1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
ইতিহাসের “শোয়াকিন” এখন রিক্ত নিঃস্ব - মুক্তকথা
শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:২৭ অপরাহ্ন

ইতিহাসের “শোয়াকিন” এখন রিক্ত নিঃস্ব

সংবাদদাতা
  • প্রকাশকাল : শুক্রবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
  • ৮২৭ পড়া হয়েছে

Air-suakin-seer2-1981হারুনূর রশীদশুক্রবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬।।

‘শোয়াকিন’। একটি আরবী শব্দ। বাংলা অর্থ দাঁড়ায় বসবাসকারী বা বসতি স্থাপনকারী। আরেকটি অর্থও হয় আর সে ব্যাখ্যাটি হল ‘ইষ্পাতের মত শক্তভাবে থাকা’।

এই নিবন্ধের ‘শোয়াকিন’ বলতে গেলে অনেকটা পরিত্যাক্ত এক সাগর তীরের ঘাট এখন, শহর নয়। অথচ এই ঘাটই ছিল কালের রথ থেকে দেখা এক মূখর দ্বীপবন্দরের নাম। বহু প্রাচীন অতীতের এক সময় এই বন্দর মানুষের আনা-গোনায় মুখর ছিল, ছিল কর্মব্যস্ত। গড়ে উঠেছিল শহর হিসেবে। এতোকিছু বলার তেমন প্রয়োজন ছিল না কিন্তু দ্বীপবন্দর “শোয়াকিন” তার যৌবনে বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষি হয়ে নুব্জ দেহে এখনও দাঁড়িয়ে আছে লোহিত সাগরের তীর ঘেঁষে। ফারাহ বা সম্রাট টলেমী থেকে আলেকজন্ডার, মামলুক সুলতান বেবারস(বেবর) থেকে পর্যটক ইবনে বতুনা পর্যন্ত কারো নজর এড়িয়ে যায়নি এই বন্দর। আজ সে পরিত্যক্ত, নেই আগের জৌলুস, হারিয়ে গেছে ‘ফাতেমিদ’ বাদশাহদের অস্ত্রের ঝনঝনানি। আর তাই, জ্ঞানপিপাসু পাঠকদের তৃপ্তির জন্য একটু তলানিতে গিয়ে “শোয়াকিন”কে দেখার প্রয়াস করেছি মাত্র।

পিছিয়ে পড়া ওই শোয়াকিনের মানুষজনদের ভাষা ‘বেজা’। আর ওই ‘বেজা’ ভাষায় যারা কথা বলেন তাদেরও ‘বেজা’ বলে ডাকা হয়। আমরা বাঙ্গালীদের মতই। আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলি তাই আমরা ‘বাঙ্গালী’ ঠিক ওই ভাবেই ‘বেজা’ ভাষায় কথা বলে তাই তাদের পরিচয় ‘বেজা’ বলেই। আর ওই একটি কারণই আমাকে উৎসাহিত করেছে ওদের বিষয়ে জানতে। এ ছাড়াও, আমরা যেভাবে বাংলাদেশ এবং বলতে গেলে গোটা ভারতেরই উত্তর পূর্বাঞ্চলে বাস করি ঠিক তেমনি ওই ‘শোয়াকিন’ শহর লোহিত সাগরের পশ্চিম তীরে আফ্রিকার বিশেষ করে সুদানের উত্তর পূর্বাঞ্চলের একটি দ্বীপ জনপদ।

fishermanআরবীয়ান, সুদানীসহ দুনিয়ার মানুষ ‘শোয়াকিন’ বলে চিনলেও, বেজা’রা কিন্তু ‘শোয়াকিন’ বলে না। তারা বলে ‘ইউশুক’। ‘উইকিপিডিয়া’ বলছে- খুব সম্ভবতঃ আরবী ‘শুক’ শব্দ থেকে ‘ইউশুক’ কথাটি এসেছে। আরবী ‘শুক’ এর বাংলা দাঁড়ায় ‘বাজার’। উনিশ শতকের শেষ পর্যন্ত লিখিতভাবে “শাওয়াকিন” ছিল। কিন্তু কথ্য ভাষায় “শোয়াকিন”ই ডাকা হত যা এখনও চালু আছে।

