টানা দু’দিনের বৃষ্টিতে নদীগুলোতে পানিবৃদ্ধি।
মানুষজন বন্যাভয়ে ভীত
মৌলভীবাজারে গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি এবং ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার চারটি নদ-নদীতে পানি বাড়ছে। এরমধ্যে মনু, জুড়ী ও কুশিয়ারা নদীতে পানি বেড়ে বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে ধলাই নদীর পানি এখনও বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সোমবার(২ জুন) পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, মনু নদীর রেল সেতুতে পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার, চাঁদনীঘাট পয়েন্টে পানি ৭৩ সেন্টিমিটার, জুড়ী নদীতে ১৬৯ সেন্টিমিটার ও কুশিয়ারা নদীর পানি শেরপুর পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ধলাই নদীর পানি ১৮০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
স্থানীয় মানুষজন থেকে জানাযায়, আগেও নদীর বাঁধ ভেঙে বন্যা হয়। ফলে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিরক্ষা বাঁধের যেকোনো স্থান ভেঙে যেতে পারে। পাশাপাশি আগের বাঁধগুলো এখনো কাজ হয়নি। যদি পানি বাড়তে থাকে তাহলে আগের বাঁধগুলোয় পানি প্রবেশ করবে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ বিন ওয়ালিদ বলেন, বাংলাদেশ ও উজানে বৃষ্টি হওয়াতে নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃষ্টি কমে গেলে পানিও নিচে নেমে যাবে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন জানিয়েছেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন সর্বাত্মক প্রস্তুত রয়েছে।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে উজান থেকে নেমে আসা ভারতীয় ঢলের পানিতে কমলগঞ্জে আকস্মিকভাবে ধলাই নদীর পানি বেড়েছে। পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও কমলগঞ্জের কয়েকটি ইউনিয়নে ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ২ থেকে ৩ স্থান ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। ফলে বন্যার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। ধলাই নদীর পানি প্রবাহের দিকে সার্বক্ষনিক নজরদারি করছে উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড।
শনিবার(৩১ মে) কমলগঞ্জ থানা সংলগ্ন পুরাতন ধলাই সেতু এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কয়েকদিন থেকে ভারী বৃষ্টিপাতে নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাশাপাশি উজানে ভারতীয় পাহাড়ি এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সকাল থেকে ধলাই নদীর পানি বেড়েছে।
![]() পানিতে টই-টুম্বুর উজানের পাহাড় থেকে জন্ম নেয়া ধলাই নদী। ছবি: মুক্তকথা। |
ইসলামপুর ইউনিয়নের কুরমা এলাকা দিয়ে মাধবপুর, আদমপুর, কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়ন, কমলগঞ্জ পৌরসভা, মুন্সিবাজার ও রহিমপুর ইউনিয়নের ওপর দিয়ে দীর্ঘ ৫৪ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে মনু নদী মিলিত হয়েছে ধলাই নদীতে। এর মধ্যে অসংখ্য স্থানে আঁকা-বাঁকা হয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এসব ইউনিয়নের ২ থেকে ৩ টি স্থানে প্রতিরক্ষা বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সার্বক্ষণিক নজরদারি আছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয়রা বলেন, ইসলামপুর ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকা থেকে শুরু করে উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত পানির কারণে ধলাই নদীর ৫৪ কিলোমিটার এলাকার প্রতিরক্ষা বাঁধের বেশ কয়েকটি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ আছে। তার আগেও নদীর বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে বন্যায় পরিণত হয়। ফলে কৃষি ও বসতঘরের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যদি এখন আবার ভাঙে তাহলে আমরা মারাই যাবো। এখন আবার এভাবে পানি বাড়তে থাকলে ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিরক্ষা বাঁধের যেকোনো স্থান ভেঙে যেতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজার এর কমলগঞ্জ উপজেলার পর্যবেক্ষক মো. রাসেল মিয়া বলেন, ‘উজানে ভারতীয় পাহাড়ি এলাকায় বেশি বৃষ্টি হওয়ায় গত শুক্রবার রাত থেকে কমলগঞ্জে ধলাই নদীর পানি বৃদ্ধি পায়, তবে এখনও বিপদ সীমা অতিক্রম করেনি।’
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাখন চন্দ্র সূত্রধর বলেন, ধলাই নদীর পানি আকস্মিক বেড়ে যায়। তবে শনিবার ধলাই নদীর পানি বিপদসীমার ২৫০ সে:মি: নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ অংশ মেরামতের কাজ করা হয়েছে। আপাতত বাঁধ ভাঙ্গার কোনো সম্ভাবনা নেই। উপজেলা প্রশাসন ধলাই নদীর পানি প্রবাহের দিকে সার্বক্ষনিক নজরদারি করছে বলেও তিনি জানান।