গত জুলাই মাসে ভারতের একটি গ্রামের মানুষ “ওয়াট্স এপ” শিশু পাচারকারীদের বিষয়ে একটি গুজব দেখে উত্তেজিত হয়ে ৫জন আগন্তুককে হত্যা করে। এ খবরটি প্রচার করেছে নয়াদিল্লী থেকে “বাজফিড.নিউজ”। গত ৯ই সেপ্টেম্বর খবরটি প্রচার করা হয়। গুজবে কান দিয়ে ৫জন মানুষকে হত্যা করার একঘন্টা পরও মাটিতে পড়ে থাকা রক্ত কেউ পরিষ্কার করার প্রয়োজনই মনে করেনি। সেখানে প্রচুর রক্ত জমা হয়ে পড়েছিল। হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল “রাইপদ” গ্রাম কাউন্সিল অফিসের ৬ফুট লম্বা মেঝেতে কাদামাটির মত তকতকে ঘন রক্ত তখনও পড়েছিল। অফিস ঘরের দেয়ালে রাখা ময়লাযুক্ত মহাত্মা গান্ধী ও অন্যান্য ভারতীয় রাজনীতিকগনের ছবি ঘন রক্তকাদার উপর সাজানো ফোঁটা ফোঁটা দাগ মনে হচ্ছিল। ঘরের ছাদেও রক্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। ঘটনার দিন বিকালে গ্রাম কাউন্সিলের লোকেরা প্রতিবেশী গ্রামের ৫জন কাজের লোককে রক্ত পরিষ্কারের জন্য ৫হাজার রুপি দিয়েছিল। তারা এসে শাড়ী দিয়ে জমাটবাঁধা রক্ত পরিষ্কার করে দিয়েছিল। পরে রক্তমোছা শাড়ী জ্বালিয়ে তার ছাঁই মাটিতে পুঁতে দেয়। ঘটনার পাঁচদিন পর পুলিশ এসে সন্দেহভাজন সকলকেই পাকড়াও করে। তারা প্রত্যেকেই স্বীকার করে যে যাদের তারা হত্যা করেছে এরা সকলেই তাদের ছোট পাহাড়ী গ্রামে আগন্তুক ছিল। তারা আরও বলে যে তারা এ কাজ করেছে “ওয়াট্স এপ” এ একটি ভিডিও দেখে। ওই ভিডিওতে শিশুদের হত্যা করে তাদের কিডনী নিয়ে যায় কিছু দুষ্টলোক, এদের থেকে সাবধান থাকার জন্য ভিডিওতে বলা হয়েছিল। পুলিশ মোট ২৮জনকে গ্রেপ্তার করেছে এবং তারা বিচারাধীন আছেন। গ্রেপ্তারকৃতরা মোটেই বিচলিত নয় তাদের কর্তৃক এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জন্য। তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে ওই লোকগুলো যাদের তারা হ্ত্যা করেছে এরা শিশুপাচারকারী ছিল ও শিশু কিডনীর ব্যবসায়ী এরা। বাজফিড.নিউজ থেকে জানাগেছে ফেইচবুকের মালিকানাধীন “ওয়াট্স এপ” সেবার প্রায় ২কোটি ব্যবহারকারী রয়েছে ভারতে। এটি ফেইচবুকের এক বিশাল বাজার। ভারতীয় সমাজ ও সংস্কৃতিতে ফেইচবুকের অনুপ্রবেশ অপ্রতিরোধ্য। ভারতের যুবসমাজই শুধু নয় বয়স্কদের মাঝেও ফেইচবুক ওয়াট্স এপ’র ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে।
বাজফিড.নিউজ লিখেছে ফেইচবুকের সিইও মার্ক জোকারবার্গের মাথার রাজমুকুট ভারতের এই বাজার। ২০১৪সালে ১৯বিলিয়ন ডলার দিয়ে জুকারবার্গ কেবলমাত্র সংবাদ আদান-প্রদানের একটি মাধ্যম হিসেবে এই “এপ”টি দখল করেছিলেন। এখন এটি বহুমাত্রায় নানামুখী সেবা ব্যবসা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই একটি নতুন ধরনের মূল্যের বিনিময়ে সেবাধর্মী একটি ব্যবসার পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। “এপ”টির ব্যবহার শুরুর পর বেশ দেরীতেই এসব হ্ত্যাকাণ্ড শুরু হয়েছে এবং দেখাগেছে হত্যাকাণ্ড ঘটছে ভারতে এবং ভারতীয়দের মাঝে। গত জুনে ওই “ওয়াট্স এপ”এ শিশু পাঁচারকারীদের বিষয়ে একটি গুজব ছড়ানো হয়। এ গুজব শ’খানেক মানুষকে উত্তেজিত করে তোলে এবং ২৯বছর বয়সের একজন মানুষ ও তার বন্ধুকে তারা কোন বিচার ছাড়াই মৃত্যুদণ্ড দেয়। দূর্ভাগ্যের শিকার এ দু’জন মানুষ সেসময় ভারতের পূর্বাঞ্চলের “কর্বি এঙ্গলঙ্গ” জেলার ভেতর দিয়ে যাচ্ছিল। (শেষ দিক থাকবে আগামী সংখ্যায়) হারুনূর রশীদ, সোমবার ১৭ই সেপ্টেম্বর ২০১৮সাল