মন্ত্রী পরিষদের সচিব এসেছিলেন এ জেলায়
দুই দিনের ভ্রমণ সেরে গেলেন মন্ত্রী পরিষদের সচিব। মৌলভীবাজারে দুই দিনের সরকারী ভ্রমণে এসেছিলেন মন্ত্রী পরিষদের সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ।
গত শনিবার(২৮ ডিসেম্বর) মৌলভীবাজার সার্কিট হাউজে তিনি আসেন। মৌলবীবাজার এসে পৌঁছালে তাকে ফুলের চারাগাছ দিয়ে বরণ করেন, জেলা প্রশাসক মো: ইসরাইল হোসেন। এসময় মৌলভীবাজার জেলার পুলিশ সুপার এম, কে, এইচ, জাহাঙ্গীর হোসেন পিপিএম-সেবাসহ সরকারী বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। গত রোববার তিনি বড়লেখা উপজেলার মাধবকুন্ড জল প্রপাত দর্শন করে সন্ধ্যায় সিলেটের উদ্দেশ্যে ফিরে গেছেন।
অংশ নিয়েছে ৫ জেলা
আঞ্চলিক সমবায় প্রশিক্ষণকেন্দ্রে ১২ দিনের প্রশিক্ষণ শুরু
মৌলভীবাজারে আঞ্চলিক সমবায় ইন্সটিটিউট’র ১২ দিনের প্রশিক্ষণ শুরু শুরু হয়েছে। রোববার সকালে প্রশিক্ষণকেন্দ্রের সভাকক্ষে আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে প্রশিক্ষণের কার্যক্রম শুরু হয়। মৌলভীবাজার আঞ্চলিক সমবায় ইন্সটিটিউট’র অধ্যক্ষ গাজী মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন’র সভাপতিত্বে ও অফিস সহকারি আশরাফ উদ্দিনের সঞ্চালনায় এতে বেতার তরঙ্গে কথা বলেন, বাংলাদেশ সমবায় একাডেমি, কৌর্টবাড়ি, কুমিল্লাহ’র অধ্যক্ষ কাজী মিছবাহ উদ্দিন ও বিভাগীয় সমবায় সিলেট বিভাগের যুগ্ন নিবন্ধক আশিক কুমার বড়ুয়া।
আরো বক্তব্য দেন ইস্টটিটিউট’র কম্পিউটার বিভাগের প্রশিক্ষক জালাল উদ্দিন, ইলেকট্রনিক বিভাগের প্রশিক্ষক মোস্তফা কামাল। প্রশিক্ষনার্থীদের মধ্যে বক্তব্য দেন সাংবাদিক ও রাজনগর অর্থনৈতিক সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির সদস্য মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ, সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার প্রশিক্ষনার্থী সাংবাদিক শাহাব উদ্দিন শাহীন, সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার প্রশিক্ষনার্থী কৃষ্ণপদ সূত্রধর, রাজনগরের মোতাহির আলম, ছাতক উপজেলার জামরুল ইসলাম,দক্ষিণ সুরমা উপজেলার জলিলুর রহমান প্রমূখ।
১২ দিনের প্রশিক্ষণে মৌলভীবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও ব্রাম্মনবাড়িয়া জেলা থেকে আগত বিভিন্ন সমবায় সমিতির ৫০জন প্রশিক্ষনার্থী অংশ নেন। ইলেকট্রনিক-হাউজওয়্যারিং ও কম্পিউটার বিভাগে প্রশিক্ষণ দিতে তাদের দুই দলে বিভক্ত করা হয়। যাদের সংশ্লিষ্ট দফতরের প্রশিক্ষকের সার্বক্ষনিক তদারকির মাধ্যমে হাতে-কলমে কম্পিউটার কর্মসূচী ও ইলেকট্রিক বিষয়ে জ্ঞান দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণ শেষ হবে আগামী ৯ জানুয়ারী ২০২৫ইং।
টি এস্টেট স্টাফ এসোসিয়েশনের ৬০তম
বার্ষিক সাধারণ সভা ও হীরক জয়ন্তী
চা বাগানে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীদের সংগঠন বাংলাদেশ টি এস্টেট স্টাফ এসোসিয়েশন (বিটিইএসএ) ৬০তম বার্ষিক সাধারণ সভা ও হীরক জয়ন্তী অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার(২৯ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় শ্রীমঙ্গলস্থ কলেজ রোড শিশু উদ্যান মাঠে এ সাধারণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি মোঃ আনোয়ার হোসেন।
বিটিইএসএ’র সিনিয়র সহ সভাপতি শেখ কাওছার মিয়ার সভাপতিত্বে ও বিটিইএসএ’র সাধারণ সম্পাদক মো. আমিনুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাধারন সম্পাদক নুরুল ইসলাম খান (নাসিম)।
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন মোঃ সুরমান আলী, মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, পুলক রঞ্জন ধর, সাকি রিজওয়ানা প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে দেশের জেলা ও ভ্যালীতে আগত সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। সভা শেষে টি স্টাফদের ছেলেমেয়েদের মধ্যে ২০২৩ সালের জিপিএ ৫ প্রাপ্তদের মাঝে ক্রেস্ট, সনদপত্র ও নগদ অর্থ বিতরন করা হয়।
