1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
কিশোরী বিয়ে- আমাদের অবস্থান ‌ও করনীয় - মুক্তকথা
বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৬ পূর্বাহ্ন

কিশোরী বিয়ে- আমাদের অবস্থান ‌ও করনীয়

সংবাদদাতা
  • প্রকাশকাল : শনিবার, ২৪ মার্চ, ২০১৮
  • ১০৭৫ পড়া হয়েছে

হারুনূর রশীদ।।

দুনিয়ার বহু দেশেই কিশোরী বিয়ের চল রয়েছে। তার মধ্যে নাইজারের অবস্থান শীর্ষে বলে জানা যায়। আর হিসেবে সবচেয়ে নিচে রয়েছে জাম্বিয়া। যে সব দেশ কিশোরী বিয়ের বিষয়ে গণনায় আসে সেসব দেশের পরিমান ২০টি। আন্তর্জাতিক নারী গবেষণা কেন্দ্র ও ইউনিসেফের জরিপে দেশের পরিমাণ ১৬টি পাওয়া যায়। কিশোরী বিয়ে নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৩ নাম্বারে আর ভারতের অবস্থান শীর্ষে। এমন হিসেব পাওয়া যায় বিবিসি’র প্রতিবেদনে। ভারত ও কিশোরী বিয়ে নিয়ে বিবিসি বিশাল গবেষণা ধর্মী খবর প্রকাশ করেছে।

কিশোরী বিয়ের সংস্কৃতি ঐতিহাসিকভাবে, বিশ্বব্যাপী বহু আদিকাল থেকেই চলে আসছে। এটি একটি প্রচলিত প্রথা। তবে কোন ধরনের সন্দেহ না রেখেই বলা যায় যে এ প্রথার জন্ম হয়েছিল নারী মানুষদের শুধু ব্যবহারের সামগ্রী মনে করার সুবিধাবাদী চিন্তা থেকেই। ধ্যানের গবেষণা আর পুস্তকের গবেষণা কিংবা অতীত ইতিহাস ঘাটাঘাটি, যা কিছুই খোঁজাখুঁজি করেন না কেনো এই কিশোরী বিয়ের বিষয়ে কোথায়ও মানুষের কোন কল্যাণী চিন্তার কোন রেশই পাওয়া যাবেনা। পাওয়া যাবে নারীকে একমাত্র কামভোগের সামগ্রী হিসেবে ব্যবহারের আদিম পাশবিকতার সুখানুভুতি।
প্রাচীন যুগে যত যুদ্ধ সংঘর্ষ হয়েছে, যুদ্ধ শেষে সুন্দরী নারীদের রাজা-বাদশাহ-সম্রাটদের খাশমহলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে আর কম সুন্দরীদের হেঁসেলে স্থান দেয়া হয়েছে। হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান, মুসলমানসহ আরো যেসব ধর্মাবলম্বী রয়েছে সকলেরই যুদ্ধের ইতিহাসে পরাজিত অংশের যুবতী নারীদের ভোগের পণ্য হিসেবে পদমর্যাদায় দামীদের মনোরঞ্জনের জন্য নাচঘরে নেয়া হয়েছে। সেই নিয়মধারাকে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে লালন করা হয়েছে এই মধ্যযুগ পর্যন্ত। 
ওই ধারায়ই প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় সমাজে মেয়েদের সাধারণত বয়ঃসন্ধির আগেই বিয়ে দেয়া হত। ওই একই চেতনা থেকে প্রাচীন গ্রীসে কম বয়সে বিয়ে  এবং মাতৃত্বকে উৎসাহিত করা হত। এমনকি ছেলেদেরও তাদের কৈশোরেই বিয়ের জন্য উৎসাহ দেয়া হত।
বেশীদিন আগে নয়,পৃথিবীতে কোন এক সময় ছিল যখন বাল্যবিবাহ ও কৈশোরে গর্ভধারণ খুবই সাধারণ ঘটনা ছিল। 
ইতিহাস খ্যাত প্রাচীন রোমে মেয়েদের বিয়ের বয়স ছিল ১২বছরের উপর এবং ছেলেদের ১৪ বছরের উপর। অর্থাৎ ১২ ও ১৪ বছর পার হয়ে গেলেই তাদের বিয়ে দেয়া যেতো। প্রায় অর্ধ সহস্রাব্দ, আদিম এ প্রথায়ই দুনিয়ার মানব সমাজ চলেছে। মধ্যযুগে এসে ইংলিশ আইন অনুসারে ১৬ বছরের পূর্ব পর্যন্ত বিয়ে সর্বজন স্বীকৃত হয়েছিল।

