মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে দি ভানুবিল মাঝেরগাঁও ড্রামা পার্টির শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে গুণিজন সংবর্ধনা, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং নাটক মঞ্চায়ন করা হয়। গত বৃহস্পতিার(২৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের ভানুবিল মাঝেরগাঁও গ্রামের মহাদেব মন্দির সংলগ্ন মাঠে নিঙোল পালী উদযাপন কমিটি আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতে অতিথিদের উত্তরীয় পড়িয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। এসময় স্ব স্ব কর্মক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখায় ১৩ গুণি ব্যক্তিকে সংবর্ধনা ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
পরে আলোচনা সভায় নিঙোল পালী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক লৈচোম্বম রাজকুমার সিংহের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ডি. এম. সাদিক আল শাফিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন মণিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্সের সভাপতি এল, জয়ন্ত কুমার সিংহ, কবি, লেখক-অনুবাদক ও মণিপুরি মিররের প্রধান সম্পাদক হামোম প্রমোদ প্রমুখ। অয়েকপম অন্জু, লাইশ্রম সুপর্না ও থাংজম নিভারানীর যৌথ সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সমাজকর্মী ইবুঙহাল সিংহ শ্যামল, প্রধান শিক্ষক শান্ত কুমার সিংহ, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘরের ব্যবস্থাপক ওয়াই চন্দ্রজিত, শিক্ষক য়েনসানবম রঞ্জিত প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন নিঙোল পালী উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ব্রজকিশোর সিংহ। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন অন্তরা শর্মা। পরে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও অহিংদা নুমিৎ নাটক মঞ্চায়নের মাধ্যমে শতবর্ষ উৎসবের সমাপ্তি ঘটে।
উল্লেখ্য, চিরায়ত সমৃদ্ধ সাহিত্য-সংস্কৃতির এক অনবদ্য জাতির নাম মণিপুরি। মণিপুরি সংস্কৃতিকে নাট্য রূপে মঞ্চায়নের মাধ্যমে জনসম্মুখে তুলে ধরতে ‘দি ভানুবিল মাঝেরগাঁও ড্রামা পার্টি’ প্রতি বছর নিঙোল পালি উৎসবে নাটক মঞ্চায়ন করে আসছে। দি ভানুবিল মাঝেরগাঁও ড্রামা পার্টি নাট্য সংগঠনটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠন।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় চোরাকারবারিদের ধরতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন এপিবিএন ও থানা পুলিশের তিন সদস্য। এ ছাড়া আহত হয়েছেন স্থানীয় তিন ব্যক্তি।
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) ভোর ৪টার দিকে উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নের আমানিপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশকে মারধর করে আসামিদের ছিনিয়ে নেন তাদের সহযোগীরা।
আহতরা হলেন—অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া এপিবিএনের ইন্সপেক্টর নব গোপাল দাস, কুলাউড়া থানার কনস্টেবল আফরোজ মিয়া ও জাহিদ ভুঁইয়া। আহত স্থানীয়দের নামপরিচয় জানা যায়নি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কুলাউড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুদীপ্ত শেখর ভট্টাচার্য্য বলেন, শনিবার ভোররাতে সাতজন এপিবিএন (আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান) সিলেটের একটি দল কুলাউড়া থানা পুলিশের সহযোগিতায় আমানিপুর এলাকার আর্জু মিয়ার বাড়িতে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানকালে আর্জু মিয়ার বাড়িতে তল্লাশি করে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় নিষিদ্ধ নাসির বিড়ি উদ্ধার করে ঘটনাস্থল থেকে তিন চোরাকারবারিকে আটক করা হয়। পরে হঠাৎ করে তাদের সহযোগী প্রায় শতাধিক লোক এসে এপিবিএন ও তাদেরকে সহায়তা করা থানা পুলিশের সদস্যদের মারধর করে জব্দকৃত মালামাল ও আসামিদের ছিনিয়ে নিয়ে যান। এ ঘটনায় আহতরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সুদীপ্ত শেখর ভট্টাচার্য বলেন, এ ঘটনায় থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে। আসামিদের গ্রেপ্তার ও চোরাই মালামাল উদ্ধারে পুলিশের অভিযান
