিপ চালিয়ে তাদের ‘ওয়াইডার ইমেজ.রয়টার.কম’এ বিস্তৃত আকারে লিখেছিল। ২০১৪ সালে সরকার এ পতিতালয়টি উচ্ছেদ করে দেয়। ফলে ভয়াবহ এক অবস্থার সৃষ্টি হয়। কারণ এখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম বহু মেয়ে জন্মগ্রহন করেছে, বড় হয়েছে এবং এখানেই তাদের একমাত্র আশ্রয়। উচ্ছেদের পর এরা এতোই অসহায় হয়ে পড়ে যে তারা বুঝতেই পারছিল না তারা এখন যাবে কোথায়! পতিতারা পূণর্বাসনের দাবী জানাতে থাকেন। তাদের দাবী ছিল মানুষের কামপ্রবৃত্তির নিরসনও একটি কাজ এবং তারা সে কাজ করে থাকেন। তারা ‘কামকর্মি’। এক পর্যায়ে ‘বাংলাদেশ উইমেন্স লইয়ারস এসোসিয়েশন’ উচ্চ আদালতকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন যে এদের উচ্ছেদ আইনবিরোধী অতএব তাদের সাথে সাথেই পূনর্বাসিত করা হয়। ফলে স্থানীয় একটি এনজিও’এর সহযোগীতায় এদের পুনর্বাসন সম্পন্ন করা হয়েছিল। তারা এখনও ব্যবসায় আছেন।
২০১৬ সালে অক্টোবরে লণ্ডনের ‘দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট’ পত্রিকা এদের নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। এর আগে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে বাংলাদেশের পতিতাবৃত্তির অমানবিক অবস্থার উল্লেখ করে লিখেছিল ‘দি ডিপ্লমেট’।
আজ পতিতাবৃত্তিকে নিয়ে এতো ঘাটাঘাটির মূল কারণ যুগান্তরের একটি খবর।
গত বৃহস্পতিবার ১৫ই মার্চ ২০১৮, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার উসমান নগরের খবর এটি। খবরের বিষয়বস্তু পতিতাবৃত্তি। প্রায় ৩ একর সরকারী জমি দখল করে কতিপয় লোক সেখানে ঘর-বাড়ী বানিয়ে নিয়ে পতিতাবৃত্তির কাজ পরিচালনা করছেন। খবরের অভিযোগ, পুরো উপজেলা এ বাড়ীকে ‘পতিতাবাড়ী’ বলেই জানে। এদের পরিচালনাকারীরা একসময় দুর্ধর্ষ ডাকাত প্রকৃতির লোক ছিল। ঢাকা, নেত্রকোনা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের পতিতাদের এখানে পাওয়া যায়। অনেকটা আন্তঃজেলা পতিতালয়! যুগান্তরের শক্ত অভিযোগ, ওই বাড়ীর কাছের শমসেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির কিছু কর্ম-কর্তা এ বাড়ীতে আসা-যাওয়া করেন। আর এই বাড়ীর মালিক একজনকে প্রায়ই রাতে পুলিশের গাড়ীতে দেখা যায়।
আমাদের বক্তব্য একটু ভিন্ন। আমরা মনে করি একই দেশে একই কাজের জন্য দুই নিয়ম না থাকাই ভাল। যেখানে উচ্চ আদালত পতিতালয়কে পুনঃস্থাপন করার নির্দেশ দিয়ে পতিতাদের পুনর্বাসন করে সেখানে পতিতা বলে কিছু থাকতে পারে না। উচ্চ আদালত যেখানে ‘কামকর্ম’ বলে নীতিগতভাবে মেনে নিয়েছে। সেখানে এ বৃত্তি বা কর্মকে ‘পতিতা’ বলে গালিদিয়ে সম্ভোধন করা নীতিগতভাবে সঠিক নয়। তবে আস-পাশের বাসীন্দাদের কোনরূপ সমস্যা সৃষ্টিকারী কোন কর্মকে কেউই নীতিগতভাবে মেনে নিতে পারে না। এবং আমাদের যা বলা এই কর্মকরণকে সামনে রেখেই বলা। আমরা যে, যা-ই হই না কেনো, প্রতিবেশীদের ন্যায়-অন্যায় কিংবা সুবিধা-অসুবিধার দিকে অবশ্যই আমাদের নজর রেখে কাজ করতে হবে। অন্ততঃ আমাদের জন্য এটাই নিয়ন হওয়া উচিৎ। দুনিয়াব্যাপী এটাই আইন। এটাই প্রথা। অন্যতায় আমরা কে(?) মনগড়া শব্দদিয়ে একটি কাজকে আকাম হিসেবে দেখার কিংবা আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে দেয়ার?
হারুনূর রশীদ
লণ্ডন, রোববার ১৮ই মার্চ ২০১৮