1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
আমিষ খৃষ্টান - মুক্তকথা
শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:১০ পূর্বাহ্ন

আমিষ খৃষ্টান

হারুনূর রশীদ॥
  • প্রকাশকাল : সোমবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২১
  • ৮৭৬ পড়া হয়েছে

 

উত্তর আমেরিকার এক গুষ্ঠী মানুষ। ধর্মে খৃষ্টান। তাদের পরিচয় ‘আমিষ'(Amish) বলে। এই আমিষগন অদ্ভুত এক জীবন যাপন করে আসছেন অতীতের প্রায় ৩শত বছর ধরে। ধর্মীয়ভাবে বিশ্ব খৃষ্টানদের কাছে তারা ‘আমিষ মেনোনাইট’ বলে বেশী খ্যাত।
সে ১৬শ শতাব্দীর কাহিনী। জেকব আম্মান্ন নামের একজন(১৬৪৪-১৭৩০খৃঃ) খৃষ্টীয় মতাবলম্বী নেতা তার নিজের কিছু পদ্বতিতে খৃষ্টীয় ধর্ম পালনের পথ দেখালে সেখান থেকেই জন্ম নেয় এই ‘আমিষ’ গোত্রের খৃষ্টবাদীদের। ওই সময় খৃষ্টপন্থীদের মাঝে বিভক্তি দেখা দেয় বিশেষ করে সুইজারল্যাণ্ড, আলসেইচ ও দক্ষিন জার্মানীতে। কিছু কিছু রুশিয়া ও হল্যাণ্ড-এও।এই জেকব আম্মান্নের মতবাদ ছিল এরূপ যে পা ধুয়ে গীর্জায় প্রবেশ করতে হবে। গীর্জার পরিচারকদের নির্দিষ্ট পোষাক পড়তে হবে এবং দাড়ি কাটা যাবে না। এ ছাড়াও তার মতবাদে আর একটি বিষয় ছিল যে রাষ্ট্রীয় গীর্জায় কেউ যেতে পারবে না।তার এই মতবাদ প্রচারের ফলে ইউরোপে খৃষ্টানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়। আর এই বিভেদের কারণেই সম্ভবতঃ আমিষগন ইউরোপ ছেড়ে উত্তর আমেরিকায় যেতে শুরু করে ১৮শতাব্দী থেকে। বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত তারা ইউরোপ ত্যাগ করতে গিয়ে বর্তমানে ইউরোপে তাদের সংখ্যা এতই কমে গিয়েছে যে খুঁজে বের করা মুষ্কিল। বৃটানিকা মতে প্রথমে তারা পেনসিলভানিয়ার পূর্বাঞ্চলে বসত গড়ে তুলে। যেখানে আজও একটি বৃহৎ আমিষ গুষ্ঠী রয়েছে।মূলতঃ খৃষ্টীয়বাদীদের মধ্যে বিভেদ ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি হয় ১৮৫০ থেকে। কারণ, এ সময়ের যে সমাজ পরিবর্তন আসে তার সাথে আমিষপন্থীদের বিরোধ বাধে। তারা এই পরিবর্তনকে মেনে নিতে পারেনি। অন্য পক্ষ খুব সহজেই এই পরিবর্তনের সাথে হাত মিলিয়ে নেয়। আমিষ পন্থীগন তাদের পুরোনো ধ্যান ধারণা থেকে সরে আসতে পারেনি। তারা পুরোনো আচার-আচরণ, প্রথা ও কাহিনী নিয়ে জীবন চালাতে থাকে। ফলে পরবর্তী ৫০ বছরে তারা দুই তৃতীয়াংশ আমিষ মতাবলম্বী তাদের নিজেদের গীর্জা গড়ে তোলে এবং তাদের গুরু জেকব আম্মান্নের পথে চলতে থাকে।একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে দেখা পাওয়া যায় প্রায় ২,৫০,০০০ আমিষ মতাবলম্বী খৃষ্টান মানুষের, যারা মূলতঃ আমেরিকা ও ক্যানাডায় বসবাস করছেন। এদের অধিকাংশের বাস পেন্সিলভানিয়া, ওহিও, ইণ্ডিয়ানা, লোয়া, ইলিয়নস এবং কেনসাস। আরো অন্যান্য কিছুদের পাওয়া যায় উইসকন্সিস, মাইন, মিশৌরী এবং মিনেসোটা-তে।এরা যারা গীর্জা গড়ে তুলতে পারেনি, তারা সাধারণতঃ একে অন্যের ঘরেই ধর্মীয় উপাসনায় মিলিত হয়। তাদের সম্প্রদায়ে ৭৫জন মতবাদী হয়ে গেলে এদের একটি ‘চার্চ ডিষ্ট্রিক্ট’এ ভাগ করে দেয়া হয়। প্রত্যেক ‘ডিষ্ট্রিক্ট’এর একজন বিশপ, ২ থেকে ৪জন প্রচারক এবং একজন বয়স্ক গুরু। তাদের কোন সম্মেলন হয় না, তাদের নেই কোন মিশনদল কিংবা সমবায় এজেন্সি।