গ্রীক-মিশ্রি(গ্রীক-মিশরীয়) দার্শনিক ক্লাউডিয়াস টলেমায়াস সংক্ষেপে যাকে আমরা টলেমি বলে জানি এই “শোয়াকিন” দ্বীপকে বলেছিলেন-“port of good hope”। টলেমি খৃষ্টপূর্ব সেই তৃতীয় শতাব্দীর মানুষ। এতেই “শোয়াকিন”এর প্রাচীনত্ব অনুধাবন করা যায়। খৃষ্টপূর্ব সেই সময় থেকে উনিশ শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত অন্ততঃ ৩ হাজার বছর সময় ধরে এই “শোয়াকিন” ছিল প্রাচীণ ও মধ্যযুগীয় সম্রাটদের পরাভব শৌর্য্যবীর্য্য আর ক্ষমতার প্রতীক। লোহিত সাগরের পশ্চিম তীর আর সুদানের উত্তর-পূর্ব দিক নিয়ে অবস্থিত এই “শোয়াকিন” আজ নিষ্প্রভ পরিত্যক্ত। সবকিছুই সময়!
ইতিহাস থেকে যতদূর জানা যায়, খৃষ্টপূর্ব ১০ম শতাব্দীতে “শোয়াকিন” বন্দরের সূচনা। মিশরের ফারাহ’দের (ফেরাউন=প্রাচীণ মিশরের বাদশাহ্গন) সময় থেকেই এই “শোয়াকিন” বন্দরের উত্তান বা শুরু। প্রাচীন আরবের সাথে এই বন্দর দিয়েই দাস বেচা-কেনার ব্যবসা চলতো।
ইসলামের বিকাশ ও বিস্তারের পর এই বন্দর বেশ কয়েক শতাব্দী সারা আফ্রিকার মুসলমানদের জন্য মক্কায় হজ্জ্বপালনে যাত্রীদের যোগাযোগের একমাত্র বন্দর হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। অতীত ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছিল, গড়ে উঠেছিল কারুকার্যময় ফটক দুয়ার ঘেরা ব্যস্ততম বন্দরের পাশা পাশি মনোরম বিলাসী আবাস আর করাল পাথরের অট্টালিকা।

120513802.S9PFEGaC.SudanDec092664লিখিতভাবে দ্বীপবন্দর “শোয়াকিন” নামের উল্লেখ প্রথম পাওয়া যায় ৯বম শতাব্দীর ইয়েমেনী ঐতিহাসিক আবু ফিরাস আল-হামদানির পুস্তকে। তিনি “শোয়াকিন”কে একটি প্রাচীণ শহর বলে উল্লেখ করেছেন। আরবীয়ান এই হামদানি একাধারে ছিলেন ভূ-গোলবিদ, কবি, ব্যাকরণবিদ, ঐতিহাসিক এবং জোতির্বিজ্ঞানী।

১২৬৪ সালের কাহিনী। মামলুক সুলতান বাবরের (বেবার) আমলের এক ঘটনা। তখন “শোয়াকিন”এর এক শাসক, নাম ছিল ‘আলা আল দিন আল আসবানি’। বন্দরের নিকটেই সাগরে ডুবে মারা যাওয়া এক ব্যবসায়ীর সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেন। এতে মামলুক সুলতান বাবর খুব অসন্মানিতবোধ করেন। যুদ্ধের দামামা বেজে উঠে! ‘কাস’ শহরের শাসক ও তার জেনারেল ইকমিন-আলা-আলদিনকে পাঠালেন “শোয়াকিন” এর শাসককে শায়েস্তা করার জন্য। আল আসবানি পালিয়ে গেলেন শহর ত্যাগ করে। দুই শহরে এই যুদ্ধ হানাহানির সময় নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় “শোয়াকিন”-এ পালিয়ে আসা কয়েক হাজার মানব সন্তানকে ফাতিমিদরা কতল করে। রীতিমত ছিল এখনকার সময়ের গণহত্যা!
১৩১৭ খৃষ্টাব্দে মামলুকরা প্রথম “শোয়াকিন” বন্দরের দখল নেয়। তখনও বন্দরটি খৃষ্টান অধ্যুষিত ছিল। ১৩৩২ সালের ইবনে বতুতার লিপিতে আছে- “আল-শরিফ জায়েদ ইবনে-আবি-নুমায়ে ইবনে-আজলান” নামে “শোয়াকিন” এর মুসলমান সুলতান আছেন। মক্কার এক শেরিফের সন্তান তিনি। স্থানীয় উত্তরাধিকার আইনের অধীনে তার মামার উত্তরাধিকার সূত্রে স্থানীয় নেতৃত্বে আসীন হয়েছেন।

Suakin,national_bank১৫১৭ খৃষ্টাব্দ। ওতোমান সুলতান সেলিম-১ জয় করেন বন্দর “শোয়াকিন”। এ সময় ওতোমান সাম্রাজ্যের রাজ্য “হেবস” এর প্রধান ব্যক্তিত্ব ‘পাশা’র আবাস হিসেবে পরিচিতি পায় “শোয়াকিন”। এ সময়ই বন্দরের ক্ষয় শুরু হয়। এক পর্যায়ে চলে যায় পর্তূগীজ ব্যবসায়ীদের হাতে আর স্থানীয়রা বন্দর ছাড়তে শুরু করে।

এর পর আসে ইংরেজগন। হরাশিও হার্বার্ত কিচেনার, বৃটিশ ফিল্ড মার্শাল একসময় এই “শোয়াকিন” দ্বীপ বন্দরে তার হেডকোয়ার্টার স্থাপন করেন। ১৯২২ সাল। বৃটিশরাও “শোয়াকিন” ছেড়ে চলে যায়। এর পর থেকেই “শোয়াকিন” এখন পরিত্যক্ত। গৌরব, জৌলুস সব হারিয়ে ইতিহাসের “শোয়াকিন” এখন রিক্ত নিঃস্ব। ৩ হাজার বছরের অনেক হানা-হানি-যুদ্ধ, গণহত্যা আর হাতবদলের ক্ষত নিয়ে শুধু দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষি হয়ে।

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT