নাজমুল সুমন: ‘বাংলাদেশ পাসপোর্ট নবায়ন মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি)’, ‘নো ভিসা রিকোয়ার্ড’, ‘বার্থ সার্টিফিকেট’, ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’, দ্বৈত নাগরিকত্ব আবেদন গ্রহণ, ‘ডকুমেন্ট সত্যায়ন ও সংশোধন’ ইত্যাদি সেবা প্রদানের জন্য বৃটেনের বাংলাদেশ হাইকমিশন বিভিন্ন শহরে এখনো ভ্রাম্যমাণ ‘কনস্যুলেট সার্ভিস’ প্রদান করে আসছে। কিন্তু কার্ডিফে তা অনুপস্থিত!
জনশ্রুতি, প্রায় ৩১বছর আগে ওয়েলসের রাজধানী কার্ডিফ শহরে কমিউনিটি লিডার মরহুম মোহাম্মদ সুরুক মিয়া কার্ডিফের শাহ্জালাল বাংলা স্কুলের তৎকালীন সেক্রেটারি হিসাবে বাংলাদেশ হাইকমিশন ও কমিউনিটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সহযোগীতায় প্রথম এই কনসুলার সেবাদানের ব্যবস্থা করেন। এর পর থেকে অনেকেই বিভিন্ন সময়ে পালাবদলের পরিক্রমায় এই কনসুলার সেবা প্রদানের বিভিন্ন সময়ে আয়োজকের ভুমিকা পালন করেছেন। শুরু থেকেই কার্ডিফের ‘শাহ্ জালাল মসজিদ এন্ড ইসলামিক কালচারাল সেন্টার’এ এই কনসুলার সেবা চালু ছিলো। অনেক বছর চালুর পর মসজিদ কমিটি বা সংশ্লিষ্ট কমিউনিটিকে না জানিয়ে শাহ্জালাল মসজিদ এন্ড ইসলামিক কালচারাল সেন্টার থেকে রিভার সাইড বাংলাদেশ সেন্টারে এই সার্ভিস নিয়ে যাওয়া হয়। এই নিয়ে কমিউনিটিতে দেখা দেয়েছিলো অনেক প্রশ্ন ও হতাশা। সেই সময় হাইকমিশনে এ ব্যাপারে অনেক অভিযোগও করা হয়েছিলো।
উল্লেখ্য যে, সে সময় কমিউনিটির মতভেদের কারনে বেশ কয়েকবার কনসুলার সেবা বন্ধ হয়েছিলো। সময়ের বিবর্তনে সেবা চালুর দাবীতে ২০০১ সালে কার্ডিফ শাহ্ জালাল বাংলা স্কুল, শাহ্ জালাল মসজিদ কমিটি, গ্রেটার সিলেট ডেভোলাপমেন্ট এন্ড ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল সাউথওয়েলস রিজিওন ও বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন সহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে সাংবাদ সম্মেলন করা সহ লন্ডনস্থ হাইকমিশনের তৎকালীন হাইকমিশনারের সাথে ১২ জনের প্রতিনিধিসহ দেখা করে সুনিদিষ্ট প্রস্তাবাবলী তুলে ধরা হয়েছিল। ওই প্রস্তাবনায় তিনটি সেন্টারে বছরে চার মাস অন্তর একেক সেন্টারে পালাক্রমে কনসুলার সার্ভিস চালু করার সুপারিশ ছিল। তৎকালীন মহামহিম হাইকমিশনার মান্যবর গিয়াস উদ্দিন আহমদের আন্তরিক মতামত থাকা সত্তেও কমিউনিটির মতপার্থক্যের কারণে প্রস্তাবনার বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।
শাহ্ জালাল মসজিদ কমিটির চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান কুরেসী নিপু বলেন, এমন চমৎকার একটি প্রস্তাবে কেনো আমরা একমত হতে পারছিনা, আসলেই আমি বুঝিনা। আমার মনে হয় এখনও সময় আছে আমরা ঐক্যমতে আসলে প্রকৃত সেবামূলক একাজটি শুরু করা সম্ভব। সমাজের বৃহত্তর স্বার্থে এ বিষয়ে কম্যুনিটির সকল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দকে ঐক্যমতে এগিয়ে আহ্বান জানান তিনি।
কিছুদিন আগে ফেইসবুকে নিজের টাইমলাইনে রিভারসাইড জালালিয়া মসজিদের সাবেক ট্রেজারার সৈয়দ আশরাফ আলী পুনরায় সার্ভিস চালুর ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানান। আনজুমানে আল ইসলাহ ওয়েলসের সাবেক সেক্রেটারি শেখ মোহাম্মদ আনোয়ার ও ওয়েলস বঙ্গবন্ধু পারিষদের সভাপতি আলহাজ্ব ছালিক মিয়া কনসুলার সার্ভিস চালুর জন্য বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রতি আহ্বান জানান। আব্দুল মানিক নামের কার্ডিফের একজন ‘শেফ’ দূঃখ করে বলেন, নো ভিসার জন্য গতমাসে বার্মিংহামে যাওয়া আসায় আমার অনেক টাকা ও সময় অপচয় হয়েছে। সার্ভিসটি আবার কার্ডিফে চালু হলে আমাদের মত মানুষের খুব উপকার হতো।
গ্রেটার সিলেট কাউন্সিল সাউথ ওয়েলসের চেয়ারপার্সন আসকর আলী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কনসূলার সার্ভিস চালুর জন্য আমরা ওয়েলফেয়ারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ হাইকমিশনে লেখালেখি করে আসছি। আর বিলম্ব না করে সার্ভিস চালুর দাবী জানান তিনি।
কার্ডিফ শাহ্ জালাল বাংলা স্কুলের জেনারেল সেক্রেটারি এবং ইউকে গ্রেটার সিলেট কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় জয়েন্ট সেক্রেটারি মকিস মনসুর আহমদ বলেন এজন্য আমাদের কমিউনিটির পক্ষ থেকে ঐক্যদ্ধভাবে লন্ডনে ও বার্মিংহামে বাংলাদেশ হাইকমিশনে ক্যাম্পেইন জোরদার করতে হবে।
প্রাসঙ্গিক আলাপ করতে গেলে এই প্রতিবেদকের সাথে ফোনে আলাপকালে কমিউনিটির নেতৃস্থানীয় কয়েকজন দুঃখ করে বলেন- সেদিন কমিউনিটি নেতারা সবাই এক পথে হাটলে আজ ‘কনসুলার সার্ভিস’ নিয়ে এতো মাতমের প্রয়োজন হতো না।
কমিউনিটির চাহিদা থাকা সত্তেও ‘কনসুলার সার্ভিস’টি আবার কেন চালু হচ্ছে না এমন খোঁজ নিতে গিয়ে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে ফের ওই মতপার্থক্যই কারণ। আবার অনেকেই মনে করেন, হাইকমিশনের সেবা দানের সদ্দিচ্ছা থাকলে যে কোন একটি স্থানে তা চালু করা তেমন কোন তাজমহল নির্মাণের মত কঠিন বিষয় নয়।
কমিউনিটি ছাড়াও বাংলাদেশে ভ্রমণেচ্ছু কার্ডিফের সকল মানুষের আশা কনসুলার সার্ভিস অচীরেই চালুর ব্যাপারে হাইকমিশন যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করবেন।