পা ধুয়ে গীর্জায় প্রবেশ করতে হবে।

নতুন এই পরিবর্তনকে তারা মেনে নিতে পারেনি।

দাড়ি কাটা যাবে না।

বিশেষ করে ভিন্ন মতাবলম্বী খৃষ্টানদের কাছ থেকে সরে থাকা, পরিবার, সম্প্রদায় ও বিশ্ব থেকে আলগা থাকাই হলো এসকল আমিষদের মূল করণীয়। প্রতিদিনকার জীবনযাত্রা চলে একটি অলিখিত নিয়মকানুনের মধ্যদিয়ে যার নাম তাদের ভাষায় “অর্দনাঙ্গ” এবং “মেইডাঙ্গ”। ‘মেইডাঙ্গ’ হলো যারা গুষ্ঠীর নিয়ম ভঙ্গ করে তাদের প্রতি কি আচরণ বা শাস্তি হবে সে বিষয় নিয়ে কথা বলে। ধর্মীয় অনুশাসনের বিষয়ে আমিষ ও মেনোনাইটস-দের মধ্যে আবার কিছুটা ভিন্নতা আছে।

আমিষগন বছরে দু’বার ‘হলি কম্যিউনিয়ন’ উৎসব পালন করে থাকে এবং পা ধুয়া বিষয়টি উভয় পক্ষই খুব দরদ দিয়ে পালন করে থাকে। তাদের ভাষায় এটি যীশু খৃষ্ট নিজে করে দেখিয়ে গিয়েছেন। ১৭ থেকে শুরু করে ২০ বয়সের মধ্যে গোত্রের মানুষকে ধর্মে দীক্ষিত করা হয়ে থাকে এবং সদস্যপদ দেয়া হয়। ধর্মীয় আচারানুষ্ঠান সাধারণতঃ ‘হাই জার্মান’ ও ‘পেন্সিলভানিয়া ডাচ’ ভাষায় সম্পন্ন করা হয়। ঘরে এবং সাধারণ জীবনে ইংরেজী ভাষা ব্যবহৃত হয়। প্রার্থনানুষ্ঠান চক্রাকারে প্রত্যেকের ঘরে বসে। একটি বিশাল ‘ওয়াগন’ বিশিষ্ট গাড়ী বসার বেঞ্চ, বর্তন ও খাবার নিয়ে প্রার্থনানুষ্ঠানের বাড়ীতে সময়মত হাজির থাকে।

প্রত্যেক আমিষ-এর ঘরে একটি জায়গা রাখা হয় যেখানে বাইবেলের সাথে ধর্মের জন্য শহীদ আমিষ ও মেন্নোনাইট-দের ছবি রাখা হয় তাদের সম্মানের সাথে স্মরণ করার উদ্দেশ্যে।
“বাজেট” নামে তাদের একটি পত্রিকা ১৮৯০সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল যা আজও সম্প্রদায়ের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

আমিষ নামের এই জনগুষ্ঠী তাদের সাদামাটা বস্ত্র পরিধানের জন্য সকলের কাছে সুপরিচিত। তাদের এই পোষাক সবই নিজেদের হাতে তৈরী পোষাক এবং খুবই সহজ ও জাঁকজমকহীন সহজ-সরল ভাবের। বালক ও পুরুষেরা কালো টুপি, ঘনকালো স্যুট, সোজাসুজি কাটা কোট, মোটা পায়ের ‘সাসপেন্ডার’ লাগানো প্যান্ট, টিকসই রংয়ের সার্ট এবং কালো জুতা ও মোজা। যদিও তাদের সার্টের বোতাম লাগানো হয় কিন্তু অতি পুরোনো আমলের বর্শীমত কাটা দিয়ে তাদের কোট ও ভেস্ট পড়া থাকে। বিয়ের পর ছেলেকে দাড়ি রাখা শুরু করতে হয় তবে মোচ রাখতে মানা। আমিষ মহিলা ও মেয়েরা লম্বা হাতের কামিজ, পা পর্যন্ত লম্বা ফতোয়া, টুপি, কাঁধে সাল ও কালো জুতা-মুজা পরিধান করে থাকে। তাদের টুপি ও এপ্রোন আলপিন কিংবা ‘স্নেপস’ দিয়ে গেঁথে রাখা হয়। আমিষ মহিলারা কোন সময়ই তাদের চুল কাটে না। কোন নমুনার অলংকার পড়েনা। আচার-আচরণ ও চলা-বলায় আমিষ জনগুষ্ঠী সেই অতীতের ১৭ শতাব্দীর ইউরোপীয় চাষী সম্প্রদায়ের মত চলা ফেরাকে খুবই মূল্য দিয়ে থাকে এবং সেভাবেই চলে আসছে। তারা বর্তমানের সাথে কোনভাবেই একাত্ম হতে নারাজ।

বছরে দু’বার ‘হলি কম্যিউনিয়ন’ উৎসব পালন করে থাকে এবং পা ধুয়া বিষয়টি উভয় পক্ষই খুব দরদ দিয়ে পালন করে।

প্রতিদিনকার জীবনযাত্রা চলে একটি অলিখিত নিয়মকানুনের মধ্যদিয়ে যার নাম তাদের ভাষায় “অর্দনাঙ্গ” এবং “মেইডাঙ্গ”।

তারা বর্তমানের সাথে কোনভাবেই একাত্ম হতে নারাজ।

একটি আমিষ জনগোষ্ঠীর এলাকা, পেন্সিলভানিয়া।

‘হেক্স চিহ্ন’

বিদ্যুতের ব্যবহার আমিষ সম্প্রদায়ের মাঝে নিষিদ্ধ।

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো আমিষ জনগুষ্ঠী এই আধুনিক যুগে বসবাস করেও আধুনিক কোন মোবাইলতো দূরের কথা টেলিফোনই ব্যবহার করেনা।

তারা ঘোড়ায় টানা গাড়ীতে চলে।

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো আমিষ জনগুষ্ঠী এই আধুনিক যুগে বসবাস করেও আধুনিক কোন মোবাইলতো দূরের কথা টেলিফোনই ব্যবহার করেনা। তারা সেই অতিপুরাতন আমলের টেলিফোন ব্যবহার করে তাও সম্প্রদায়ের খুবই জরুরী কোন কাজ হলে। মোটর চালিত সবকিছুতেই তাদের অনিহা, তারা মোটর চালিত কিছুই খুবই জরুরী না হলে ব্যবহার করেনা। মোটরযানের পরিবর্তে তারা বাইসাইকেল ব্যবহার করে, তারা ঘোড়ায় টানা গাড়ীতে চলে। ঘোড়ায় টানা সেই গাড়ীগুলোর আসন সেই পুরাতন আমলের বাক্সের মত যাদের রং দেখে আমিষদের গোত্র বুঝা যায়।

বিদ্যুতের ব্যবহার আমিষ সম্প্রদায়ের মাঝে নিষিদ্ধ। একেবারে খুবই জরুরী কোন কাজ যদি হয়, যা পুরো সম্প্রদায়ের কোন মঙ্গল বিধানে কাজ করবে এমন হলে খুবই সীমিতভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে থাকে। দৈনন্দিন সাংসারিক কাজে বিদ্যুতের পরিবর্তে বোতলে ভরা গ্যাস তারা ব্যবহার করে থাকে। এ যুগে বাস করেও তারা লেন্টার্ন ব্যবহার করে থাকে।

অতি সম্প্রতি নতুন এক ধর্মীয় নির্দেশে তারা গাড়ী, বিদ্যুৎ ও টেলিফোন ব্যবহারের অনুমতির অনুমোদন করা হয়েছে।


Amish lifestyle. Sugarcreek. Millersburg. Ohio.

