1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
আমরা পারিনি এটাই সত্য! কেনো পারিনি! - মুক্তকথা
বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০০ অপরাহ্ন

আমরা পারিনি এটাই সত্য! কেনো পারিনি!

সংবাদদাতা
  • প্রকাশকাল : সোমবার, ১ মে, ২০১৭
  • ৫৭৩ পড়া হয়েছে

হারুনূর রশীদ

ঝড়, বন্যা বা বানভাসী! ঘর-বাড়ী ভেঙ্গে দেয়া, ফসলহানী, পশুপাখীর সাথে কখনও কখনও মানুষেরও মৃত্যু! বর্ষা মৌসুম আসলেই নদ-নদীতে পানির উছলে উঠা, নৌকাডুবি কিংবা লঞ্চ-ষ্টীমার ডুবিতে জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি রোধ হওয়াতো দূরের কথা এসব যেনো আমাদের জীবনসঙ্গী হয়ে উঠছে দিন দিন। কিছুটা যে আমরা আগাইনি তা নয়। অন্ততঃ আগের মত এখন ঝড়ে বা বন্যায় লাখ লাখ প্রানহানী হচ্ছে না। এটা ঠিক। তবে শত শত প্রানহানী, সে লঞ্চ বা নৌকাডুবিতে হোক বা বানের জলে হোক, মূলতঃ হচ্ছে। আর কোটি কোটি মানুষের মানবেতর জীবন যাপন সেতো বলার অপেক্ষাই রাখে না। সাধারণতঃ এসব ঘটছে মেঘের মৌসুমে মেঘের কারণে। জানিনা আমাদের দেশে এমন কোন সংস্থা আছে কি-না যারা এসব বিষয়ে জরিপ চালান এবং ধ্বংস মৃত্যুর হিসেব রাখেন।
প্রাকৃতিক এই উৎপাত মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অনুসংগ হয়ে বাংলাদেশের জীবনব্যবস্থার সাথে এমনভাবেই জড়িয়ে গেছে যে এখন আর এ নিয়ে আগের মতো কেউ মাথা ঘামানোর প্রয়োজন মনে করেনা বলেই আমার মনে হয়। যদি তাই মনে করতো তা’হলে বন্যার প্রকোপ ভয়াবহ রূপ নেবার কথা নয়। দুনিয়ার বহু দেশ প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে যায়নি কিন্তু বন্যাকে নিয়ন্ত্রণ করেছে সফলভাবে। সে কালবন্যা হোক আর অকাল বন্যাই হোক। আমরা পারিনি এটাই সত্য! কেনো পারিনি!
জ্ঞান-বিজ্ঞানে আমরা এতো সাফল্য অর্জন করতে পারিনি যে ভূমিকম্প বা ঝড়কে আটকাবো। কিন্তু ঝড়-ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেয়া থেকে শুরু করে ঝড়ের সময় যাতে নিদেন পক্ষে মানুষ ও তাদের পশুকুল সহ ঘরবাড়ী ভেঙ্গে না যায়, মারা না পড়ে সে ব্যবস্থা অন্ততঃ করা যায় এবং তা মোটেও অসাধ্য কিছু নয়। কিন্তু হচ্ছেনা কিংবা আমরা পারছিনা! কিন্তু কেনো পারছিনা!
আমি নদীতীরের মানুষ। জন্মাবদি নদী ও বন্যা দেখে এতই অভ্যস্ত যে বন্যা আমার কাছে দুঃখের ছিলনা কখনও। কিন্তু এখন তার উল্টো হয়ে গেছে। আমাদের ছোটবেলায় আমার খেয়াল আছে নদীতে কোন বাঁধ ছিল না। আমাদের নদীর উজানে দেশের ও ভারতের পাহাড়ী এলাকা। বর্ষা মৌসুমে নদীতে বৃষ্টির পানি নামতো ধীরে ধীরে। নদীও গভীর ছিল। ফলে পানিতে নদী ভরে উঠতো ঠিকই কিন্তু বান-ভাসির ভয়ঙ্কর রূপ ধারন করতো না। আমরা দেখতাম ঢলের সাথে বন-জঙ্গলে ভেঙ্গে যাওয়া বৃক্ষরাজির ডাল-পালা পানির সাথে ভেসে আসতো আর মানুষজন লম্বা লম্বা বাঁশের তৈরী কোটা দিয়ে সেগুলোকে আটকে পাড়ে তুলে নিয়ে রৌদ্রে শুকিয়ে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করতো। ঢলের পানি নদী তীর ছোঁয়ে ছোঁয়ে নিচের দিকে নেমে যেতো। বাড়ী-ঘরে উঠতো না। বাড়ী-ঘরের খাল-বিল-হাওরগুলো পানিতে ভরে উঠতো। মানুষ অগুনতি মাছ শিকার করতো। সেই মাছ শিকারের জন্য বর্ষা আসার আগেই গ্রামীন শিল্পকর্মীরা মাছ ধরার নানা রংয়ের আর মাপের বাঁশের তৈরী যন্ত্রপাতি তথা ‘হুফা’, ডরি, উকা প্রভৃতি বাজারে এনে বিক্রি করতো। মধ্যবিত্ত গৃহস্থরা বাড়ীতেই কারিগর দিয়ে ‘হগড়া’ বানিয়ে নদী তীরে ডুবিয়ে রাখতো। এতে ছোট বড় অনেক মাছ ধরা পড়তো। গ্রামীন এই বাঁশ শিল্প একসময় কুঠীর শিল্পের আওতায় গ্রামীন অর্থনীতিকে বলবান করে তুলতো বর্ষা মৌসুমের আগেই। বর্ষা আর বানের জল তখনও ভয়াবহ বিপর্যয়ের রূপ নেয়নি। বরং এ ছিল প্রকৃতির আশীর্বাদ। আমার কৈশোর পর্যন্ত বর্ষা ও নদীকে আমরা দেখেছি সকল মানুষের জন্য বিশ্ব প্রকৃতির উপহার! এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে অভিশাপ। কিন্তু কেনো?

