“নজরুলের সমাধির পাশে হাদিকে সমাধিস্থ করার সিদ্ধান্তের নেপথ্যে
রাজনীতি রয়েছে।“
-সোনালি কাজী ও স্বরূপ কাজী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে দাফন করার সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে কবি নজরুলের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত শনিবার বিকেল ৪টায় হাদীর দাফন সম্পন্ন হয় এবং তাকে প্রয়াত কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে সমাহিত করা হয়েছে।
আনন্দ বাজার পত্রিকার সাথে আলাপকালে নজরুলের পরিবারের সদস্য সোনালি কাজী এবং স্বরূপ কাজীর বক্তব্য হচ্ছে, “যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা অনৈতিক। নিয়ম মতো ওই স্থানে বিশেষ কয়েক জনকে সমাধিস্থ করা হয়। এত জায়গা থাকতে নজরুলের সমাধির পাশে হাদিকে সমাধিস্থ করার সিদ্ধান্তের নেপথ্যে রাজনীতি রয়েছে। সোনালি বলেন, “আমাদের প্রাণের কবি বাংলাদেশে শেষ জীবন কাটিয়েছেন। এত দিন বাংলাদেশে আমরাও (পরিবারের অন্যেরা) ভাল ছিলাম। কিন্তু এখন যা হচ্ছে…।” তাঁর সংযোজন, “ওই কবরস্থানে সকলকে সমাধিস্থ করা হয় না। কিন্তু ছায়ানট ভাঙচুর করা, রবীন্দনাথের বই পুড়িয়ে দেওয়া বাংলাদেশিদের উগ্রবাদীরা হাদিকে সমাধিস্থ করলেন কবির সমাধির পাশে! এটা হল কেন? নজরুল যেখানে সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে গিয়েছেন, জাতের নামে বজ্জাতির কথা বলেছেন, তখন তাঁর সমাধির পাশে এমন এক জনকে সমাধিস্থ করা হল সরকারেরই নির্দেশে!” তাঁর আশঙ্কা, আগামিদিনে হয়তো কবির সমাধিও ওখানে থাকবে না। তিনি বলেন, “পৃথিবীতে ভাল মানুষের জায়গা কি হারিয়ে যাচ্ছে? রবীন্দ্রনাথ-নজরুলকে কি পরবর্তী প্রজন্ম অস্বীকার করবে? আমাদের আর্জি, নজরুলকে যেন অসম্মান করা না-হয়। তবে এই সরকারের(বাংলাদেশের অন্তর্বতী সরকার) দায়বদ্ধতা নেই। আমরা ভীষণ মনোকষ্টে রয়েছি। আমরা মর্মাহত।”[“ভয়েজ অব পিপলস”এর প্রতিনিধি আরশাদ আলীর লিখা থেকে, আনসার আহমদ উল্লাহ কর্তৃক সংগৃহীত]
পশ্চিম বর্ধমানের চুরুলিয়ায় কবি নজরুলের জন্মভিটাতে বসে পরিবারের সদস্য সোনালি কাজী ও স্বরূপ কাজী একে অনৈতিক ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলে আখ্যা দেন। তাঁদের আশঙ্কা, এর ফলে ভবিষ্যতে নজরুলের সমাধির নিরাপত্তা ও সম্মান প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে।
উল্লেখ্য, ১২ ডিসেম্বর ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হন ৩২ বছরের ওসমান হাদি। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর বাংলাদেশজুড়ে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে; হামলার শিকার হয় সরকারি ভবন, সংবাদমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান। শনিবার হাদির স্মরণে রাষ্ট্রীয় শোকও ঘোষণা করা হয়।
নজরুলের সমাধির পাশে হাদির দাফন ঘিরে এখন বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, রাজনীতি ও নিরাপত্তা— তিন দিক থেকেই প্রশ্ন আরও গভীর হচ্ছে।[আনসার আহমদ উল্লাহ কর্তৃক “ভয়েস অব পিপলস” থেকে সংগৃহীত]