আবু মকসুদ
“চন্দনকৃষ্ণ পাল এবং সাহসের গল্প ১৯৮৪ সালের ঘটনা। বিশ্ববেহায়া ক্ষমতায় সমাসীন। আমার বড়ভাই আবদুল হামিদ মাহবুব বেহায়ার অবৈধ ক্ষমতা নিয়ে একটা ছড়া লিখেছেন, বর্তমান জমানার জন্য এ ছড়া দুধভাত কিন্তু তখনকার সময়ের জন্য এটমের চেয়ে শক্তিশালী… ছড়াটা এরকম- হেই_জনতা যে নেতা কয় ঠেরো দেখো হঠাও তারে হঠাও রে এই ছড়া মৌলভীবাজারের তখনকার সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘মুক্তকথা’য় ছাপা হয়েছিল। ‘বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড়’ এই উক্তির প্রমাণ সাথে সাথে মিলে গেল। বিশ্ববেহায়া এই ছড়া পড়ার কথা না, কোথাকার কোন মফস্বলে একছড়া ছাপা হয়েছে এটা সে জানবে কিভাবে! তবু এই ছড়া নিয়ে হুলুস্থুল শুরু হলো। মৌলভীবাজারের তখনকার ডিসি মনে করলেন এই ছড়ার জন্য তার চাকরি চলে যেতে পারে তাই নিজেকে বাঁচাতে তিনি ক্ষমতা দেখাতে শুরু করলেন। পত্রিকার সম্পাদক এবং ছড়াকার কে অফিসে ডেকে নিয়ে ধমক এবং মামলার ভয় দেখালেন। পত্রিকা বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিলেন। ছড়াকার, সম্পাদক (বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুনুর রশীদ) দুজনই ত্যাঁদড় ছিলেন সহজে ভয়ের পাত্র নন কিন্তু পত্রিকা বন্ধের হুমকিতে কিছুটা ঘাবড়ে গেলেন। অবৈধ বেহায়ার অবৈধ কর্মকর্তা চাইলে পত্রিকা বন্ধ করতে পারতেন তাই নিরুপায় সম্পাদক ছড়া প্রত্যাহার করে নিতে রাজি হলেন। পত্রিকায় ছাপা হয়ে গেছে কিভাবে প্রত্যাহার করা যায় ডিসি আদেশ দিলেন উপরে কালো কালি চেপে দিতে হবে। স্বৈরাচারবিরোধী ছড়া কালো কালি দিয়ে ঢেকে দেয়া হলো। ছড়া প্রত্যাহার এবং কালো কালি দিয়ে ঢেকে দেয়ায় ছড়াকার মনোক্ষুন্ন। লেখকের স্বাধীনতার উপর আঘাত ছড়াকারের মনে কষ্ট বাড়িয়ে দিল। চন্দনকৃষ্ণ পাল সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ তরুণ তিনি ছড়াকারের সম্মান রক্ষায় এগিয়ে এলেন। তাঁর সম্পাদিত ছড়া পত্রে তিনি ছড়াটি সসম্মানে প্রতিস্থাপন করলেন। প্রশাসনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে লেখকের স্বাধীনতার সম্মান রাখলেন। স্বৈরাচারের ঘোর অরাজকতার সময় চন্দনকৃষ্ণ পাল যে সাহস দেখালেন তা এখনো সাহসের নজির হয়ে আছে। আজ এই সাহসী মানুষটির জন্মদিন, মেরুদণ্ডহীন এই সময়ে তাঁর সাহসকে আমি কুর্ণিশ জানাই। শুভ জন্মদিন প্রিয় দাদা…”। |