মুক্তকথা সংবাদকক্ষ।। উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগে শুরু হয়েছে কুম্ভমেলা। প্রয়াগের নতুন নাম হয়েছে প্রয়াগরাজ। এর আগে প্রয়াগের নাম ছিল এলাহাবাদ। গত ১৫ই জানুয়ারী থেকে শুরু হয়ে ৩১শে মার্চ পর্যন্ত চলবে এই মেলা। অন্যভাবে বললে পৌষ পূর্ণিমায় শুরু হয়ে মাঘীপূর্ণীমায় শেষ হয় এই মেলা। এটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ মহাপবিত্র ধর্মীয় স্নানমেলা বা তীর্থস্নান। গঙ্গা, যমুনা ও বৈদিক নদী স্বরস্বতির সঙ্গমে স্নান বা গোসলের মধ্যদিয়ে এই মেলার শুরু হয়।
“কুম্ভ” ধ্বনিটি সংস্কৃত ভাষার একটি শব্দ। “কুম্ভ” বলতে মাটির তৈরী পাত্র। অনেকটা কলসী আকৃতির। হিন্দু, জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীগন মাতৃগর্ভ, জরায়ূ বা গর্ভাশয়কে “কুম্ভ” আকৃতির বলে মনে করেন। আদি মানুষের ধারণা মাতৃগর্ভাশয় অনেকটা কুম্ভপাত্রের নমুনায় গড়া।
আবার বৈদিক গ্রন্থে আরো আছে যে আদিতে, সাগর মৈতুনকরে পাওয়া অমৃত, যা খেলে কেউ কোনদিন মরে না, সেই ‘অমৃত’ কে খাবে? দেবতা না অপদেবতা। এ নিয়ে উভয়ের লড়াইয়ে অমৃতসুধা রক্ষিত পাত্র থেকে ৪ফুটা নিচে পড়ে যায়। কুম্ভমেলা সেই ৪টি স্থানেই হয়ে থাকে। এবং যে পাত্রে অমৃত রাখা ছিল সে পাত্রকে “কুম্ভ” বলে ইংগিত করা হয়।
সেই পাত্র দিয়ে গঙ্গা, যমুনা ও স্বরস্বতী নদীর মিলনস্থান থেকে জল তুলে মাথায় ঢেলে গোসল করাই হলো “কুম্ভ” মেলার মূল কথা। মেলার মূল উদ্দেশ্য স্নান বা গোসলের মধ্য দিয়ে জীবনের সকল অপরাধবোধ থেকে নিজেকে মুক্তকরা। অবশ্য স্নানের জন্য ওই কুম্ভের ব্যবহার কোন কালেই তেমন দেখা যায়নি। দিগম্বর শরীরে পানিতে ডুব দিয়েই স্নানকাজ সারা হয়।
প্রতি ১২ বছরে দু’বার করে হয় এই মেলা। ভারতের বৃহত্তম মেলা হিসেবে দেখা হয় এই ঐতিহাসিক জনসমাগমটিকে। কোটি কোটি মানুষ গঙ্গার সঙ্গমে এসে ডুব দিয়ে ‘পুণ্য’ অর্জন করেন। সাধারণ কুম্ভমেলা প্রতি চার বছর অন্তর আয়োজিত হয়। প্রতি ছয় বছর অন্তর হরিদ্বার ও প্রয়াগে (প্রয়াগরাজ) অর্ধকুম্ভ আয়োজিত হয়। প্রতি বারো বছর অন্তর প্রয়াগ, হরিদ্বার, উজ্জ্বয়িনী ও নাসিকে পূর্ণকুম্ভ আয়োজিত হয়। বারোটি পূর্ণকুম্ভ অর্থাৎ প্রতি ১৪৪ বছর অন্তর প্রয়াগে আয়োজিত হয় মহাকুম্ভ।
সনাতনী ধর্মাবলম্বীগন বিশ্বাস করেন এবং জোতির্বিজ্ঞান মতে সূর্য, চন্দ্র ও জুপিটার যখন তাদের পূর্ণ অবস্থানে আসে সে সময়টিই এক মহাপবিত্র সময়। বিশেষ করে গ্রহ বৃহস্পতি তার জাগা থেকে সূর্যকে ঘুরে আসতে ১২বছর সময় নেয়। তাই প্রতি ১২বছরে বৃহস্পতি ঘুরে যখন তার জায়গায় অবস্থান নেয় তখনই মহাকুম্ভ হয়।
এই বছর মেলা শুরুর কয়েকদিনের মধ্যেই দেশের বহু বিখ্যাত মুখ, রাজনীতিবিদ ও মন্ত্রীরা এসে ডুব দিয়ে গেলেন পুণ্যকুম্ভে। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি, সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব হলেন এই বছর পুণ্যকুম্ভে ডুব দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ মুখগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য। গঙ্গা, যমুনা এবং পুরাণে যে নদীর উল্লেখ রয়েছে বিশেষভাবে, সেই সরস্বতী, এই তিনের সঙ্গমেই হল প্রয়াগরাজ।
মঙ্গলবার কুম্ভমেলা প্রাঙ্গনেই যোগী আদিত্যনাথ মন্ত্রিসভার বৈঠক করেন। বৈঠক সারার পর মন্তরিসভার সমস্ত সদস্যদের নিয়ে ডুব দেন পুণ্যকুম্ভে। উপমুখ্যমন্ত্রী কেশবপ্রসাদ মৌর্য বলেন, মন্ত্রীরা ছাড়াও পুণ্যস্নান করেন অনেক ‘সাধু’ও। তথ্যসূত্র: মহাকুম্ভমেলা ২০০১ইং, ইম্পিরিয়েল গেজেটিয়ার অব ইণ্ডিয়া, ডেইলি হান্ট ও স্টিমিট.কম