পাকিস্তান আমলের মাঝা-মাঝি সময়ে দেখলাম শুরু হলো নদীর তীরে বাঁধ দেয়া। কি বিষয়? বিষয় বন্যা নিয়ন্ত্রন। বাঁধ দিয়ে কিভাবে বন্যা নিয়ন্ত্রন! শুনা গেল চীনদেশ তাদের হুয়াংহু নদীতে বাঁধ দিয়ে হুয়াংহুর করাল ভয়াবহ বন্যা থেকে ক্ষেতের ফসল, বাড়ী-ঘর এমনকি প্রানের ক্ষয়-ক্ষতি সব রোধ করে দিয়েছে। অতএব আমাদেরও তাই করতে হবে।
মো: তারিকুজ্জামান রেজা তার এক প্রতিবেদনে লিখেছেন- ‘আর ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ শুরু হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীকে ভারতের বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর জন্যই চীন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছিল। সেইমতো সামরিক শাসক আইয়ুব খান ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের ক্ষমতা দখলের পরই চীন তাঁকে সেদেশে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। ১৯৫৯ সালে চীন সফরকালে আইয়ুব খানকে বোঝানো হয় ভৌগোলিক কারণেই পূর্ব পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে মিশে যেতে পারে। তাই এই অঞ্চলের জনগোষ্ঠীকে ভারত-বিরোধী হিসাবে তৈরি করতে হবে। আর এরই ধারাবাহিকতায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে জলসংকটের দায়ভার ভারতের কাঁধে চাপানোর চক্রান্ত শুরু করে। এ দেশের জনগোষ্ঠীকে ভারত-বিরোধী করার জন্য বন্যানিয়ন্ত্রণের নামে দক্ষিণাঞ্চলের নদী ও ছোট-বড় শাখানদী সমূহে, খালে বাঁধ দিয়ে কৃত্রিমভাবে জলসংকট সৃষ্টির প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। যার প্রভাবে ইতিমধ্যেই দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ নদী-খাল ভরাট হয়ে গিয়েছে।’ রেজা আরো লিখেছেন- ‘বাংলাদেশের নদ-নদী, খাল, হাওর বাঁওড়-বিল ভরাট হওয়ার জন্য ফরাক্কা ও তিস্তা ব্যারেজ শতকরা বিশভাগ দায়ী হলে আশিভাগ ক্ষতির জন্য দায়ী সারা দেশে অপরিকল্পিত ভেড়িবাঁধ, স্লুইজ গেট, ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণ।’
চীন বাঁধ দিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করেছে কিন্তু কোন গবেষণার ভিত্তিতে আমাদেরও হুবহু তাই করতে হবে তা বুঝার বা জানার বয়স তখন আমার ছিল না। তবে তখনই বিভিন্ন গোষ্ঠী মানুষের জল্পনা-কল্পনায় শুনতে পেয়েছিলাম, -এটা ঠিক হচ্ছেনা। আমাদের উচিৎ ক্রুগ মিশন রিপোর্ট বাস্তবায়ন করা।
কি ছিল সেই ক্রুগ মিশন! ১৯৫৪, ৫৫ ও ৫৬ সালের দেশ ডুবানো বন্যার ফলে এ নিয়ে গবেষণার ভিত্তিতে ১৯৫৭ সালে প্রণীত হয়েছিল ক্রুগ মিশন প্রতিবেদনটি। বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার উপর পরিচালিত ব্যাপক সমীক্ষার ওপর ভিত্তি করেই তৈরি করা হয়েছিল ‘ক্রুগ মিশন প্রতিবেদন’।
এই প্রতিবেদনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ ছিল একটি সরকারি কর্পোরেশন গঠন করা যার কাজ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়নের সমস্যাসমূহকে সমন্বিতভাবে একত্রিত করে দায়িত্ব ও ক্ষমতা সহকারে সেগুলির সমাধান করা। এই সুপারিশের ভিত্তিতে ১৯৫৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (East Pakistan Water and Power Development Board-EPWAPDA) – ইপিওয়াপদা গঠিত হয়েছিল। যা বর্তমানে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড নামেই খ্যাত। বিদ্যুৎ পৃথক হয়ে গেছে বেশ আগেই।
সেই ক্রুগ মিশন প্রতিবেদনের বহু সুপারিশের একটি ছিল নদী খনন। ক্রুগমিশন রিপোর্টে বলা হয়েছিল সেই সময়ের পূর্ব পাকিস্তানের মানে বর্তমানের বাংলাদেশের সকল বড় বড় নদী খনন করতে হবে। তবেই কোন বান আসবেনা।
অথচ পরবর্তীকালে প্রণীত পানি খাতের প্রকল্প ও কার্যক্রমসমূহ বাংলাদেশের পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার প্রথাগত ধরন পাল্টিয়ে করা হয়েছিল মূলত বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি নিষ্কাশন ও সেচের জন্য নানাবিধ কাঠামো নির্মাণ। যদিও পানি ব্যবস্থাপনায় যেসব কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয় সেগুলির মধ্যে দফায় এখনও লেখা আছে খননের কথা। কিন্তু নদী বা হাওর-বিলের বিষয়ে খননকাজ নেই বললেই চলে। প্রাকৃতিকভাবে বৃষ্টির জল জমা থাকার আধার হলো আমাদের এই হাওর-বাওর। শত শত বছরের পলি জমে জমে এগুলো এখন পলি-বালিতে টইটুম্বুর হয়ে আছে। পানি রাখবে কোথায়! আমার জানা ও দেখা মতে মৌলভীবাজারের হাইল হাওর বিগত সরকারের আমলে পুরোপুরি সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় ভরাট করে কৃষিক্ষেতের উপযোগী করা হয়েছিল। যা ছিল মারাত্মকভাবে বেআইনী প্রকৃতি বিরুদ্ধ কাজ। হাওরের বুকে গড়ে উঠেছে বাড়ী-ঘর পর্যন্ত। এখন আর হাওরের সেই রূপ নেই।

