মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ২৩৮ নম্বর আসন মৌলভীবাজার-৪। শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভা নিয়ে টিলা, চা বাগান আর সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘেরা এই মৌলভীবাজার-৪ আসনটি। অফুরান প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এ অঞ্চলটি। ভোটারদের বড় একটি অংশ চা বাগানের শ্রমিক ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের।
সংসদ সদস্য কে হবেন স্বাভাবিক পথে সেটা বহুলাংশে নির্ভর করে ভোটের ওপর। এদিক থেকে এগিয়ে আওয়ামী লীগ। এই দুই সম্প্রদায়ের মানুষই এ আসনে তাদের বড় জমাভোট। গত তিন দশক এখানে টানা ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। ফলে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩৮ মৌলভীবাজার-৪(শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ) আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন কে পেতে যাচ্ছেন এমন জানার ইচ্ছা এলাকাসহ গোটা জেলার মাঝেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাড়িয়েছে। প্রার্থী হিসেবে দু’জনের কথাই বেশীরভাগ মানুষের মুখে মুখে। একই সাথে আছে কিছু উৎকন্ঠাও! কে পাবেন দলীয় মনোনয়ন- উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ, নাকি অধ্যাপক রফিকুর রহমান? দৈবক্রমে কিংবা তলে তলে কাজ করছেন এমন কেউ কি এই আসন থেকে মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন, এমন আশংকা নিয়ে নির্বাচনী এলাকার জনগণ তথা দলীয় নেতাকর্মীসহ রাজনৈতিক মহলে উৎকন্ঠা মেশানো আলোচনাও আছে। সবকিছু মিলে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩৮ মৌলভীবাজার-৪(শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ) আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন ৮জন সম্ভাব্য প্রার্থী। গত শনিবার থেকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হয়ে মঙ্গলবার(২১ নভেম্বর) বিকেলে শেষ হয়। আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রার্থীরা হলেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও সাবেক চিফ হুইপ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ, কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাবেক সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মো. রফিকুর রহমান, বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের সহ সভাপতি সুব্রত পুরকায়স্থ, মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সৈয়দ মনসুরুল হক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক নবারুণ দাস রিপন, মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. এএসএম আজাদুর রহমান আজাদ, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ আকরাম খান ও সোহেল আহমদ।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ প্রতিনিধিকে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন সিলেট বিভাগে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সমন্বয়ক দলের সদস্য আনিসুল ইসলাম জুয়েল। এ বিষয়ে বর্তমান সংসদ সদস্য, সাবেক চিফ হুইপ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ বলেন, দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ছয়বার মনোনয়ন দিয়ে আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। জনগণও আমাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছে। আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী দল এবারও আমাকে মনোনয়ন দিয়ে জনগণের জন্য আরও কাজ করার সুযোগ দেবেন।
কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাবেক সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মো. রফিকুর রহমান বলেন, দলীয় মনোনয়ন পেতে আমি দীর্ঘদিন ধরে মাঠে কাজ করে যাচ্ছি। গত নির্বাচনেও আমি প্রার্থী ছিলাম। নির্বাচনী এলাকার মানুষ পরিবর্তন চায়। আশা করি দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে এবার মূল্যায়ন করবেন।
আলাপকালে কমলগঞ্জ উপজেলার কানিহাটি চা বাগানের শ্রমিক নেতা ও মাসিক চা মজদুর সম্পাদক সীতারাম বীন বলেন, স্বাভাবিকভাবেই আমাদের চা শ্রমিকদের নৌকা প্রতীকের প্রতি দুর্বলতা রয়েছে। আমাদের ভোটাধিকার, শিক্ষা, চিকিৎসা, মজুরি বৃদ্ধিসহ বেশকিছু সুবিধা আমরা এই সরকারের কাছ থেকে পেয়েছি। তাই নৌকার দিকে যে আমাদের ঝোঁক আছে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে আমরা এখনো অনেক মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। সবমিলিয়ে নৌকা মার্কার পক্ষেই চা শ্রমিকদের সিংহভাগ ভোট পড়বে।
কমলগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রত্যুষ ধর জানান, এ অঞ্চলের সংখ্যালঘু ভোটাররা এখন নিজেদের অধিকার নিয়ে অনেক সচেতন। আগের মতো দল বেঁধে একটি প্রতীকে ভোট দেবেন বলে মনে হয় না। তিনি বলেন, বিগত সরকারগুলো মুখে অনেক প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে আমরা অনেক কিছুরই প্রতিফলন দেখতে পাইনি। এখনো ভোট এলে সংখ্যালঘুদের মনে আতঙ্ক বিরাজ করে। তাই আমাদের অধিকার বাস্তবায়নে যারা কাজ করবেন আমরা তাদেরই ভোট দেব। তবে প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতি যাই হোক ভোটের মাঠে সংখ্যালঘু ও চা শ্রমিকদের ভোট যেদিকে ঝুঁকবে তার পাল্লা সেদিকেই ভারী হবে।