মুক্তকথা নিবন্ধ।। সময় কারো একভাবে যায় না। সে ব্যক্তি হোক বা কোন সংগঠন হোক। সৃষ্টি জগতের সবকিছুই পরিবর্তনশীল। আজ আমার পক্ষে তো কাল তোমার পক্ষে। অনাদি অনন্ত কাল থেকে এভাবেই চলে আসছে। এ সৃষ্টি জগতের এক অমোঘ নিয়ম। একটি অনলাইন পড়তে গিয়ে মনে পড়ে গেলো অতীতের কিছু হৃদয়ে দাগকাটা সময় ও মানুষের কথা। সময়টি ছিল ১৯৭৯ সালের ৪ঠা এপ্রিল। দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ বসেছে। সংসদে আওয়ামীলীগ আব্দুল মালেক দলের সাংসদ মাত্র ৩৯জন। প্রয়াত মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, মিজান দলের সাংসদ মাত্র ২ জন। অন্যান্যর মধ্যে সংসদে আছেন, তৎকালীন একতা পার্টির নেতা সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত। অপরদিকে সংসদে বিএনপির আসন ২০৭জনের। সংখ্যা গরিষ্ঠ শুধুই নয় সংসদে বিএনপি একক সংখ্যা গরিষ্ঠ দল। দুই তৃতীয়াংশ সংসদ সদস্য বিএনপি দলের। ফলে সংসদে কোন সংবিধান সংশোধনী পাশ ছিল তাদের জন্য সময়ের ব্যাপার মাত্র। কুখ্যাত ইনডেমনিটি বিল নিয়ে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বিল উথাপন করলেন তৎকালীন আইন প্রতিমন্ত্রী ব্যারিস্টার আবদুস সালাম তালুকদার। বিলে কুখ্যাত ইমডেমনিটি অধ্যাদেশসহ অনেকগুলো মানবতা বিরোধি এবং নিপীড়ন মূলক কালো আইনকে বৈধতা দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। সংসদের বিরোধী দলের নেতা আসাদুজ্জামান খান এই বিলের তীব্র বিরোধীতা করলেন। এনিয়ে বিরোধী দলকে বক্তব্য রাখার সুযোগ দেয়া হলো না। পয়েন্ট অব অর্ডারে দাড়িয়ে একতা পার্টির সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছিলেন, “আজ সংখ্যা গরিষ্ঠতার জোরে আপনারা বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার রোধ করেছেন। ৭২ এর সংবিধানকে ছিন্নভিন্ন করছেন। কিন্তু ভুলে যাবেন না, এই দিন আপনাদের থাকবে না। যে অন্যায় আজ আপনারা করছেন, সেই অন্যায়ের বিচার এই সংসদেই হবে। তখন আপনাদের পক্ষে কথা বলার লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। সংসদে আপনাদের দলের লোক খুঁজতে দূরবীন লাগবে।” সুরঞ্জিত আরো বলেছিলেন, “ইতিহাস বড় নির্মম! কাউকে ক্ষমা করে না, আপনাদেরও করবে না।”
বাকেরগঞ্জ ১৪ থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এডভোকেট সুধাংশু শেখর হালদার পয়েন্ট অব অর্ডারে দাড়িয়ে বলেছিলেন “আজ আইনের শাসন এবং সংবিধানকে যেভাবে পদদলিত করা হলো একদিন ইতিহাস তার বিচার করবে। এই সংসদে একদিন আপনাদের অপকর্মের বিচার হবে। সেইদিন আপনাদের অনুশোচনা ছাড়া কিছুই করার থাকবে না।” তিনি আরো বলেছিলেন সাড়ে চার লাখ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে বিনা বিচারে আটক রেখেছেন। তাঁদের উপর নৃশংস নির্যাতন চালানো হচ্ছে। তিল তিল করে কারাগারে মুক্তিযুদ্ধাদের বিনা চিকিৎসায় মারা হচ্ছে। এই পরিণতি একদিন আপনাদেরও হবে। তখন বুঝবেন, আজ কি ভুল করছেন। আওয়ামী লীগের একাংশের নেতা মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেছিলেন- “সংখ্যা গরিষ্ঠতার বড়াই কইরেন না। ২০৭, সাত হয়ে যাবে। তখন বুঝবেন ‘গণতন্ত্র’ কত দরকার।” আজ আমাদের কথা বলতে দেন না। জেলে পুরেন, হত্যা করেন। আজ যদি এই বিল পাশ করেন তাহলে প্রতিহিংসার আগুনে আপনারাও পুরবেন।”
ইতিহাস ঠিকই নির্মম! বড়ই কঠোর। ৪১ বছর পর আজ সংসদে বিএনপির সাংসদ সংখ্যা মাত্র ৫ জন। তাঁদের খুঁজতে সত্যি দুরবিন লাগে। যে প্রতিহিংসার সূচনা জিয়াউর রহমান করেছিলেন সেই প্রতিহিংসার আগুনে আজ পুরছেন তাঁর স্ত্রী-পুত্র-পরিবার আর তাঁর দল। তথ্যসূত্র: গণমাধ্যম