বানকে আটকানোর একমাত্র কার্যকরী উপায় আরো সবকিছুর সাথে-

  • ছোট-বড় নদী ও হাওর-বাওর খনন।
  • বলিষ্ট হাতে পাহাড়ের মাটি কেটে বিক্রি বন্ধকরা,
  • হাওর ভরাট করে ক্ষেতের জমি তৈরী বন্ধ করা
  • চোরাই পথে পাহাড়ী গাছ কেটে বনভূমি উজাড় করা বন্ধ করা এবং যেহেতু আমাদের বেশীর ভাগ নদীর উৎস ভারতে। সেহেতু ভারতে সংঘটিত একই চোরাই কাজ রোধে
  • সমন্বিত আন্তর্জাতিক মাত্রায় ব্যবস্থা নেয়া।
  • সারা দেশে অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ, ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণ বন্ধ করা।

(ক.  গ্রামীণ বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি নিষ্কাশন- দেশের অভ্যন্তরে এবং উপকূলীয় এলাকাসমূহে বাঁধ নির্মাণ ও পোল্ডার নিক্ষেপ; পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রক পয়েন্ট স্থাপন; নদী শাসন, নদীতীর প্রতিরক্ষা ও নদী খনন। খ.   শহর এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি নিষ্কাশন-  শহর রক্ষাবাঁধ; শহর এলাকা প্রতিরক্ষা স্থাপনা; রেগুলেটর, পাম্প ইত্যাদি। গ.   ক্ষুদ্র সেচ- গভীর ও অগভীর নলকূপ; রাবার বাঁধ; খাল পুনঃখনন। -বাংলাপিডিয়া)
সম্প্রতি  যদিও বন্যা সতর্কীকরণ ও ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত রাখার উপায় সম্বলিত বিকল্প ব্যবস্থার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু খনন বিষয়টি যেনো উদাও হয়ে গেছে। আর আমার মতে খাল-নালা, বিল-বাদল, হাওর-বাওর সব ক্ষেত্রেই এই খনন এখন খুবই জরুরী।

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT