হারুনূর রশীদ:
সোমবার ২৫এপ্রিল ৩টা ৪৫মি:
হীরা, মুক্তা, পান্না নিয়ে মানুষের গল্পের যেমন শেষ নেই তেমনি মনি-মুক্তা সকলের হাত-কাছের জিনিষ নয়। সাধারণভাবে সকলেই আমরা জানি যে একসময় ছিল যখন এসব অমূল্য পাথর কেবলমাত্র রাজ-রাজড়াদের বিষয় ছিল। সাধারণ মানুষের ব্যবহারের কোন কুদরতই ছিল না। আধুনিক যুগে অবশ্য এসবের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বৃহত অর্থে এখন সেই রাজাও নেই বাদশাহও নেই। যারা আছেন তারা সাধারণ মানুষের সমাজ থেকে অনেক যোজনপথ দূরের এক সীমিত জনসমাজের মানুষ। সারা দুনিয়ায় হাতেগুনা কিছু রাজপরিবার আছে যাদের আধুনিক জীবন যাত্রার বিষয়ে আমরা সাধারণ মানুষ তেমন কিছুই জানার সুযোগ পাই না। তাই মণিমুক্তার নামই ভুলতে বসেছি আমরা। তবে একজন রাণী আছেন যিনি এই মণিমুক্তার কারণে মাঝে মধ্যে যোগাযোগ মাধ্যমে আলোড়ন তুলেন। আর তিনি হলেন বৃটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
আর সেই মহামূল্যবান হীরা পাথরটি হলো, যাকে এক নামে দুনিয়ার তাবত মানুষ চেনে, সে হল “কোহিনূর”। অনেক প্রাচীন আর ঐতিহাসিক এই হীরা খন্ড নিয়ে ইদানিং কিছু আলোচনা শুরু হয়েছে।কোহিনূর, সন্ধি বিচ্ছেদ করে লিখতে গেলে লিখতে হয় এভাবে- “কোহ-ই-নূর”। “কোহ” অর্থাত পাহাড় আর “নূর” মানে আলো। তা’হলে শব্দার্থ দাড়ায় “আলোর পাহাড়”। এই কোহিনূরকে নিয়ে গল্পের শেষ নেই। প্রায় প্রতি চার-পাঁচ বছর পরই এই হীরাটি দুনিয়ার তাবত যোগাযোগ মাধ্যমে সংবাদের ঝড় তোলে। তেমনি এক গুঞ্জন শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালে যা এখনও থেমে থেমে গুঞ্জরিত হচ্ছে দুনিয়ার শহরে-বন্দরে।
ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায় মহামূল্যবান এই হীরা পাথরটি প্রাচীন ভারতের কাকাতিয়া সাম্রাজ্যের, বর্তমান অন্ধ্রপ্রদেশ, গান্তুর অঞ্চলের(বর্তমানে জেলা)কল্লুর খনিতে পাওয়া গিয়েছিল। “কাকাতিয়া গুষ্ঠী” ছিল এই কোহিনূর হীরার মালিক। পানির মত উজ্জ্বল সাদা রংয়ের উক্ত হীরার ওজন ১০৫.৬০২ক্যারেট আবার অনেকে মনে করেন এর ওজন ১০৮ক্যারেট।
ঐ কাকাতিয়াদের হাত থেকে কি করে কোন শতাব্দিতে তা পারস্য সম্রাট বা আফগান
রাজাদের কাছে গেল, ইতিহাসে তার কোন হদিস নেই। এ বিষয়ে আমার দেখা ইতিহাস খুবই নীরব। মধ্যযুগের প্রতাপশালী নরপতি মহারাজা রঞ্জিত সিং ইতিহাসের এক শুভলগ্নে এই হীরাটি পেয়েছিলেন একজন আফগান রাজা সুজা শাহ দুররানির কাছ থেকে। যিনি হিন্দুস্থানে প্রার্থনা ও আশ্রয়ের একটি নিরাপদ স্থান খুঁজছিলেন আর মহাপরাক্রম রঞ্জিত সিং তাকে নিরাপদ স্থান দানের বদৌলতে এই হীরাটি প্রাপ্ত হন।
এই কোহিনূর আফগান রাজাদের বংশানুক্রমিক উত্তরাধিকার হিসাবে তাদের কাছেই ছিল বলে কিছু ইতিহাস বলে। কিভাবে বা কিকারণে তা মোগলদের হাত এড়িয়ে গেল এ নিয়েও ইতিহাস নীরব।
আবার ইংরেজদের হাতে যাবার বিষয়ে দু’টি কাহিনী আধুনিক ইতিহাস নামক পুস্তকে পাওয়া যায়। এক কাহিনীতে জানা যায় যে ইংরেজরা বলপূর্বক এই মহামূল্যবান হীরক খন্ডটি ভারত থেকে ইংল্যান্ডে নিয়ে যায়। আর এই অপকর্মের নায়ক ছিলেন ভারত ইতিহাসের ইংরেজ নায়ক লর্ড ডালহৌসি।
একই খবরের অপর পৃষ্ঠায় পাওয়া যায় প্রাচীন পাঞ্জাবের মহারাজা রঞ্জিত সিং এই মহামূল্যবান হীরক খন্ডটি মহারাণী ভিক্টোরিয়াকে উপঢৌকন হিসাবে দান করেন ১৮৫১ইং সনে।
অন্যত্র আবার বলা আছে, শিখ-ইংরাজ যুদ্ধের পর পাঞ্জাবের শিখ সাম্রাজ্য ইংরাজদের দখলে চলে এলে, ১৮৫০ সালে মহারাণী ভিক্টোরিয়াকে এই মহামূল্যবান হীরাটি উপহার দেয়া হয়। ইতিহাসের অন্যপাতায় আরো লিপিবদ্ধ আছে এই বলে যে ১৮৩৯ইং সনে মহারাজা রঞ্জিত সিং মৃত্যু সজ্জ্বায় থেকে পুরির জগন্নাথ মন্দিরে কোহিনূর দান করে যান।
কাহিনী আরো বলে, এই হীরা ছিল পারস্য সম্রাটদের কাছেও যা আগেও বলেছি। কোহিনূর হীরার মূল মালিক কে বা কারা ছিলেন তা আজও অজ্ঞাত আর রহস্যময়।
এতো গেল কোহিনূরের মালিকানার কিছুটা সমর্থিত আর খন্ডচিত্র।(আগামী সংখ্যায় শেষ হবে)।