বাদ্যযন্ত্র বাজানোও প্রাচীনপন্থী আমিষদের নিষিদ্ধ!

অতি পুরাতন গাধা বা ঘোড়ায় টানা লাঙ্গল ব্যবহার করে কৃষি উৎপাদন করে থাকে।

হেক্স চিহ্ন দুষ্ট বদশক্তিকে বিতারিত করে এমনই তাদের ধারণা।

পেন্সিলভানিয়ার আমিষদের একটি ক্ষেতের মাঠ।

আমিষগন খুব ভাল মানের কৃষক। তারা নিজেদের প্রয়োজনীয় সকল খাদ্য সামগ্রী নিজেরাই মাঠে কাজ করে উৎপাদন করে থাকে। কৃষি উৎপাদনের জন্য তারা আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে না। অতি পুরাতন গাধা বা ঘোড়ায় টানা লাঙ্গল ব্যবহার করে কৃষি উৎপাদন করে থাকে।

শষ্যরাখার গোলাঘর তৈরীতে আমিষগন খুব নিপুন। গোটা সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ সকলে মিলে এই গোলাঘর নির্মান করে থাকে। গোলাঘর তৈরীর সময় মেয়েরা পুরুষদের খাবার ব্যবস্থা করে থাকে। গোলাঘর নির্মাণের পর প্রতি গোলাঘরে একটি করে ‘হ্যাক্স’ চিহ্ন আঁকা হয়। এ চিহ্ন দুষ্ট বদশক্তিকে বিতারিত করে এমনই তাদের ধারণা। ‘পেন্সিলভানিয়া ডাচ’ আমিষদের মধ্যে এর প্রচলন রয়েছে। এ প্রথা, আমিষদের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীনমত, সম্প্রদায়, শিল্প ও কুটীর শিল্পের কথাই তাদের স্মরণে রাখতে সহায়তা করে।

আমিষগন তাঁদের জীবনযাপনের ছবি তোলায় খুব একটা উৎসাহবোধ করেন না। যদিও ছবি তোলাতে তেমন আপত্তি করেন না তবে তারা মনে করেন ছবি তোলা বিষয়টি তাদের ‘সেকেণ্ড কমাণ্ডমেন্ট’কে লঙ্ঘন করে। এই একই কারণে আমিষ উঠতি বয়সের বালিকারা যে পুতুল দিয়ে খেলা করে সে পুতুলের মাথা থাকে না।

কাজে, খেলাধূলায়, বাড়ীতে কিংবা গীর্জায়; গান অবশ্য আমিষ জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে সেখানেও নিজস্ব কিছু গোত্রসংগীতই সাধারণভাবে গাওয়া হয়ে থাকে। দলবেঁধে গান গাওয়া আছে তবে ঐকতানে নয়। একই পরদার ধ্বনিতে গাইতে হয়।

 

বাদ্যযন্ত্র বাজানোও প্রাচীনপন্থী আমিষদের নিষিদ্ধ! কারণ তারা বিশ্বাস করেন এটি একটি মানুষের তৈরী কাজ যা আমিষ জীবনযাত্রায় যে অবমানিতাবস্থা, নম্রতা ও লৌকিকতাবর্জিত মূল্যবোধ মনের গভীরে কাজ করে বাদ্যযন্ত্র এর বিপরীত এবং যীশু খৃষ্ট তা নিষিদ্ধ করে গেছেন। তবে নিচক ব্যক্তিগতভাবে বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারেন যেমন ‘একোর্ডিয়ান’ অথবা ‘হারমোনিকা'(হারমোনিয়াম) তবে কখনই জানসাধারণ্যে নয়।

তোষক, রেজাই বা লেপ আমিষ নারী ও বালিকারা সম্মিলিতভাবে খুবই সতর্কতার সাথে তৈরী করে থাকে। তাদের তৈরী এ সামগ্রী পর্যটকদের কাছে খুবই প্রিয় মনোহারী একটি জিনিষ। এই তোষক বা রেজাই তৈরী আমিষ নারীদের জীবনে একধরণের গোত্রীয় মেলামেশার মাধ্যমে আয়েশী অবসর কাটানোর সুযোগ তৈরী করে। এ ধরনের কাজ আমিষদের গোত্রীয় পূণ্য ও সহযোগীতা ভাব প্রকাশ করে।

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT