হারুনূর রশীদ।। ২রা জুলাই ১৯০৯ সাল। বৃটিশভারতের রেল বাহনের খাতায় চমকপ্রদ এক ঐতিহাসিক দিন। ১৮৫৩ সালে ভারতে ইংরেজগন রেলবাহনে চলাচলের সূচনা করে। বিশাল ভারতে যোগাযোগের মহতি এ সূচনা গোটা ভারতেরই চেহারা পাল্টে দিতে শুরু করে। ওই সময়ে ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড হার্ডিঞ্জ রেলবাহন চালনার জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগকে উৎসাহিত করেন ফলে বহু কোম্পানী উদ্যোগী হয়ে এগিয়ে আসেন। রেলবাহনের ব্যবসায় পুঁজি বিনিয়োগ করেন। যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভারতে এক বৈপ্লবিক যুগের সূচনা হয়। ১৯০৭ সালের দিকে ভারতের অধিকাংশ ব্যক্তিমালিকানাধীন রেলকোম্পানীর দায়ীত্ব সরকার নিয়ে নেয়।
রেল চলাচল শুরু হবার প্রথম ৫৫ বছর পর্যন্ত সবকিছুই খুব ভাল ছিল কেবল ৩য় শ্রেণীর রেল কামরায়, যা ভারতীয়গন ব্যবহার করতেন, কোন বাজ্যি-প্রস্রাবের ব্যবস্থা ছিল না। অদ্ভুত এক নিয়মের কারণে তখন এই সমস্যা নিয়েই রেল চলাচল করছিল। আর ওই নিয়মটি ছিল, মানুষ ৫০ মাইলের বেশী দূরত্বে ভ্রমণ করে না আর এই দূরত্বের জন্য প্রস্রাব-পায়খানার ব্যবস্থা থাকার প্রয়োজন নেই।
কে করবে এই বিধানের পরিবর্তন? কার সাধ্য আছে বৃটিশ বাবুদের সাথে বিবাদ বাধাবে। এরপরেও একজন দাঁড়িয়েছিলেন। অবশ্য কোন রাজনৈতিক কারণে উদ্ভুদ্ধ হয়ে নয়, সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যক্তিগত কারণে একজন বাঙ্গালী এর বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন লিখিতভাবে। যা টনক নাড়িয়ে দিয়েছিল বৃটিশ রেল কর্তৃপক্ষের। সংযোজিত হয়েছিল ৩য় শ্রেণীর কামরার সাথে শৌচাগার। আর সেই মজার কাহিনীর স্রষ্টা ছিলেন জনৈক অখিল চন্দ্র সেন।
সে ১৯০৯ সালের কথা। জনৈক অখিল চন্দ্র সেন রেলগাড়ীতে যাচ্ছেন। বাড়ী থেকে আসার সময় সুস্বাদু বেশ কয়েকটি কাঠালের কোশ খেয়ে এসেছেন। হঠাৎ চলমান গাড়ীতে তিনি টের পেলেন তার পেটে বেশ বড় আকারের একটি মোচড় দিয়ে গেল। প্রমাদ গুনলেন অখিল সেন। গাড়ীতে কোন শৌচাগার নেই। এখন কি করে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেবেন! ভীষণ দুশ্চিন্তা আর ভুগান্তিতে পড়লেন তিনি। সময় সহায়, দেখেন রেলগাড়ীটি একটি ষ্টেশনে এসে পৌঁছার নিকটে। দুশ্চিন্তার কিছুটা কমে এলো। সামনেই আহমেদপুর ষ্টেশন।
ষ্টেশনে ট্রেন পৌঁছার সাথে সাথে অখিল সেন পায়খানার দিকে দৌড়ালেন। সৌচকর্ম শেষে একটু প্রশান্তিতে যখন বেরিয়ে আসবেন ঠিক তখনই ষ্টেশন গার্ড রেলগাড়ী ছেড়ে দেবার বাঁশী বাজিয়ে দিল। রেল ষ্টেশন ছাড়তে শুরু করলো। অখিল সেন দৌড়াতে গিয়ে ষ্টেশনের মেঝেতে পড়ে গেলেন। পড়নের ধুতি খুলে গিয়ে তিনি উলঙ্গপ্রায় হয়ে গেলেন। অন্যান্যরা দেখে হেসে লুটুপুটি খেলো। তিনি মনস্ত করলেন চিঠি লিখবেন। লিখেছিলেনও। এরপর কি হয়েছিল দেখুন তার চিঠিতেই-
অখিল চন্দ্র সেন নিজেকে খুব অপমানিতবোধ করলেন। ওই দিনই ঘরে ফিরে তিনি চিঠি লিখলেন শাহিবগঞ্জ বিভাগীয় রেললাইন অফিসের বিভাগীয় কর্তার বরাবরে। ভুলে-শুদ্ধে মেশানো তার ওই চিঠিই আমুল এক পরিবর্তন এনে দিয়েছিল বৃটিশ-ভারতের রেল চলাচলে। সংযোজিত হয়েছিল শৌচাগার ৩য় শ্রেণীর বগিতে।