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাতে উপজেলার সিন্দুরখান এলাকার জাম্বুরাছড়া থেকে শকুনটি উদ্ধার করেন বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের সদস্যরা। রোববার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে শকুনটি বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ফাউন্ডেশনের পরিচালক সজল দেব জানান, শ্রীমঙ্গলে এখন বেশ ঠান্ডা পড়েছে। শনিবার রাত ১১টার দিকে খবর পাই, একটি গিন্নি জাতের শকুন ঠান্ডার কারণে অসুস্থ হয়ে ধানখেতে পড়ে আছে। রাতেই সেখানে গিয়ে শকুনটি উদ্ধার করে নিয়ে আসি। শকুনটির পুরো শরীর ঠান্ডায় জমে গিয়েছিল। ফাউন্ডেশনে এনে একটি খাঁচায় রেখে পাশে আগুন জ্বালানো হয় এবং খাবার দেওয়া হয়। পরে ধীরে ধীরে প্রাণীটি সুস্থ হয়ে ওঠে। আজ সকালে শকুনটি বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, একসময় এই গিন্নি জাতের শকুন শ্রীমঙ্গল এলাকায় প্রচুর দেখা যেত, কিন্তু এখন এদের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে গেছে। প্রাণীটি বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে।
মৌলভীবাজারের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক জামিল মোহাম্মদ খান জানান, শকুনটিকে তারা পর্যবেক্ষণের জন্য লাউয়াছড়া রেসকিউ সেন্টারে রেখেছেন। প্রাণীটি পুরোপুরি সুস্থ হলে বনে অবমুক্ত করা হবে।
জনবান্ধব ইউএনও জয়নাল আবেদীন এর শেষ কর্মদিবস
কাঁদলেন ও কাঁদালেন
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে জয়নাল আবেদীন গত বছরের ২০ আগস্ট কমলগঞ্জ উপজেলায় যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে তিনি কমলগঞ্জ উপজেলার উন্নয়নে রাত-দিন কাজ করেছেন। সাধারণ মানুষের যে কোনো সমস্যা সমাধানে তিনি তাৎক্ষণিক ভূমিকা রেখেছেন। শান্তিপ্রিয় কমলগঞ্জ উপজেলাকে দীর্ঘ ১৬ মাস সঠিক নেতৃত্ব দিয়ে পরিচালনা করেছেন। নিজের সততা ও কর্মদক্ষতা দিয়ে তিনি সবার মন জয় করে নিয়েছেন। যার ফলে সবার কাছে তিনি জনবান্ধব ইউএনও হিসাবে পরিচিতও লাভ করেছেন।
ইউএনও জয়নাল আবেদীন প্রায় ১৬ মাস কমলগঞ্জে দায়িত্ব পালন শেষে বদলিজনিত কারণে বিদায় নিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) তাঁর শেষ কর্মদিবসে দায়িত্ব পালনের সময় তিনি কমলগঞ্জের মানুষের সহযোগিতা আর আন্তরিকতার বর্ণনা দিতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে উঠেন। এসময় সরকারি কমকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ হাজির হয়েছিলেন। ইউএনওর কথা শুনে তাদের চোখও অশ্রুশিক্ত হয়েছে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে জয়নাল আবেদীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলায় যোগাদান করার কথা রয়েছে।
জানা গেছে, গত বছরের ২০ আগস্ট ইউএনও হিসাবে প্রথম কমলগঞ্জে উপজেলায় যোগদান করেন ৩৫ তম বিসিএস ক্যাডার জয়নাল আবেদীন। এখানে যোগদানের পর তিনি ধীরে ধীরে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের কাছে আস্থাভাজন হয়ে উঠেন। উপজেলার অসহায় মানুষের একমাত্র আশ্রয়স্থল ছিলেন তিনি। উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদের কাজের পাশাপাশি দিনরাত ছুটে গেছেন সাধারণ মানুষের কাছে। প্রায় ২১টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বসবাস এই উপজেলায়। সরকারী সেবা পৌছাঁতে যখন যেখানে প্রয়োজন সেখানেই ছুটে গেছেন। সরকারি খাসজমি উদ্ধার, নিজ অর্থায়নে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, বিদ্যালয় পরিদর্শন, শিক্ষা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণসহ প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করেছেন। পর্যটন সমৃদ্ধ উপজেলা থাকায় পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের জন্য কাজ করছেন। সম্প্রতি উপজেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র মাধবপুর লেইকে “আই লাভ কমলগঞ্জ ” নামে একটি দৃষ্টিনন্দন বোর্ড স্থাপন করছেন যা এই লেইকের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বই মেলা ও পিঠা উৎসবের আয়োজন করে বাঙালি সংস্কৃতি মেলে ধরেছেন। ২০২৪ সালে ভয়াবহ বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। খেলাধুলার প্রসারে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে ফুটবলসহ বিভিন্ন ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ করছেন। উপজেলার শমশেরনগর চা বাগানের নারসামা রেলী নামে এক অসহায় বয়োবৃদ্ধাকে পাকা ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছেন।