অব্যাহত আছে।
দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে। মঙ্গলবার(২৪ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় শ্রীমঙ্গলে তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। পাহাড়, হাওর, চা-বাগানবেষ্টিত এলাকা মৌলভীবাজার জেলায় কনকনে শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে কর্মজীবী মানুষের জীবন।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকেন্দ্রের সিনিয়র সহকারী আনিসুর রহমান বলেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) সকাল ৯টায় শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। উপজেলায় বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। আগামী কয়েকদিন তাপমাত্রা নিচের দিকেই থাকতে পারে। এর আগের দিন সোমবার শ্রীমঙ্গলে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা কম থাকলেও সকাল থেকে সূর্যের দেখা মিলেছে। ঝলমলে রোদ উষ্ণতা ছড়িয়েছে।’
এদিকে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর শহরে তাপমাত্রা একটু বেশি থাকলেও হাওর, পাহাড় ও চা-বাগান এলাকায় বসবাসরত মানুষের খুব বেশি ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। তীব্র শীতে বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী ও ছিন্নমূল মানুষজন। বিশেষ করে চা-বাগানগুলোয় শীত বেশি থাকায় কাজ করতে বেগ পোহাতে হয় চা–শ্রমিকদের।
ফিনলে কোম্পানির লাখাইছড়া চা-বাগানের বাসিন্দা তপন বৈদ্য বলেন, ‘আমাদের চা-বাগানের শ্রমজীবী নারী-পুরুষরা শীত নিবারণের জন্য গরম কাপড় ও কম্বলের অভাবে খুব কষ্টে দিনযাপন করছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের চা-বাগানের মানুষের খোঁজখবর প্রশাসনের কেউ রাখে না।’
ভাড়াউড়া চা-বাগানের শ্রমিক সুমন গোয়ালা বলেন, ‘সন্ধ্যাবেলা চা-বাগানে প্রচণ্ড শীত পড়ে। আমাদের অনেক কষ্ট করে থাকতে হয়। সবার ঘরে চাহিদামতো গরম কাপড় নেই। সরকারের পক্ষ থেকে যদি শীতের কাপড় বিতরণ করা হতো, তাহলে উপকার হতো। শীত উপেক্ষা করেই আমাদের ভোরবেলায় কাজের তাগিদে ঘর থেকে বের হতে হয়।’
হাইল হাওর এলাকার বাসিন্দা ইকরাম আলী বলেন, ‘আমি কৃষক মানুষ। গরমের কাপড়ের অভাবে রাতে ঘুমাতে কষ্ট হয়।’
মৌলভীবাজার জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ ছাদু মিয়া বলেন, ‘জেলায় ১০ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। প্রথম দফায় নগদ বরাদ্দ পাওয়া গেছে ২১ লাখ টাকা। দ্বিতীয় দফায় সাড়ে ২৭ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এসব টাকা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) অনুকূলে বরাদ্দ। কম্বল কিনে পর্যায়ক্রমে বিতরণ করা হবে।’
শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘নানা বয়সী মানুষ সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া নিয়ে আসেন। হাসপাতালে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেক রোগী। তার মধ্যে চা-বাগানের শ্রমিক ও হাওর এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষরা বেশি।’
মৌলভীবাজার সিভিল সার্জন মামুনুর রহমান বলেন, ‘প্রতিদিনের মতো শীতজনিত রোগে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতালসহ উপজেলার বিভিন্ন হাসপাতালে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। হাসপাতালে ভর্তি কম হলেও বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন নানা বয়সী রোগী।’
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় ব্যাংক থেকে টাকা তুলে বাড়ি ফেরার পথে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন দুজন নারী। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন তাঁরা। গতকাল সোমবার দুপুরে উপজেলার সদর জায়ফরনগর ইউনিয়নের তেতইরতল এলাকার জুড়ী-কুলাউড়া সড়কে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার পর গতকাল সন্ধ্যায় ভুক্তভোগী নারীরা জুড়ী থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ওই অভিযোগ থেকে জানা গেছে, তেতইরতল এলাকার বাসিন্দা দুবাইপ্রবাসী সাইদুল ইসলামের স্ত্রী রাবিনা আক্তার ও সাইদুলের বড় ভাইয়ের স্ত্রী রাজিয়া বেগম গতকাল উপজেলা সদরে একটি ব্যাংকে টাকা তুলতে যান। সেখান থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা তুলে কিছু কেনাকাটা করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় করে বাড়ি ফিরছিলেন তাঁরা। বেলা পৌনে একটার দিকে বাড়ির কাছে পৌঁছালে পেছন দিক থেকে একটি মোটরসাইকেলের দুই আরোহী অটোরিকশার পথরোধ করেন। এ সময় তাঁরা রাজিয়া বেগমের কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ ধরে টানাটানি করতে থাকেন। ওই ব্যাগে টাকাসহ তাঁদের দুটি মুঠোফোন রাখা ছিল। দুই নারী চিৎকার শুরু করলে ছিনতাইকারীরা ধারালো দা বের করে প্রাণনাশের ভয় দেখান। এরপর ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে কুলাউড়ার দিকে চলে যান তাঁরা।
নব উদ্যমে দৃঢ় প্রত্যয়ে, সুপ্ত ক্রিকেট প্রতিভার বিকাশে আনুষ্ঠানিক ভাবে যাত্রা শুরু হলো মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ক্রিকেট একাডেমির। গত শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) রাত ৮টায় উপজেলার ভানুগাছ বাজারে গ্রামের বাড়ী রেস্টুরেন্টের হল রুমে আনুষ্ঠানিক ভাবে এই একাডেমির আত্মপ্রকাশ হয়।
প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধা, বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক কমলগঞ্জ ক্রিকেট একাডেমির আহবায়ক শিবলী আহমেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও ক্রীড়া সংগঠক গোলাম রাব্বীর সঞ্চালনয় আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কমলগঞ্জ প্রেসক্লাবের আহবায়ক এম এ ওয়াহিদ রুলু, সদস্য সচিব আহমেদুজ্জামান আলম, কমলগঞ্জ ক্রিকেট একাডেমির সদস্য সচিব মাহমুদ আলী, সাবেক পৌর কাউন্সিলর সৈয়দ জামাল হোসেন, সাংবাদিক সালাউদ্দিন শুভ, ক্রীড়া সংগঠক মহেন্দ্র সিং, সাংবাদিক ও ক্রীড়া সংগঠক মাহিদুল ইসলাম, সমাজসেবক ফুল মিয়াসহ বিভিন্ন ক্রীড়া সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, ক্রিকেটার ও সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
কমলগঞ্জ ক্রিকেট একাডেমির সদস্য সচিব মাহমুদ আলী বলেন, কমলগঞ্জের ক্রিকেটকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আশা করি এই একাডেমি থেকে একসময় অনেক বড়বড় ক্রিকেটার তৈরি হবেন।
কমলগঞ্জ ক্রিকেট একাডেমির আহবায়ক শিবলী আহমেদ চৌধুরী বলেন, আমাদের এলাকায় টেপ বলের খেলা বেশি হয়, ক্রিকেট বলের খেলা কম হয়। এজন্য আমরা একটি একাডেমি করেছি ক্রিকেটের বিস্তার বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য। মাদক মুক্ত সুন্দর সমাজ গড়তে নতুন প্রজন্মের খেলাধুলার কোন বিকল্প নেই। খুব শিগগিরই পুরোদমে আমাদের কমলগঞ্জ ক্রিকেট একাডেমির যাত্রা শুরু হবে। আমাদের কাজে প্রবাসে থেকেই জাকির হুসেন মুন্না, শাহীন আল রাজী, ফুল মিয়াসহ অনেকেই সহযোগিতা করছেন।
নোট: ছবি সংযুক্ত।