হারুনূর রশীদ।।
একটি জাতীয় দৈনিকের খবর, বাংলাদেশ ব্যাংকের জমাইয়া রাখা ও পরে চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত আনতে এবং চোরদের (হ্যাকার) ধরতে চীনের সহায়তা চাইবে বাংলাদেশ। কারণ আমেরিকার “ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক” থেকে বাংলাদেশের জমিয়েরাখা অর্থ চুরির সাথে চীনের দু’জন চোর জড়িত রয়েছে বলে ইতিমধ্যেই না-কি একাধিক তদন্ত সংস্থার তদন্তে জানাগেছে। আর একারণে বাকী চোরদের তথ্য পেতে ও চুরি যাওয়া অর্থের বাকী অংশের খোঁজ পেতেই চীন সরকারের সহায়তা চায় বাংলাদেশ। একাজে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সেদেশের আইন শৃঙ্ক্ষলা বাহিনীর সহযোগীতা চাইবে বাংলাদেশ।
খবরের এখানেই শেষ নয়। ওই জাতীয় দৈনিক আরও লিখেছে, ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর আগে অর্থচুরি ঘটনার দায় নিতে একাধিকবার অস্বীকার করলেও এবারে অর্থোদ্ধার বিষয়ে সর্বোচ্চ সহায়তা করবে বলে জানিয়েছে। তবে শর্ত দিয়েছে যে বাংলাদেশ যেনো আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা না করে। কেননা মামলা হলে বিষয়টি পুরোপুরি আদালতে চলে যাবে। তখন ফিলিপাইন কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাইলেও বাংলাদেশকে সহায়তা দিতে পারবে না বলে জানিয়েছে।
আর আশংকার বিষয় হলো এখানেই। কারণ আগামী দেড়বছরের মধ্যে অর্থচুরির এ বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দায়ের না করলে এর পরে আর বাংলাদেশ মামলা করার সুযোগ পাবে না।
ফিলিপাইন শুধু আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা না করার শর্তই দেয়নি, ওরা বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা যাদের নাম এই অর্থ চুরির অভিযোগের সাথে উঠে এসেছে তাদের বিষয়ে তথ্য জানতে চেয়েছে। পক্ষান্তরে, এসব বাংলাদেশের আভ্যন্তরীন বিষয় সুতরাং এদের বিষয়ে কোন তথ্য দেয়া যাবে না বলে বাংলাদেশ ফিলিপাইনকে জানিয়ে দিয়েছে।
এখন কথা আসে, তা’হলে ফিলিপাইন কি অবশেষে বাংলাদেশকে সহায়তা দেবে? আবার এই সহায়তা দেবো দিচ্ছি করে করে যদি নির্দিষ্ট ওই দেড় বছর সময়টা পার হয়ে যায় তা’হলে দেশ অবশেষে আম-ছালা দু’টোই হারাবে নাতো!
বিষয়টি নিয়ে এতোসব টানাপোড়েন থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা ওই জাতীয় দৈনিককে বলেছেন-“আশার কথা হচ্ছে ফিলিপাইন আমাদের সহায়তা দিতে সম্মত হয়েছে।”
সাধারণ জ্ঞান সম্পন্ন যে কোন মানুষেরই মনে এই প্রশ্ন আশা অযৌক্তিক নয় যে, কি করে কথা দিল ফিলিপাইন আমাদের! অর্থ চুরির সাথে জড়িত যেসব চোরদের বিষয়ে তথ্য ওরা জানতে চেয়েছে, বাংলাদেশ দিতে পারবে না বলে দিয়েছে। তাতে করে ওই কর্মকর্তা কিসের উপর ভরসা করে বলতে পারেন যে ফিলিপাইন সহায়তা দেবে!
অথচ ফিলিপাইন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশ আগেই জানিয়েছিল চুরি হওয়া ৮ কোটী ১০ লাখ ডলার থেকে মাত্র দেড়কোটী ডলার ফেরত এলেও বাকী ৬কোটী ৫৮লাখ ডলার কোথায় কার কাছে রয়েছে তার কোন হদিস তারা করতে পারেনি। এই অর্থ উদ্ধারের সম্ভাবনাও খুব কম। এই কম সম্ভাবনাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে অবশ্যই হেকারদের চিহ্নিত করতে হবে। একই সাথে বাংলাদেশ ব্যাংক বা ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের(আরসিবিসি) দায়ী কর্মকর্তাদের কাছ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এর পরেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন উপরের স্তরের কর্মকর্তা বলেছেন চুরি যাওয়া অর্থ বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে একজন সাংবাদিকের সাথে আলাপ হলে তিনি বললেন- সহায়তা দেবে এইকথা বলে বলে যদি মামলার সময়টা পার করে দিতে পারে, তখন বাংলাদেশ কি করবে? ওই সাংবাদিক ভদ্রলোক উল্টো আমার কাছেই জানতে গিয়ে বলেন যে, এই খবরটি পড়ে কি অগ্রগতি হয়েছে কিছু বুঝতে পেরেছেন?