ইউএনও জয়নাল আবেদীনের পৃষ্ঠপোষকতায় লোকসংস্কৃতি বিষয়ক সংকলনগ্রন্থ “আরণ্যক” নামে একটি সংকলন প্রকাশ হয়েছে। এছাড়া সাধারণ মানুষের সমস্যা সমাধানে তাৎক্ষণিক ভূমিকা রেখেছেন। উপজেলায় শিক্ষা, সংস্কৃতি বিস্তার, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে, বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পথচলা সহজ করতে সময় সময় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। উপজেলার সার্বিক আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বিভিন্ন দূর্যোগ সময়ে সরকারি সেবা মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়ে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন জনবান্ধব ইউএনও জয়নাল আবেদীন।
কমলগঞ্জ উপজেলার সাধারণ মানুষজন বলেন, আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সবসময় পাশে পেয়েছি। যেকোনো দুর্যোগ সময়ে দিনরাত সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করছেন। সততা, আদর্শ ও কর্মদক্ষতায় মানুষের মন জয় করেছে তিনি। সরকারি দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি গরীব মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী, প্রতিবন্ধী ও বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর হতদরিদ্রদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। যারাই তাঁর কাছে এসেছেন, তাদের সমস্যা শুনে সমাধান করার চেষ্টা করেছেন। যে কোনো কাজে যতবারই ফোন করেছে, ততবার ফোন রিসিভ করেছেন। উনার দরজা সাধারণ মানুষের জন্য সবসময় খোলা ছিলো। উনার চলে যাওয়া শুনে উপজেলার সাধারণ মানুষ আবেগ আপ্লুুত হয়ে পড়েছেন।
মাইজগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফেরদৌস খান বলেন, ইউএনও মহোদয় উপজেলায় শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করছেন। বিভিন্ন বিদ্যালয়ে নিজ অর্থায়নে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করছেন। উপজেলার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার সার্বিক অবস্থার খোঁঁজ রাখতেন। বিদ্যালয় পরিদর্শন করে শিক্ষা কার্যক্রমে যখন যা প্রয়োজন তা পূরণ করার চেষ্টা করেছেন। সত্যি তিনি একজন শিক্ষা বান্ধব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন।
মুন্সিবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাহিদ আহমেদ তরফদার ও পতনঊষার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অলি আহমদ খান বলেন, কমলগঞ্জের ইউএনও জয়নাল আবেদীন মানুষের জন্য দিনরাত কাজ করেছেন। যেকোনো সময় কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। ব্যক্তি উদ্যোগে অনেক মানুষকে সাহায্য করেছেন। আমরা তাঁকে আমরা সবসময় কাছে পেয়েছি। বন্যার সময় আমাদেরকে সাথে নিয়ে সারা উপজেলায় কাজ করছেন। তিনি কমলগঞ্জে আশার পর থেকে অত্যন্ত নিষ্ঠা ও স্বচ্ছতার সাথে দায়িত্ব পালন করে মানুষের কাছে জনবান্ধব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হয়ে উঠেছেন।
আলাপকালে কমলগঞ্জের বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, ইউএনও হিসেবে কমলগঞ্জ ছিলো আমার প্রথম কর্মস্থল। বৈচিত্র্যময় এই উপজেলায় দীর্ঘ ১৬ মাস কাজ করেছি। এখানকার মানুষের ভালবাসায় পেয়ে আমি মুগ্ধ। আমার কাজে সবাই আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করেছেন। দায়িত্ব পালনে আমি আমার সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমার সকল ভালো কাজের কৃতিত্ব কমলগঞ্জের মানুষের। ক্ষণিকের জন্য বিদায় নিলেও সারাজীবন কমলগঞ্জ বাসীর কথা মনে থাকবে।