লন্ডন: বাংলাদেশের প্রচার হোর্ডিং-ব্যানারে হাসিনা-মমতার ছবি। এপার বাংলা-ওপার বাংলার মিলন হতে চলেছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে, ২১শে ফেব্রুয়ারি। কাঁটাতারের ব্যবধান ঘুচিয়ে দুই বাংলার মানুষ সেদিন মিলিত হবেন—এক ভাষা, এক সংগীত, এক নৃত্য, এক শিল্প-সংস্কৃতির বন্ধনে। মাতৃভাষার প্রবল টানে এবার উদ্যোগী হয়েছে ভারত ও বাংলাদেশ। প্রতিবার দুই দেশের সীমান্তে পৃথক মঞ্চ তৈরি হলেও এবার প্রথম পেট্রাপোল ও বেনাপোল সীমান্তে একই মঞ্চে উদ্যাপিত হবে দুই বাংলার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
এদেশের পেট্রাপোল সীমান্তের একদিকে ভারত, অন্যদিকে, বাংলাদেশের যশোর জেলার বেনাপোল শহর। ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে প্রতি বছর পৃথকভাবে পেট্রাপোলে এদেশের মঞ্চ তৈরি করা হয় এবং বেনাপোলে তৈরি হয় বাংলাদেশের মঞ্চ। সেখানে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত অনুষ্ঠান চলে। একটি নির্দিষ্ট সময়ে দুই দেশের প্রতিনিধিরা একে অপরের মঞ্চে যান। তাঁদের সংবর্ধনাও দেওয়া হয়। তারপর তাঁরা নিজেদের দেশে ফিরে যান। সেই সময় দুই দেশের নাগরিকেরাও হুড়োহুড়ি করে একে অপরের দেশের ঢোকার চেষ্টা করেন। তা নিয়ে গন্ডগোলও হয়। যেহেতু আন্তর্জাতিক সীমান্ত তাই কড়া নিরাপত্তারও আয়োজন থাকে। মিলন উৎসবের পরিবর্তে দুই দেশের আবেগ শক্ত লোহার আন্তর্জাতিক ফটকের দুই পাশেই আটকে থাকে।
এই দূরত্ব ঘোচানোর জন্য এবং দুই দেশের মধ্যে সম্প্রীতির সম্পর্ক গড়ে তুলতে দুই দেশ মিলিতভাবে মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২১শে ফেব্রুয়ারি উদ্যাপন উপলক্ষে সম্প্রতি বাংলাদেশের যশোর জেলায় বেনাপোল পুরসভায় একটি সম্প্রীতি বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে বেনাপোলের মেয়র আশরাফুল আলম লিটন সহ বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসনিক কর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এদেশের প্রতিনিধি হিসাবে সেখানে বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান শংকর আঢ্য, দুই বাংলা মৈত্রী সমিতির পক্ষে রিঙ্কু দেদত্ত, মনোজ রায় সহ প্রশাসনিক আধিকারিকরা বাংলাদেশে যান। সেখানেই এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। ওইদিন বেনাপোল পুরসভার তরফে আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজনে খাসির মাংসের সঙ্গে অতিথিদের পাতে পড়েছিল পদ্মার ইলিশও।
রিঙ্কু দেদত্ত বলেন, এটা দুই দেশের একটা বড় সিদ্ধান্ত। যেহেতু দুই দেশের অনুষ্ঠান তাই, আন্তর্জাতিক সীমানার মাঝখানে ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’ মঞ্চ তৈরি করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শেখ মুজিবর রহমানের নামেই ওই মঞ্চের নামকরণ করা হবে। তিনি বলেন, যেহেতু দুই বাংলার অনুষ্ঠান একসঙ্গে হচ্ছে, তাই অনুষ্ঠানের জন্য যে আমন্ত্রণপত্র তৈরি হবে, সেখানে বেনাপোলের মেয়র এবং বনগাঁর চেয়ারম্যান থাকবেন আহ্বায়ক। বৈঠক উপস্থিত মনোজ রায় বলেন, ২১শে ফেব্রুয়ারির উপর হোর্ডিং ও ব্যানার তৈরি করছে বাংলাদেশ। সেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবির সঙ্গে আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিও থাকবে। এর মাধ্যমে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সম্প্রীতির বার্তা দেওয়া হবে।
অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান শংকর আঢ্য বলেন, ২১শে ফেব্রুয়ারি দুই বাংলার একটি আবেগের দিন। এতকাল ধরে দুই দেশ পৃথক অনুষ্ঠানই করে এসেছে। এই প্রথমবার ঐতিহাসিকভাবে একই মঞ্চে উদ্যাপিত হবে মাতৃভাষা দিবস। এটা আমাদের গর্বের। সেই সঙ্গে এই মহামিলনে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে। (অলকাভ নিয়োগী, বারাসত, বিএনএ এর এই খবর প্রকাশ করেছে বর্তমান)