হারুনূর রশীদ।।
আমি এখন হাটছি সেই পথ দিয়ে যে পথে একসময় সম্রাট শাহজাহানের পদধূলি পড়েছিল। সম্রাট হেঁটে হেঁটে দেখছিলেন শহর দিল্লী বাড়ানো যায় কোন কোনদিকে। আমি হাটছি পাগাড়গঞ্জের সরু রাস্তা ধরে। হাতের ডানে-বায়ে মাঝে মাঝে দু’একটি বড় দালানের পর পরই ছোট্ট ছোট্ট খুপরি ঘর। আদল দেখে বুঝা যায় অনেক সে পুরানো আমলের।
পাহাড়গঞ্জ, মুগলদের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর পর এই বসতির গড়ে উঠা। বহু নামে এই পাহাড়গঞ্চ পরিচিত ছিল মুগলদের আমলে। কেউ কেউ বলতো শাহাগঞ্জ আবার অন্যরা বলতো রাজাগঞ্জ বা রাজাবাজার। এখন দিল্লী সদরের একটি জনবসতিই শুধু নয়, নয়াদিল্লী রেলষ্টেশন থেকে পশ্চিম দিকে অবস্থিত; বর্তমানে সদর দিল্লীর একটি প্রশাসনিক মহকুমা। মুগলদের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর পর এই বসতির গড়ে উঠা। রাজধানী দিল্লী জেলার ৩টি মহকুমা দরিয়াগঞ্জ, কেরলবাগ ও পাহাড়গঞ্জ একটি।
১৬৩৮ সালে দিল্লী শহর প্রতিষ্ঠান পর সম্রাট শাহজাহানের আমল পর্যন্ত যে দিল্লী শহর ছিল ১৭৩৯ সালে এসে সে শহর বাড়ানোর প্রয়োজন দেখা দেয়। তখন দিল্লী শহরের চারদিকের মাইল খানেক এলাকায় অবস্থিত বসতি মোগলপুরা, সব্জিমন্দি, পাহাড়গঞ্জ এবং জয়সিং পুরা নিয়ে শহর বাড়ানো হয়। দেয়াল দিয়ে ঘেরা দিল্লী শহরের খুবই কাছের গুরুত্বপূর্ণ মহল্লা আর আজমেরি গেইটের কাছাকাছি পাহাড়গঞ্জ ছিল সেই সময়কার দিল্লীর ৫টি বড় বাজারের একটি। ১৮শ শতাব্দিতে পাহাড়গঞ্জ হয়ে উঠেছিল প্রধান শষ্যবাজার, যমুনার ওপারের পাটপারগঞ্জ ও শাহদারা পাইকারী বাজার থেকে শষ্য আনানেয়া করা হতো। তখন এই আজমেরি গেইটের একেবারে কাছেই সম্রাটের আবগারি শুল্কের কাছারি ছিল। পাহাড়গঞ্জ ও আকবরাবাদী গেইটের মাঝামাঝি অপর একটি পাইকারি বাজার ছিল শাহগঞ্জ। এর অপর দিকে ছিল রাজা বাজার। মূলতঃ এই পাহাড়গঞ্জকেই শাহাগঞ্জ ডাকা হতো। রাইসিনা পাহাড় যেখানে রাষ্ট্রপতি ভবন রয়েছে এই পাহাড়কে কেন্দ্র করে মুগল আমলের একসময় যে জনবসতি গড়ে উঠেছিল সেটাই বর্তমানের পাহাড়গঞ্জ।
লন্ডন: শনিবার, ২০শে ফাল্গুন ১৪২৩