প্রাচীন ভোগধর্মী এ প্রথার কারণে মেয়েরাই দুনিয়াতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 
এখনও যেসব দেশে কিশোরী বিবাহ চালু রয়েছে সেখানে বিশেষতঃ মেয়েরাই এই বিবাহের শিকার বেশি। এখন আর কে না জানে যে এই বিবাহের কারণগুলোর মধ্যে প্রধানত – ঘুঁণেধরা পুরনো ভোগবাদি সামাজিক প্রথা, আর ওই একই মন ও মানসিকতা থেকে প্রবর্তিত বাল্যবিবাহ সমর্থনকারী আইন, ধর্মীয় ও সামাজিক চাপ আর অঞ্চলভিত্তিক রীতি হলো প্রধান। এর সাথে যোগ হয়েছে আধুনিক সময়ে এসে দরিদ্রতা, যৌতুক এবং নিরক্ষরতা। অবিবাহিত থাকার শঙ্কা এবং মেয়েদের উপার্জনে অক্ষম ভাবাও একটি কারণ বলে অনেক গবেষকের মত রয়েছে।
বাল্যবিবাহের খুবই প্রাচীন এই প্রচলনের কারণ খুঁজতে গেলে দেখা যাবে উপরে বলে আসা চরম ভোগবাদী মানসিকতাই প্রধান। এর পরে রয়েছে দারিদ্রতা, নিরাপত্তাহীনতা, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণসমূহ। এখনও আফ্রিকার কিছু অংশ, দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পশ্চিম এশিয়া, লাতিন আমেরিকা ও ওশেনিয়া প্রভৃতি দেশে বাল্যবিবাহ বহুল প্রচলিত। নাইজার, চাদ, মালি, ভারত, বাংলাদেশ, গিনি ও মধ্য আফ্রিকার কিছু দেশে বাল্যবিবাহের হার সবচাইতে বেশি, যা প্রায় ৬০% এর উপর। ২০০৩-২০০৯ জরিপ অনুযায়ী, নাইজার, চাদ, বাংলাদেশ, মালি এবং ইথিওপিয়াতে ১৫ বছরের নিচে কিশোরীদের বাল্যবিবাহের হার ২০% এর উপর।

বিবিসি’র জরিপ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, কিশোরী বিবাহের সংখ্যার হারে সকলের উপরে রয়েছে ভারত। তার পরেই রয়েছে বাংলাদেশের অবস্থান। বুরকিনা ফাসো, মালি, দক্ষিন সুদান, গিনি, মোজাম্বিক ও সোমালিয়া এ ৬টি দেশ থেকেও বাংলাদেশে কিশোরী বিয়ের হার অনেক উপরে। ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত কিশোরীদের বিয়ের পিড়িতে বসতে হয় এমন সংখ্যা বাংলাদেশে অনেক অনেক বেশী। শুধুমাত্র নাইজার, চাদ ও সিএআর বাংলাদেশের উপরে। সাব-সাহারান দেশ নাইজার-এ কিশোরী বিবাহের শতকরা হার ৭৬%। গৃহবিবাদ(ডমেস্টিক ভায়োলেন্স), স্বাস্থ্যগত রোগব্যাধির জন্ম, অসময়ে গর্ভধারণ এসব কিশোরী বধুর মনোজগতে খুবই বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে বাধ্য। বিবিসি’র ওই জরিপানুযায়ী সারা বিশ্বে প্রতি বছর ১কোটি ২০লাখ বালিকার বিয়ে হয়ে যায় ১৮বছর বয়স হবার আগেই।
বহু দেশ ইদানিং কিশোরী বিয়ের বয়স ১৮তে ঠিক করেছে কিন্তু বহু ক্ষেত্রে মা-বাবার ইচ্ছের উপর ১৬ কিংবা ১৭তেও বিয়ে হয়ে যায় এখনও। এসব সমস্যাগুলোর দিকে আমাদের সকলকে সুবিধে প্রাপ্তির চেয়ে নিজের সন্তানের ভাল ভবিষ্যতের কথা মাথায় রাখতে হবে। সন্তান বিক্রির মত পশুসুলভ চিন্তা থেকে সরে আসতে হবে। পাশাপাশি প্রচলিত আইনকে মানব দরদী মন থেকে কাজে লাগাতে বুদ্ধিজীবী সমাজকে অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে।
প্রচার অভিযানকারীদের মতে দুনিয়াব্যাপী কিশোরী বিয়ে কমিয়ে আনতে হলে বা বন্ধ করতে হলে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রধানদের সম্পৃক্ত করার কৌশল নিতে হবে। সমাজে কর্তৃত্ব আছে এসব ধর্মীয়নেতাদের একাজে আনত পারলে সমস্যার সমাধান সহজ ও দ্রুত হবে।
ভারতের ‘ভিকল্প সন্সথান’(Vikalp Sansthan) নামের একটি সেবা সংস্থা, বিয়ের চিত্র ধারনকারী ও সাজ-সজ্জ্বাকারীদের টেলিফোনে প্রচার করেন যে, কোন বাল্যবিয়েতে তাদের সম্পৃক্ততা আইনের চোখে দূষণীয়। তারা যেনো এ বিষয়ে জ্ঞাত থাকেন।
পুরানো হিসেব আর মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির দিক থেকে শিশু বিবাহ কমছে কিন্তু মূলতঃ জনসংখ্যা বৃদ্ধির দিকে নজর দিয়ে হিসেব করলে কিশোরীবিবাহের সংখ্যা বাড়ছে বৈ কমছে না। অবশ্য এখন আর সেদিন নেই। মানুষ অনেক এগিয়ে গেছে। ইউনিসেফের হিসেবে দক্ষিন এশিয়ায় বাল্যবিবাহের হার অনেকাংশেই কমে আসছে। অবশ্যই এটি একটি ভাল লক্ষন। বিবিসি ও ইউনিসেফের জরিপ অবলম্বনে।
২৪শে মার্চ শনিবার, ২০১৮সাল

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT